ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০১৬-১৭ বর্ষ থেকে নিয়মিত বিদেশী শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও প্রশাসনের অবহেলায় এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের আগমন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একজন বিদেশী শিক্ষার্থীকেও দেখা যায় নি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেশন জট, বাংলায় পাঠদান, প্রশাসনের উদাসীনতা এবং দপ্তর সমূহতে অসদাচরণ সহ নানা জটিলতার অভিযোগ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ফলে একসময় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু থাকলেও এখন অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় খরচের পরিমাণ কম হওয়ায় ইবিতে অধিকাংশই ভারত, নেপাল, গাম্বিয়া, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া থেকে আসে। তবে ভারত ও নেপালের শিক্ষার্থীরা আসার কয়েকদিনের মধ্যে বাংলা ভাষা শিখতে পারলেও গাম্বিয়া, সোমালিয়া এবং নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য সময় লাগে অনেক। এছাড়াও বিভাগের বেশির ভাগ শিক্ষকই বাংলায় ক্লাস নেন। শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধের পরও তারা ইংরেজিতে লেকচার দেননা এবং পরবর্তীতেও আলাদা ভাবে তাদের বুঝিয়ে দেননা। ফলে সোমালিয়া, নাইজেরিয়া থেকে বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই ডিগ্রী সম্পূর্ণ না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে।
কম্পিউটার সাইন্স ও ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক করতে নেপাল থেকে এসেছিলেন সাজিদ রাইন নামে এক শিক্ষার্থী। চেয়েছিলেন স্নাতক শেষ করে দেশে ফিরে গিয়ে চাকরি করার। কিন্তু ভর্তি হওয়ার চার বছর অতিক্রম করলেও তিনি এখনো রয়েছেন তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে। সেশনজটের কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কখন স্নাতক শেষ করবেন।
তবে নেপালি শিক্ষার্থী সাজিদের দুশ্চিন্তা শুধু সেশনজট হলেও গাম্বিয়া থেকে আসা আমাত সেকা নামে এক শিক্ষার্থী স্নাতকের আগেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বিভাগের শিক্ষকদের অসহযোগিতার কারণে। এছাড়াও আবাসিক সমস্যা, ক্লাসে বাংলা ভাষায় পাঠদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তরগুলোতে অসদাচরণসহ প্রশাসনের উদাসীনতাগুলো যেনো প্রকাশ করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে মশকরায় লিপ্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় খরচের পরিমাণ কম হওয়ায় ইবিতে অধিকাংশই ভারত, নেপাল, গাম্বিয়া, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া থেকে আসে। তবে ভারত ও নেপালের শিক্ষার্থীরা আসার কয়েকদিনের মধ্যে বাংলা ভাষা শিখতে পারলেও গাম্বিয়া, সোমালিয়া এবং নাইজেরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য সময় লাগে অনেক। এছাড়াও বিভাগের বেশির ভাগ শিক্ষকই বাংলায় ক্লাস নেন। শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধের পরও তারা ইংরেজিতে লেকচার দেননা এবং পরবর্তীতেও আলাদা ভাবে তাদের বুঝিয়ে দেননা। ফলে সোমালিয়া, নাইজেরিয়া থেকে বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই ডিগ্রী সম্পূর্ণ না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমির শাখার এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার এস. এম সাদাত হোসেন সূত্রে জানা যায়, ইবিতে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬-১৭ শিক্ষা বর্ষ থেকে। সে বছর এম.ফিলে ২ জন, স্নাতকোত্তরে ৪ জন এবং স্নাতকে ১ জন ভর্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর আগমন শুরু হয়। কিন্তু এর মধ্যে শুধু ৩ জন শিক্ষার্থী তাদের স্নাতকোত্তর শেষ করেন। বাকি শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জনের আগেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে ১৯ জন এবং স্নাতকে ৩ জন ভর্তি হলেও স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৫ জন আর স্নাতক শেষ করে ১ জন। এর পর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সর্বপ্রথম পি.এইচ.ডি স্টুডেন্টস সহ ১৭ জন শিক্ষার্থী, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১৪ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। করোনা পরবর্তী তার ঠিক পরের শিক্ষাবর্ষ ২০২০-২১ এ বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তিতে ধস নামে। স্নাতকে মাত্র ১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় সেবছর। সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫ জন শিক্ষার্থী সহ এযাবত মোট ৬৬ জন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পন্ন করেছে। তবে সেশন জটিলতায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশী ভর্তি করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
তবে বিভাগগুলোর সেশনজটের কারণ হিসেবে শিক্ষক রাজনীতিকে দায়ী করেছেন সাজিদ রাইন। তিনি বলেন, এখানকার বেশীরভাগ শিক্ষকই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। এক একটা সেমিস্টারের রেজাল্ট দিতে সময় লাগায় দুই মাসের অধিক। যার ফলে আমরা সেশনজটে ভুগি। আমরা বিদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে কোনো শিক্ষকের নিকট থেকে আলাদা সৌহার্দ্য পাইনা। বিদেশ থেকে এসে আমাদের পক্ষে ৬ বছরে স্নাতক সম্পূর্ণ করা অভিশাপের মতোই। ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ পেলে আমিও এখান থেকে চলে যাবো সেই সাথে আমাদের সকল কমিউনিটিকে অনুরোধ করবো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসতে।
ফার্মেসি বিভাগের নেপালের আরেক শিক্ষার্থী ইরফান বলেন, আমরা পরীক্ষার প্রবেশপত্র স্বাক্ষর করাতে গেলে অফিসের স্টাফ আমাদের কোনো প্রাধান্য না দিয়ে তাদের কাজে ব্যস্ততা দেখায়। আমাদের ওয়াইফাই নষ্ট, ডাটা কিনে পরিবারে ফোন করতে হয়, বিভিন্ন সময় অনলাইন ক্লাস করতে হয় যার দামও অনেক। পানির ফিল্টার দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে থাকে। বারবার অভিযোগ করে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা স্যারের কাছে যাই। বাবা মা আমাদের এখানে পড়তে পাঠিয়েছে কতো স্বপ্ন নিয়ে তবে আমাদের কাছে এই পরিবেশ গুলো দুস্বপ্নের মতো। আমাদেরও যদি এখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয় তাহলে এর থেকে খারাপ হয়তো কিছু হবেনা।
বিদেশী শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা জামালের সাথে। তিনি বলেন, ভর্তি কার্যক্রমে সব জায়গায় কিন্তু নির্দিষ্ট প্রসিডিউর আছে সেইটা মেইনটেইন হচ্ছে কিনা সেটা আমি জানি না। তবে যখন আমরা তাদের ভেরিফিকেশনের কাগজ চাচ্ছি বা অন্যান্য কাগজগুলো চাচ্ছি তখন পরবর্তীতে স্টুডেন্ট টি আর আবেদন করছে না। তবে আবাসিক সমস্যা, ক্লাসে শিক্ষকদের অসহযোগিতা, সেশনজট, শিক্ষক সংকট মূলত এইসব কারণেই বিদেশী শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না।
এছাড়াও বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের যে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স আছে ওখানে কোনো স্টাফ নাই সেখানে একটি ছেলে ডে লেবারে কাজ করতো নাম মনজুরুল এই প্রশাসন আসার পর তার বেতনটিও বন্ধ হয়ে গেলো। এছাড়াও একাডেমিক দপ্তরের এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার সাদাত হোসেন একজন আছেন তারও একাডেমিক দপ্তরে অনেক কাজ থাকায় এখানে কাজ করতে পারেন না।
তিনি বলেন, ছেলেদের জন্য হলের ব্যবস্থা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নাই। ফলে তাকে দেশীয় শিক্ষার্থীদের সাথে রুম শেয়ার করে থাকা লাগতেসে। হলেও দেখা গেলো কোনো সুযোগ সুবিধা নাই। পানির ফিল্টার নষ্ট হয়ে থাকে, নেটের সুযোগ সুবিধা থাকে না। এত্তগুলো সমস্যার মধ্যে কি এই স্টুডেন্টরা অন্যদেরকে সুপারিশ করবে?
এছাড়াও আমাদের বিভাগগুলোতে বাংলায় পাঠদান হয়।আমি অনেকবার বলেছি এখানে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী আছে আপনারা ইংলিশে ক্লাস নেন। আমি একটি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানকে যখন এই কথা বলি তখন সে বলে কি আমি একজনের জন্যতো উনপঞ্চাশ স্টুডেন্টের ক্ষতি করতে পারিনা। এখন নেপালীরা আসলে কিছুদিন পর বাংলা ভাষাটা শিখে যায় কিন্তু অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা এসে আর কি করবে ওরাও এসে আবার চলে যায়।
অধ্যাপক মোস্তফা জামাল আরও বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের ৮০% পর্যন্ত স্কলারশিপ দেয় সেখানে আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো উল্টো তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তাহলে কি কারণে আসবে শিক্ষার্থীরা। তাও আসতো যদি আমাদের একাডেমিক সমস্যাগুলো না থাকতো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীগুলো মূলত কৃষিতে এবং মেডিক্যালগুলোতে আসে। কিছু জায়গায় ইঞ্জিনিয়ারিং এও আসে। ঢাবিতেও এখন একেবারে নেই বললেই চলে। তবে মূল পরিস্থিতিটা যে কি আমাদের ডিরেক্টর আছে তিনি ভালো জানেন। আমি মনে করি স্কলারশিপ না পাওয়া একটা বড় কারণ। অন্য দেশে পার্টটাইম কাজের সুযোগ আছে যা এই দেশে নেই। ভাষাগত একটা সমস্যা আছে। সেইক্ষেত্রে টিচাররা যদি আলাদা একটা নজর দেয় তাদের প্রতি তবে এইটা থাকতোনা। যেসব বিভাগে জট আছে বিদেশীদের কথা চিন্তা করে হলেও বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, যার এই সেলের দায়িত্ব তিনি আমাকে এই সীমাবদ্ধতাগুলো জানাননা। আজকেও তার সাথে কথা হয়েছে ফরেনদের সমস্যাগুলো আমাকে জানাতে হবে তো। সকল তত্ত্বাবধায়ন ভিসির পক্ষে করা সম্ভব হয়না। যে যেটার দায়িত্বে আছেন তাকে সব কাজ সামলে সেই দিকটাও দেখতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh