× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিশ্ব পুরুষ দিবস: স্বাস্থ্যকর পুরুষ, স্বাস্থ্যকর বিশ্ব

হাসান মাহমুদ রাজীব

১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৭ পিএম । আপডেটঃ ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৭ পিএম

বিশ্ব নারী দিবসের কথাতো সবারই জানা। কিন্তু পুরুষ দিবসও যে আছে তা অনেকেই জানেন না। দেশে-বিদেশে নারী দিবস যতটা আলোচিত, পুরুষ দিবস সেভাবে আলোচনায় আসে না। তবে আলোচনা কম হোক বা বেশি হোক, প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর পালিত হয় বিশ্ব পুরুষ দিবস। দিবসটি বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে পালিত হয়।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস লিঙ্গ সমতার কথা বলে। তাছাড়া, একটি উন্নত ও নিরাপদ বিশ্ব তৈরির লক্ষ্যেও পালিত হয় দিনটি। পুরুষ দিবসের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ এবং পুরুষদের সচেতনতা প্রচার করা।

বিশ্ব পুরুষ দিবস মূলত ৬টি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে তৈরি। সেগুলো হলো:

১. ইতিবাচক রোল মডেলদের তুলে ধরা। শুধু সিনেমা বা খেলাধুলার তারকা নয়, সাধারণ কর্মজীবী শ্রেণি সৎ পুরুষদের প্রচারের আলোয় আনা।

২. সমাজ, পরিবার, বিয়ে, শিশুর যত্ন ও পরিবেশে পুরুষদের ইতিবাচক অবদান তুলে ধরা।

৩. পুরুষের সামাজিক, শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া। 

৪. সমাজসেবা, সামাজিক আচরণ ও প্রত্যাশা এবং আইনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রতি বৈষম্যের ওপর আলোকপাত করা।

৫. লিঙ্গ সমতার প্রচারণা করা এবং পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক ভালো করা।

৬. অধিক নিরাপদ ও ভালো পৃথিবী গড়ে তোলা, যেখানে মানুষ নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে এবং তাদের সমাভবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারবে।

অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে অবদানের পাশাপাশি সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার, বিবাহ, শিশু যত্ন এবং পরিবেশে পুরুষদের অবদান উদযাপিত হয় এদিন। এছাড়া, পুরুষের সামাজিক, মানসিক, শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতার যত্ন নেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচিত হয় এমনকি, নানা ক্ষেত্রে তাদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়ও তুলে ধরা হয় এদিন।

দিবসটির শুরু

১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব পুরুষ দিবস। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিরোম টিলাকসিংয়ের উদ্যোগে এ দিবস পালন শুরু হয়।

গত শতকের ষাটের দশকেই পুরুষ দিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি নিবন্ধে বলা হয়, ২৩ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস হিসেবে পালন করতে আগ্রহী অনেকেই। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মতো একই ধরনের একটি দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন তারা। এর পরের দশক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলাদাভাবে পুরুষ দিবস পালন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, কলম্বিয়া, রাশিয়া ও চীনে উদ্যাপন করা হতো দিবসটি। তবে ভিন্ন ভিন্ন এ উদ্যোগ তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। একসময় বন্ধও হয়ে যায়। অবশেষে ১৯৯৯ সালে জিরোম টিলাকসিংয়ের নির্ধারিত দিনটিই পুরুষ দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। সে সময় ক্যারিবীয় অঞ্চলে দিবসটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।

পুরুষ দিবস যেসব দেশে ঘটা করে পালন করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, হাইতি, জ্যামাইকা, হাঙ্গেরি, মাল্টা ও ঘানা।

বিশ্ব পুরুষ দিবস নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে ঢুঁ মারতে পারেন ইন্টারন্যাশনাল মেনস ডে ডটকমে। দিবসটি নিয়ে নানা তথ্যে ভরপুর এ ওয়েবসাইট। পুরুষ দিবস পালনের শুরুটা কীভাবে হলো, কেন পালন করা হয়, কীভাবে পালন করা যায় সব তথ্যই রয়েছে এখানে। এই ওয়েবসাইটের বরাতে নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে বিশ্ব পুরুষ দিবসের আরও কিছু তথ্য।

নারীরা তাদের দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা, বেদনা তাদের অভিভাবক বা পুরুষদের কাছে বলতে পারে কিন্তু পুরুষরো তা কাউকে বলতে পারে না। কারণ শোনার হয়তো কেউ নেই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া। আর তাই হয়তো পুরুষদের দুঃখ পেতে নেই, কষ্ট পেতে নেই। দুঃখ-কষ্ট পেলেও কাউকে বলতে নেই। বললেও কাঁদতে নেই। সঙ্গোপনে দুঃখ পুষতে পুষতে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো হয়ে যেতে হয় পুরুষকে। তবে একসময় ঠিকই সেই আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়। তখন জ্বলন্ত লাভা অন্যকে কিছুটা পোড়ালেও ওই পুরুষটাকে পুড়িয়ে একেবারে নিঃশেষ করে দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এটি ঘটছে। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষের তুলনায় নারীরা বিষণ্নতায় বেশি ভোগেন। কিন্তু, পুরুষের আত্মহত্যার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই পুরুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে ও মানসিক সুস্থতার জন্য পুরুষ দিবস উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ।

আসলে সমাজ তথা বিশ্বে পুরুষের মূল্যায়ন তুলে ধরতেই পালন করা হয় বিশ্ব পুরুষ দিবস। পরিবার, সমাজ ও দেশে পুরুষের অবদান ইতিবাচকভাবে তুলে ধরাই এ দিবসের লক্ষ্য। কেবল চলচ্চিত্রের নায়ক বা খেলোয়াড় নয়, সাধারণ একজন পুরুষও হতে পারেন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি বিশ্ব আদর্শ। সৎ, পরিশ্রমী, মার্জিত স্বভাবের পুরুষদের রোলমডেল হিসেবে তুলে ধরা এ দিবসের উদ্দেশ্য। পরিবার, সমাজ, স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি পুরুষের অবদানকে মূল্যায়ন করে একটি নিরাপদ ও উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো এ দিবসের অন্যতম প্রত্যয়।

এই দিবসের উদ্দেশ্যে

পুরুষ ও বালকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি;

নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক প্রচারণা;

নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক সাম্যতার প্রচার;

পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা;

পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি;

পুরুষ ও বালকদের অর্জন ও অবদানকে উদ্যাপন;

সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যত্নের ক্ষেত্রে পুরুষ ও বালকদের অবদানকে তুলে ধরা। 

আর পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা বিশ্বে পুরুষদের অবদান যথাযতভাবে তুলে ধরতে ও কার্যকরী করতে পুরুষদের স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া জরুরি। সেজন্য রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার।

পুরুষের উপকারী খাবার

সুস্থ থাকতে ও শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণে খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার রয়েছে যা পুরুষের জন্য খুবই উপকারী। পুরুষের সুস্থতা, তারুণ্য আর বয়স লুকাতে কিছু খাবার খেতে পারেন। কিছু খাবারে রয়েছে  ফাইটোনিয়ট্রিয়েন্টে ভরপুর। এ ছাড়া তারুণ্য ধরে রাখতে ওমেগা-৩ ফ্যাট, লাইকোপেন, ভিটামিন-‘সি’ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরি। নিয়মিত এসব খাবার খেলে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না ও শরীরের দুর্বলতাও কমবে।

এ বিষয়ে এভার কেয়ার হাসপাতালের (অ্যাপোলো) পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, কিছু খাবার রয়েছে যা ফাইটোনিয়ট্রিয়েন্টে ভরপুর। যা পুরুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়া ওমেগা-৩ ফ্যাট, লাইকোপেন, ভিটামিন-‘সি’ ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। 

১. ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ থেকে টমেটো শরীরকে সুরক্ষা দেয়। টমেটো ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে এবং ত্বকে প্রোটিনের সরবরাহ বজায় রাখে।

২. খেতে পারেন মাছের তেল। মাছের তেল শরীরের কোষের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ঠিকমতো চালাতে সাহায্য করে। মাছের তেলে আছে উচ্চমাত্রার হজমে সহায়ক প্রোটিন।

৩. সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন বাদাম খেতে পারেন।  বাদমে দরকারি ভিটামিন ও পুষ্টি আছে।

৪. স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও ব্লুবেরিতে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েডসের ভালো উৎস। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, যা কোলাজেনকে শক্তিশালী করে। এতে ত্বকের দাগ কমায়।

৫. তারুণ্য ধরে রাখতে গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের কদর দিন দিন বাড়ছে। সবুজ চায়ে রয়েছে একাধিক পুষ্টি উপাদান ও খনিজ পদার্থ।

৬. দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের জন্য বেশ উপকারী এবং বয়সের কারণে হওয়া রোগগুলো প্রতিরোধে দই বিশেষভাবে কাজ করে।

৭. পুষ্টিকর ফলগুলোর মধ্যে অ্যাভোকাডো অন্যতম। কেননা এর মধ্যে আছে নানা ঔষধিগুণ।

এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য তেমন কিছু উপকারী খাবারের কথা জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তার মধ্যে টমেটো, ঝিনুক বা শুক্তির দস্তা, দানাদার শস্য, রশুন, স্যামন মাছ, ব্লুবেরি, ফুলকপি, ডিম, ডালিমের রস ইত্যাদি।

হিন্দুস্তান টাইমস’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও রোজকার জীবনে অনেক চাপ সামলাতে হয়। অফিসে কাজের চাপ ছাড়াও বাড়ির নানা দায়িত্ব, সন্তানদের ভবিষ্যৎ, ঋণের বোঝা- সবকিছু নিয়েই তাদের ভাবতে হয় রোজ। সারাদিন এসব চাপ সামলেও তারা হাসিমুখে থাকেন। আনন্দে রাখেন পরিবারের অন্যদেরও। আমাদের চারপাশের এমন পুরুষরাই সত্যিকারের পুরুষ। পাশাপাশি তারা আমাদের রোল মডেলও।


লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.