২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটাররা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ প্রয়োগ করেছিল। ওই সময় জারি করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৩১(৫)(বিবি)-তে এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপারের সবশেষ প্রার্থীর স্থানে লেখা থাকে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’।
‘না’ ভোটের বিধান সংযুক্ত করার কারণে ওই নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে ভিন্ন মাত্রা যুগিয়েছে। সৎ প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে নতুন এই নিয়ম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা সর্বস্তরের মানুষের৷ তখন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে শুধু প্রার্থীদের পক্ষেই ভোট দেননি ভোটাররা৷ এর সাথে ‘না' ভোট-এর সুযোগ থাকায় ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মতামত ছিলো সচেতন ভোটারদের৷
তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না ভোট’ পড়েছিল। সর্বোচ্চ 'না ভোট' পড়েছে রাঙ্গামাটিতে, ৩২ হাজার ৬৪টি ৷ খোদ ঢাকার আসনগুলোতে না ভোট পড়েছে ৭০ হাজার। সারা দেশে ‘না' ভোট পড়েছে মোট ভোটের শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ৷ ভোটাররা শুধু যে মাঝারি পর্যায়ের প্রার্থীদের এলাকায় ‘না' ভোট দিয়েছেন তাও কিন্তু নয়৷ বগুড়ায় বেগম জিয়ার মত প্রার্থীর আসনেও ‘না' ভোট পড়েছিলো প্রায় আড়াই হাজার, আর বাগেরহাটে শেখ হাসিনার আসনেও না ভোটের সংখ্যা ছিলো প্রায় এক হাজার৷ উল্লেখ্য, ওই নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও মাত্র ৬টি দল ‘না ভোটের’ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। তার মানে ‘না ভোট’ সপ্তম স্থানে ছিল। এ বিধান নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই পরবর্তী সময়ে সরকার এ ধারাটি বাদ দেয় এবং তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপিও এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত করেনি।
ওই সময়কার নির্বাচন কমিশনের যুক্তি হালের ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণের কাছাকাছি ছিল। নির্বাচন কমিশনের শক্ত যুক্তির ভেতরে ছিল- ভোটারদের সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা দেয়া, প্রার্থিতা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর আরও সংবেদনশীল হওয়া এবং ভারতীয় সংবিধানের মতো আমাদের সংবিধানের ধারা ৩৯(১) ও (১)(ক) প্রদত্ত চিন্তা ও মতামত প্রকাশের মতো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা-বিষয়ক বিবেচনা এবং নেতিবাচক কারণে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া অথবা ব্যালট পেপার নষ্ট করার মতো ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে ইতিবাচক বিষয়ে পরিণত করা।
যা হোক, ওই অধ্যাদেশের আওতায় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটারদের সামনে বিকল্প ব্যবস্থা উত্থাপন করা হয়েছিল। ওই সময়ে ‘না ভোট’ বা ‘উপরের কাউকে নয়’ বিষয়টি সময়ের অভাবে যথেষ্ট প্রচারিত হয়নি। তবু বহু তরুণ ভোটারের মধ্যে বিষয়টি চর্চিত হয়েছিল।
সারাদেশে প্রায় ৪ লক্ষ ‘না ভোট’ পড়লেও, কোন আসনেই তা পুনঃনির্বাচনের পর্যায়ে যায়নি। তবে, এই নতুনত্ব সে সময়ে ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। অনেক ভোটার শুধু ‘না ভোট’ বা ‘উপরের কাউকে নয়’ অধিকারের বিষয়টি যুক্ত করার কারণেই ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। আজও অনেক ভোটার জানেন না, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের এই ধারাগুলো ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে সংসদ কর্তৃক পাসকৃত আইনের ধারা ৩১-এর সংশোধনী (খ) ও (গ) দ্বারা বিলুপ্ত করা হয়, কাজেই ৪০ (এ)-এর কার্যকারিতা আর নেই। তাই, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে "না" ভোটের বিধান রাখা হয়নি।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তেও সমাজের সর্বস্তর থেকেই ‘না ভোটের’ বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ভোটারদের সেই দাবিকে মূল্যায়ন করেনি। তাই, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও থাকছেনা 'না' ভোটের বিধান।
তবুও দেশের তরুণসমাজ ও বিশিষ্টজনদের প্রত্যাশা, জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে নির্বাচন কমিশন আসন্ন সকল নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমিও সে প্রত্যাশা করি।
লেখক : সম্পাদক, সোনালী দেশ ডটকম, অর্থ-সম্পাদক নাঙ্গলকোট প্রেস ক্লাব, কুমিল্লা
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh