× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাইকে অভিনন্দন ও রক্তিম শুভেচ্ছা

কাজী সেলিম

০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৪৫ পিএম । আপডেটঃ ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৪৯ পিএম

একই ফ্রেমে তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সেলিম, মাঝে কাজী আব্দুস সাত্তার ও সর্ব ডানে কাজী সবুর

কালকিনির গোপালপুর কাজী বংশের পরিবারের সদস্যগণ ও গর্বীত গোপালপুরের জনগণ যখন ৭১-এর বীর আকাশ যোদ্ধা বৈমানিক ক্যাপটেন আলমগীর সাত্তার বীর প্রতীককে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কর্তৃক সর্বোচ্চ বেসামরিক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদানের ঘোষণার সংবাদে উচ্ছাসিত, আবেগে আনন্দিত, উল্লাসিত ছিলাম সঠিক তখনই, আমাদের এক পরিবারের চারজন মহিলা সদস্য গত ২০ মার্চ, এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায়, ঢাকা থেকে গ্রামের গোপালপুরস্থ কাজী বাড়ি যাওয়ার পথে নির্মমভাবে নিহত ও তিনজন আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসারত অবস্থায় আছেন। 

উল্লেখ্য, হতাহত সবাই আমাদের পরিবারের অর্থাৎ আমার বাবা এবং আলমগীর সাত্তার ভাইয়ের প্রয়াত বাবার ছোট ভাইয়েরই সন্তান ও একজন ছিলেন পুত্রবধূ। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন স্বীয় পরিবারের সদস্য চলে যাওয়াদের স্বর্গবাসী ও বেঁচে থাকাদের দ্রুত সুস্থ করেন। 

স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০২৪-এর রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক প্রদান করেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাজী আলমগীর সাত্তার, ’৭১ এর বীর বৈমানিক আকাশ যোদ্ধা বীর প্রতীক। প্রথমে নামটি প্রকাশিত তালিকায় সর্বাগ্রে গোচরীভূত হওয়ার পর একটু বিভ্রান্ত হয়ে ছিলাম, কারণ তিনি একজন বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা তার নামের পিছনে বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক মহা মূল্যবান রাষ্ট্রীয় উপাধি বা পদবী উল্লেখ না থাকায়। একটু পরেই আবার কাজী আব্দুস সাত্তার অর্থাৎ আমাদের কাজী আলমগীর সাত্তার ভাই-এর সাথে যোগাযোগ ও কথোপকথন করে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, আলমগীর ভাইই এবারের ঘোষিত স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামের তালিকায় প্রথম ব্যক্তি যিনি, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রাপ্ত হবেন। গত ২৫ মার্চ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি গ্রহণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থাৎ স্বাধীন বাংলার মহান পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান পৃষ্টপোষক যার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলমগীর ভাই ও একই পরিবারের আমি ও আমার অগ্রজ, কাজী সবুরসহ লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ’৭১-এর যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। সেই মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গর্বিত কন্যা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে এই রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক গ্রহণ করেছেন। আমাদের সকলের সংগ্রামী অভিনন্দন ও রক্তিম শুভেচ্ছা আপনাকে আলমগীর ভাই ও আপনার সাথে সকল পুরস্কারপ্রাপ্তদের। 

কাজী আব্দুস সাত্তার নামে আমাদের পরিবারের আরও একজন স্বনামধন্য বীর, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্র সৈনিক ও অবিভক্ত ভারতের একজন দেশ প্রেমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক কাজী আশরাফ মাহমুদ ও অধ্যাপক ডাক্তার কাজী জোহোরা বেগমের বড় ভাই এবং তাদের জান্নাতবাসী পিতা কাজী আব্দুস সাত্তার যিনি অবিভক্ত ভারতের সার্জন অফ ইন্ডিয়া পদক প্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন। তিনি আমার ও আলমগীর সাত্তার ভাইয়ের পিতার আপন চাচা, তিনি ছিলেন বর্তমান স্যার ছলিমউল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা লগ্নের প্রথম ব্যাচের ছাত্র।

কাজী আলমগীর সাত্তার (বীর প্রতীক) ভাই তার পেশাগত কঠিন জীবনকে পছন্দ করে নিয়েছিলেন, একজন নির্ভীক বেসামরিক বৈমানিক হিসেবে ১৯৬০-এর দশকের দিকে তদানিন্তন পিআইএতে যোগদান করে নিজেকে একজন পেশাদার, দক্ষ পাইলট হিসেবে প্রস্তুত করতে কঠোর অধ্যাবসায়, প্রশিক্ষন ও পড়াশুনায় নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি যখন একজন পূর্ণাঙ্গ যাত্রীবাহী বিমানের বৈমানিক বা পাইলট হিসেবে কর্মময় জীবন শুরু করেন তখনকার তৈরি বিমানসমূহ আকাশ পথে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সাগর মহাসাগর পাহাড় পর্বত দুর্গম ঝড়ঝঞ্জা অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার অর্থাৎ প্রায় ৩১ হাজার থেকে কখনো ৪২ হাজার ফুট উচ্চতায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো অভ্যান্তরিন অনেক নিচু উচ্চতায় আকাশপথে চলাচল করত এবং এখনো চলাচল করে যা বিমান চলাচলের একটি উচ্চতা-নিম্নতার হিসাব। বিমানসমূহ তখন হস্তচালিত হতো বা Manual Device যন্ত্রপাতির সাহায্যে। এ ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিমান পরিচালনার কাজগুলো ছিল বা পরিচালিত হতো মানসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সদাসতর্কভাবে কঠিন মনোযোগে নিজেকে ও অপরসহযোগী বৈমানিক পাইলটদের, স্ব স্ব মস্তিস্ক, দৃষ্টি, মনোনিবেশ দ্বারা সদা বিজড়িত করে রাখা এবং যাত্রী ও বিমানকে নিরাপদে গন্তব্য স্থলে নিয়ে যাওয়া। 

তখনকার সময় বিমান পরিচালনায় যে সকল যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম ব্যবহার হতো তার মধ্যে ছিল যেমন, চাক্ষুষ সূত্র বা ইঙ্গিতে আন্তর্জাতিক আকাশসীমা রেখা, সূর্যের অবস্থান। এছাড়া ব্যবহৃত হলো মূল ভরসা, দিকদর্শন যন্ত্র বা কম্পাস অল্টিমিটার বা উচ্চতার পরিমাপন যন্ত্র, যাহা সঠিক আকাশ পথে বৈমানিকদের বিমান  চলাচলে বা পরিচালনার সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিমানের ব্যবহৃত ঐ সকল যন্ত্রপাতি বর্তমানে প্রায় লুপ্ত বা বিলুপ্ত। তখন বিমান পরিচালনার যন্ত্রপাতিগুলো ছিল যেমনি অবিশ্বস্ত, তেমনি সঠিক পথ পাওয়া বা অনুসরন করে আকাশ পথ অতিক্রম করে নিরাপদে গন্তব্যে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ সম্বলিত কঠিন বিপদজনক ও কঠিন প্রচেষ্ঠায় লিপ্ত থাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা। প্রতিটি বিমানের একজন নেভিগেটর বা আকাশ পথের সহায়ক পথ সন্ধানকারী, যিনি ককপিঠে বৈমানিকদের পিছনে বসে একহাতে কম্পাস, অপর হাতে আকাশ মানচিত্র অনুস্মরণ করে সঠিক পথে সঠিক গন্তব্য দেশের যাওয়ার দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন। আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও আবিষ্কারের ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির সাধন হওয়ায়, আকাশ পথে বৈমানিকদের সেই সকল ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করে দেয় ১৯৮০-’৯০-এর  দিকে যখন জিপিএস-সহ অত্যাধুনিক যান্ত্রিক, বিমান পরিচালনার যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা, কাজী আলমগীর সাত্তার ভাই ষাট দশকের শুরু হওয়া তার পেশাগত বৈমানিক কর্মজীবনকে একজন দক্ষ, সচেতন পেশাদার বৈমানিক বা পাইলট হিসেবে সম্মান ও সুনামের সাথে নিজের কর্মময় জীবনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি, নিজকে শিল্প, সাহিত্য বাংলা সংস্কৃতিকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নিকট একজন  খূরধার লেখক হিসেবে তার প্রভাব ও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন, তার স্বীয় ব্যস্ততম কর্মজীবনেও। তার লেখা ও প্রকাশিত অন্যতম দুটি বই, পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরাচার একনায়ক আইউবের উপর লিখিত ‘আইউব খানের কুমির শিকার’ ও ৭১-এ নরঘাতক, লম্পট ইয়াহিয়া খানের উপর লিখিত রসাত্মক ও ব্যাঙ্গাত্মক ও রম্যরোচক বই, গল্পসমূহ বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল পাঠকদের নিকট। এই বৎসরের একুশের বই মেলায়ও তার লিখিত ৭১ এর মহান মুক্তি সংগ্রামে সরসরি অংশ গ্রহনের উপর ‘কিলো ফ্লাইট’ বইটিও পাঠকদের বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একজন সদা ব্যস্ত পেশাদার দ্বায়িত্বপূর্ণ বিমান পরিচালনার ক্যাপ্টেন হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন শেষে ঘরে ফিরে, দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি হরেক রকমের লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।

দেশ মাতৃকার সচেতনতার দ্বায়িত্ব পালনেও তিনি ছিলেন একজন আপসহীন সংগ্রামী যোদ্ধা, যার পরিচয় তিনি দিয়েছেন ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষণের সংগ্রামী আহ্বান ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শক্তিশালী আপসহীন নেতৃত্বের প্রতি অটল সমর্থক হিসেবে তৎকালীন পিআই’র একজন বৈমানিক হিসেবে সহকর্মী বাঙালি পাইলট বৈমানিকদের গোপনে সংগঠিত করে মহান নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে প্রতিনিয়ত সাক্ষাৎ করে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঐতিহাসিক ৭ মার্চের নির্দেশনামূলক ভাষণে তিনি গোটা জাতিকে প্রস্তুতি নিয়ে, প্রথমে অসহযোগ আন্দোলন ও চূড়ান্তভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সবাত্মকভাবে প্রস্তুত থাকার গুরুত্বপূর্ণ যেসব নির্দেশাবলী প্রদান করেছিলেন, ঠিক তখনই আলমগীর সাত্তার ভাই বিমানের ঘনিষ্ট সহকর্মী যথা, বীর উত্তম ক্যাপ্টেন আকরাম, ক্যাপ্টেন শাহাব, ক্যাপ্টেন খালেকসহ আরও কতিপয় তখনকার পিআই-এর দেশ প্রেমিক বাঙ্গালী জাতিয়তার দিপ্ত চেতনায় প্রভাবিত বাঙালি বৈমানিক পাইলটদের অতীব গোপনে সংগঠিত করে তোলেন। তাদের এই গোপনীয় প্রস্তুতি ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে, সাত্তার ভাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়মিতভাবে পূর্ব অবহিত করতেন।

২৬ মার্চ, ১৯৭১-এর কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী যখন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিকট শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে বাঙালি জাতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার উল্লাসিত এক ভয়াবহ গণহত্যায় লিপ্ত হয়, ঠিক তখনই কাজী আলমগীর সাত্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ডাকে ‘চিত্ত যেথা ভয়শুন্য, শীর সেথা উচ্চ’ অথবা ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়েছে দেনা, শুধিতে হবে ঋণ’ এই মন্ত্র চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে সরাসরি যোগদানের এক সুকঠিন দৃঢ় সংকল্প ও চেতনা নিয়ে বিপদ, শংকা ভয়ভীতি বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে, ঢাকা ত্যাগ করে প্রথমে কালকিনীর দক্ষিন গোপালপুরস্থ স্বীয় বাড়ীতে সংক্ষিপ্ত সময় অতিক্রম করে স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ মা, ভাই-বোনদের রেখে এক অচেনা বন্ধুর কণ্টকিত পথ অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগড়তলা রাজধানীতে পৌঁছে, পি আই-এর কর্মরত সহকর্মীদের সমবেত একত্রিত করে অগ্রসর হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার, মহান মুক্তি সংগ্রামের এক অকূতভয় সংগ্রামী বৈমানিক যোদ্ধা হিসেবে। ভারতের মাটিতে অবতরন করার পরই মহান মুক্তিযুদ্ধে বেসামরিক ও বাঙালি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বাঙালি বৈমানিকদের সম্মিলিত অথবা পৃথক ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা নির্ধারণের লক্ষ্যে পাক বিমান বাহিনীর স্বপক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিসংগ্রামে অংশ গ্রহণকারী অফিসার যথা, এমকে বাশার, এ কে খন্দকার, সুলতান মাহমুদসহ কতিপয় দক্ষ, সাহসী পেশাগত পাক বিমান বাহিনীর পাইলটদের সমন্বয়ে ভারতের উত্তর পূর্ব প্রদেশ, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটিই, আর নরঘতক পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার নির্যাতন শোষণ হানাদার পাক বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। নির্যাতন শোষণ, হানাদার পাক বাহিনীর সংগঠিত বর্বর গণহত্যার চরম ও কঠিন প্রতিশোধের এক দৃঢ় কঠিন সমন্বিত পরিকল্পনা ও ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি’, ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’ এই মহান ব্রত নিয়ে আপোষহীন দৃঢ়মনোবল ও চেতনায় শক্তিশালী বলীয়ান হয়ে, দ্রুত কাজ শুরু করেন আলমগীর সাত্তার, নবগঠিত বাংলাদেশে বিমান বাহিনীর একজন বীর আকাশ যোদ্ধা হিসেবে। পুরাতন মডেলের ডাকোডা বিমানকে ছোট ছোট কামানে সুসজ্জিত করে শত্রুর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহে আঘাত হানার পদ্ধতি ও পারিকল্পনার উপর বিশেষ বিশেষ প্রশিক্ষন শেষে, বিমান বাহিনীর বাঙ্গালী পাইলটদের সাথে একত্রিত সমন্বিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হানাদার পাক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর আঘাত করে পাক বাহিনীর ঘাতকদের বেশ ক্ষয়ক্ষতির সাধন করেছিলেন।

আমি সহ আমার অগ্রজ কাজী সবুর ফরহাদ ও পারিবারের আরও ৫ জন, ১৯৭১-এর মহান মুক্তি সংগ্রামে জাতির পিতার সংগ্রামী আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারতের বাগমারায় প্রশিক্ষন শেষ করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মাদারীপুরে কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করা ছাড়াও গৌরনদীতে অবস্থানরত আত্মসমর্পণ না করার ঘাতক জঙ্গি নাছরবান্দা পাক হানাদার বাহিনীকে ২২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার মহান দায়িত্ব পালনে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহায়তায় আমিসহ আমাদের গোপালপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদান আজও গর্ব ও বীরত্বের সাথে স্মরণ করি। সেদিন আমি ও আমাদের সহযোদ্ধাগণ জাতির পিতার অমোঘ সংগ্রামী নির্দেশাবলীকে বুকে ধারণ করে এবং দেশপ্রেমের আত্মসচেতনতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, আর্জেনটিনার সংগ্রামী নেতা, চে গুয়েভরার সেই পথ পরিক্রমের বাণী ‘হাসতালা ভিকতোরিয়া সিয়েম্প’, অর্থাৎ বিজয়ের পথে অগ্রসর হও। এই অমিয় সাহসিকতায় বলিয়ান হয়ে আমার গোপালপুরের স্বীয় বাড়ীতে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে রেখে মহান মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলাম। দেশে ফিরে বাবাকে দেখার সৌভাগ্য হয় নাই আমাদের দু’ভাইয়ের। তিনি ঢাকাস্থ এলিফেন্ট রোডের আমার দুলাভাই অর্থাৎ মরহুম আবিদুর রেজা খানের বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। 

গোপালপুর, কালকিনি তথা মাদারীপুরের জনগণ স্বাধীন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ খেতাব ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পাওয়ায়, ’৭১-এর বীর বিমানযোদ্ধা কাজী আলমগীর সাত্তার ভাইকে জানাই আমাদের গর্বিত পরিবারসহ আমার ও অগ্রজ বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সবুরসহ গোপালপুর, কালকিনির বীর মুক্তিযোদ্ধা সকলেই আপনাকে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন, সালাম ও রক্তিম শুভেচ্ছা। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। একই সাথে এ বছরের (২০২৪) স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের ও জানাচ্ছি আমাদের অভিনন্দন ও রক্তিম শুভেচ্ছা। সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।


লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.