ছবিঃ সংগৃহীত
চলতি বছরের কয়েক মাস আমাদের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে খরা গেছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, পাহাড়ে অস্থিরতা এবং বন্যার প্রভাবে প্রায় পর্যটকশূন্য ছিল ভ্রমণপিয়াসিদের কাছে। যার ভিতরে অন্তর্ভুক্ত ছিল জনপ্রিয় কক্সবাজার, সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা সমূহ। এবার দুর্গাপূজার ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনে এই খরা কেটে গেছে। এদিকে গত সরকারের অনেক নেতার কারণে দেশের পর্যটন শিল্পে ধস নামে। বিশেষ করে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় নেতাধারী অনেক দুবৃর্ত্ত এই খাতটিকে পঙ্গু করতে বিভিন্ন সময়ে কারসাজি চালিয়েছে।
তারই শিকার হয় দেশের একমাত্র মিঠা পানির বিচ বলে খ্যাত মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রটি। সেখানে ভয়াল থাবা বাসায় দলটির সংসদ সদস্য একই সঙ্গে প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তার কালোহাতের ছোবলে ধ্বংস হয়ে যায় সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রটি। এছাড়াও দলটির একাধিক নেতা সমর্থকরা পার্বত্য তিন জেলায় নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে শিল্পটি ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লাগে।
পর্যটন শিল্প যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেজন্য আমরা চোখে রাখতে পারি আধুনিক সিঙ্গাপুরের দিকে। দেশটির আয়ের একমাত্র উৎস পর্যটন খাত। যদিও তা প্রাকৃতিক নয় বরং কৃত্রিম। অথচ আমাদের দেশের পর্যটনের স্থানগুলো প্রকৃতির দান। তারপরেও আমরা সেখান থেকে লাভবান হতে পারি না। কারণ, ওইসব দৃুবৃর্ত্তের কারণে। এদিকে কারণে- অকারণে বিভিন্ন সময়ে আমাদের দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমনের উপর নিষোধাজ্ঞা দিয়ে থাকি। একদিকে দুবৃর্ত্তদের হানা অপর দিকে এমন নিষেধাজ্ঞা সবই আমাদের পর্যটন শিল্পের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। তবে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় মানে শুধু তাঁদের অবকাশ যাপন নয়, দেশের অর্থনীতির চাকা চাঙা হওয়ার আলামতও।
একটা সময় আমাদের দেশের ভ্রমণপিপাসুরা শীতকালকেই ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করতেন। ঈদ-পূজা বা অন্যান্য ছুটি-ছাটায় বড়জোর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার তোড়জোড় থাকত। আর শীতকালে পর্যটনকেন্দ্রগুলো মুখরিত হতো তাঁদের পদচারণে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে এই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন যেকোনো ছুটিতেই সারা বছর দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা ভিড় জমান সেখানে। ফলে ভ্রমণ-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের বাৎসরিক আয় যে বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু পর্যটকেরা যে তাঁদের ব্যয় অনুয়ায়ী সব সময় সব সুযোগ-সুবিধা বা নিরাপত্তা পান না, সেই অভিযোগও কিন্তু বহুবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
কক্সবাজার ও সিলেটদুই জেলাতেই পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে এবার নিরাপত্তার কমতি নেই বলেই মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলেও খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধা হচ্ছে বলে জানান কক্সবাজারের এক দর্শনার্থী। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই সব হোটেল ও রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ নজর দেবে। তবে পর্যটকদেরও সতর্ক থাকা উচিত, বিশেষ করে সমুদ্রসৈকত এলাকায়। ভাটার সময় লাল পতাকা উড়ালে যে সাগরে জলকেলি করা যায় না, সে ব্যাপারটা জেনেই বেড়াতে যেতে হবে। ভাটার সময় সাগরমুখী টান প্রবল থাকায় লাইফ গার্ডকর্মীরা পর্যটকদের গোসলে নামতে নানাভাবে সতর্ক তো করেই থাকেন, তবু তাঁদের কথা ‘থোড়াই কেয়ার’ করে অনেকে সাগরে নেমে যান গোসল করতে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ ডেকে আনতে পারে।
পর্যটনশিল্পকে প্রসারিত না করে উপায় নেই। তাতে অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্ণ ও দৃষ্টিপাত জরুরি। প্রতিবেশী ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ যদি সারা বছর বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারে, তাহলে আমরা কেন আমাদের দৃষ্টিনন্দন জায়গাগুলো দিয়ে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে পারি না? তাদের নিরাপত্তা এবং চাওয়া অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা-সেবার ব্যবস্থা করতে পারলেই এই সংখ্যা বৃদ্ধি সম্ভব। সম্ভব বেশি বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও।
এবারের ছুটিতে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলো প্রায় শতভাগ ভাড়া হয়ে গেছে। অতীতের মতো কাউকে থাকার জায়গা না পেয়ে গাড়িতে রাত্রিযাপনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সে যা-ই হোক, সারা বছর যে পরিমাণ দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানকার ভ্রমণকেন্দ্রগুলোতে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে আসেন, সেই তুলনায় এই পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সংখ্যা যে নেহাত কম, তা কোনো পরিসংখ্যান না করলেও বোঝা যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh