× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রপ্তানি বহুমুখি করার জন্য জরুরি ও সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন

হীরেন পণ্ডিত

১২ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৩ এএম

আমাদের উচিত রপ্তানির সম্ভাবনাসহ পোশাক বহির্ভূত অন্যান্য ভালো খাতগুলির প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া। দেশের রপ্তানিকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা যাতে ২০২৬ সালে এলডিসির উত্তরণের পরে বিদ্যমান এবং নতুন চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে। তৈরি পোশাক খাত বা আরএমজি খাত বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য একটি সফল মডেল কিন্তু এখন সময় এসেছে চামড়া, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি এবং হালকা প্রকৌশলের মতো অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ফোকাস করার।

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলির (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর কীভাবে তার রপ্তানির পরিধি বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কম খরচে এবং সহজে প্রবেশাধিকার, পর্যাপ্ত নীতি-বান্ধব সহায়তার পাশাপাশি পোশাক-বহির্ভূত রপ্তানি খাতের জন্য আর্থিক এবং আর্থিক ছাড়াও অন্য প্রণোদনা এবং পাশাপাশি সমান দক্ষতার বিকাশ নিশ্চিত করা। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলির উচিত দেশীয় প্রবিধানগুলি প্রয়োগ করা যা বিশ^ বাণিজ্য সংস্থা অনুমোদিত শিল্পগুলোর জন্য আরো প্রস্তুতি নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

এছাড়াও, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কে শক্তিশালী করা যাতে স্থানীয় পণ্যগুলির গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং যে সমস্ত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের জন্য পরীক্ষার সম্মুখিন হয় সেগুলোকে আরো ভালোভাবে এগুলোর গুণগত মান যাচাই করা।  এ কারণে দেশের আইনি সক্ষমতাও বাড়াতে হবে কারণ বাণিজ্যিক বিরোধ এলডিসি উত্তরণ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পাট, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি এবং অন্যান্য উদীয়মান খাতের মতো ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সব ধরনের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। ঐতিহ্যগত শিল্পের পাশাপাশি ভৌগলিক বৈচিত্র্য এবং পরিষেবা খাতের উন্নয়ন এই বিষয়গুলোও সামনে আসতে পারে।

আমাদের ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে আরও বেশি রপ্তানির প্রক্রিয়াকে আরো সহজতর করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে কেবলমাত্র সম্ভাব্য রাজস্ব লাভের কথা বিবেচনা না করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার সুবিধাগুলি চিহ্নিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমানে, বাংলাদেশ পাট খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে তবে বৈশ্বিক জলবায়ুু পরিবর্তন এবং টেকসই উনয়নের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাড়ানোর বিবেচনায় এই শিল্পটি ৫ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।

পাট এখন বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত হয় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রাকৃতিক ফাইবার হয়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতামূলক হতে আমাদের এই সেক্টরে আরো উদ্যোগ বিনিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ৭০ শতাংশ ধান উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং দেশের গ্রামীণ শ্রমশক্তির প্রায় ৪৭ শতাংশ এ কাজে নিয়োজিত। আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে, বেসরকারি খাতের গবেষণা ও উদ্ভাবন বাড়াতে হবে, ভালো কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, দেশের ফসল-পরবর্তী ক্ষমতা এবং ব্র্যান্ডের উন্নয়ন করতে হবে।

স্থানীয় আইসিটি খাত বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে কিন্তু একটি ডিজিটাল ওয়ালেট বা  পেপ্যালের মতো অর্থপ্রদানের ব্যবস্থার অভাবের কারণে সবকিছু সময়মতো রিপোর্ট করা সম্ভব হয় না। এই খাতের বিকাশ ও অর্থের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের একটি স্বল্প ব্যয়ের তহবিল তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া ওষুধের প্রায় ৮০ শতাংশই পেটেন্টের বাইরে। 

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা রপ্তানি বহুমুখিকরণের কথা বলে আসছেন। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-এর অন্যতম একটি আলোচ্য বিষয় ছিলো, যা দেশে এবং বিদেশে অব্যবহৃত ব্যবসায়িক সম্ভাবনাগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য নীতি এবং আইনি সংস্কারের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। কার্যত, বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ের জন্য বছরের পর বছর ধরে একটি খাতের ওপর নির্ভরশীল। এখন রপ্তানির ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাকের অংশ। অন্যান্য শিল্প ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কবে যুক্ত হবে তা কেউ জানে না। চামড়া ও জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস, আইটি ও সফটওয়্যার, পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য, হস্তশিল্প, হিমায়ত খাদ্য, কৃষিভিত্তিক আইটেম এবং আরও কয়েকটি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে পারে। 

আমাদেরকে বিনিয়োগের পরিবেশ অর্জন করতে হবে। আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে পছন্দ করি, যখন তারা আমাদের সামাজিক খাতের অগ্রগতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশংসা করে, আলোচনা করে সেগুলো আমাদের কাছে ইতিবাচক বলে মনে হয়। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ (অতিদরিদ্র বিহীন) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের এগুলো নিয়ে আরো ভাবতে হবে এবং কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের উচিত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং তাঁদের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গবেষণায় মনোনিবেশ করা। রপ্তানি ও বাণিজ্যেও উন্নতির জন্য পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে ব্যবসায়ীরা বাজার ঠিক রেখে এবং আরো উন্নতি করতে পারেন। 

আমাদের ব্র্যান্ডিং তৈরি করে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যবসায় আমাদের আরো গবেষণা দরকার। প্রতিটি ব্যবসায় শিল্পের মালিক ও উদ্যোক্তারা পণ্যের চাহিদা ও গুণগত মান নির্ধারণ করে এবং রপ্তানির জন্য পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে তাঁরা দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার উদ্যোগ নিতে পারেন।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগ খুব দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমরা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছি। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সে ক্ষেত্রে আমরা মহামারী চলাকালীন সময়েও সবকিছু চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। সরকার প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে তা আরো ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২৩টি দেশের ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্য কথায়, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, আমরা আমাদের সামনে আসতে পারে এমন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি।

অন্যান্য সম্ভাব্য নন-গার্মেন্ট সেক্টরের সাথে জড়িত উদ্যোক্তাদেরও তাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং তাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। বৈশ্বিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে টেক্সটাইল পণ্যে বৈচিত্র্য আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই জিনিস সব সময় পছন্দের নাও হতে পারে। পোশাকের নকশা, রং সবকিছুই পরিবর্তন করতে হবে বাজারের নতুন নতুন চাহিদা অনুযায়ী।

বিশ্ব পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আমাদের এই বিষয়ে আরো মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্ববাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়াতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পোশাক শিল্পের বিকাশ ও প্রবৃদ্ধিতে এবং বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বেসরকারী খাত সর্বাগ্রে। তাই রপ্তানি বহুমুখিকরণে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

থাইল্যান্ড, রপ্তানি বহুমুখিকরণের একটি সফল উদাহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ-ভিত্তিক শিল্প  (যেমন কৃষি ও মৎস্য পণ্য) আপগ্রেড করার জন্য এবং শ্রম-নিবিড় উৎপাদিত রপ্তানি, বিশেষ করে পোশাক এবং ইলেকট্রনিক্সকে উৎসাহিত করার জন্য একটি দ্বৈত কৌশল গ্রহণ করেছে। চীনের সাথে সমস্ত পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি আঞ্চলিক বিষয়গুলোকে অর্থনৈতিক একীকরণের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে। ক্রস-কান্ট্রি প্রোডাকশন নেটওয়ার্কের একীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন চেইনের অবস্থান সংহত করেছে এর কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলি জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে কম খরচে উৎপাদন করার যে সুবিধা চেয়েছিল তার ব্যবস্থা থাইল্যান্ড করেছে।

আমাদের পণ্য বৈচিত্র্য, ভৌগলিক বৈচিত্র্য, গুণগত বৈচিত্র্য, পণ্য পরিষেবার বৈচিত্র্য নিয়ে ভাবতে হবে। পোশাক রপ্তানি আংশিকভাবে বিনিময় হার থেকে কিছুটা রক্ষা পায় কারণ বিশেষ আমদানি ক্রেডিট সিস্টেম (ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি) যা রপ্তানি আয় থেকে আমদানি খরচ কভার করে। রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট এর দ্বারা নন-আরএমজি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পাওে এমন আশংকা থাকে। ইমার্জেন্সি রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট তাদের জন্য সঠিকভাবে করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখিকরণ করার জন্য শুল্ক ব্যবস্থার একটি রপ্তানি-বিরোধী অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে কিভাবে আরএমজি ছাড়াও অন্যান্য রপ্তানি পণ্য বাড়ানো যায় সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের খরচ, গুণগত মান, সময় এবং নির্ভরযোগ্যতা এই চারটি মাত্রার কথা ভাবতে হবে। আরএমজি সেক্টর এই সমস্ত বিষয়গুলিতে অন্যদের থেকে এগিয়ে আছে।

সাধারণভাবে বিশ্বব্যাপী দু’টি ব্যবহৃত সূচক হল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, এনাবলিং ট্রেড ইনডেক্স এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ট্রেড লজিস্টিক পারফরমেন্স ইনডেক্স (এলপিআই)। সমস্ত সেক্টরেই, বাংলাদেশের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে, কিন্তু দক্ষতার ঘাটতি, প্রযুক্তিগত আপগ্রেড করার প্রয়োজন রয়েছে, দুর্বল অবকাঠামো বা আন্তর্জাতিক মান ও সম্মতি পূরণে অসুবিধার মতো বাধাকে কাটিয়ে উাার প্রচেষ্টা করতে হবে।

এই সংক্রান্ত বেশিরভাগ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো নয়। যুক্তি দেওয়া হয়েছে কম বেতনের অদক্ষ শ্রমের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে এগুলো চলে। তবে কোনো দেশের রপ্তানির জন্য কোনো একটি উৎসের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া কখনোই ভালো নয়। বিশ্বব্যাপী একটি বিরাট প্রতিযোগিতা রয়েছে আমাদের এ বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও টেকসই সমৃদ্ধির জন্য রপ্তানি পণ্যকে বহুমুখি করতে হবে। এটি করা সম্ভব হলে একদিকে এক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে মোট রপ্তানি আয় বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। উপকৃত হবে নারীরাও।

তবে এ জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে নতুন কারখানা স্থাপনে দীর্ঘমেয়াদী তহবিল, কর ছাড়, প্রণোদনাসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে। এছাড়া বাজেটে আলাদা করে ১০০ কোটি ডলার রাখার দাবি ব্যবসায়ীদের। নতুন যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ব্যবসায়ীদের যে দীর্ঘ সময় পথ পাড়ি দিতে হয়, সেই সময় কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পোশাক খাতকে সরকার দিনের পর দিন যেভাবে প্রণোদনা দিয়ে আসছে; রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতকেও সমানভাবে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি রয়েছে ব্যবসায়ীদের।

বাংলাদেশ থেকে ১৬০০ ধরনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হয়, তৈরি পোশাকের ২৯২ ধরনের পণ্য থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগ আসে। বাকি ১৩ শতাধিক পণ্য থেকে আসে মাত্র ১৫ শতাংশ আয়। কিন্তু এই এক হাজার ৩০০ পণ্যের মধ্যে প্রচুর পণ্য রয়েছে, যেগুলোর বাজার অনেক বড় এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য ও ওষুধের বাজার বড় হচ্ছে। এসব খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক দেশের তুলনায় বেশি। ফলে সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে এসব খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই বছরে ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ সময়ে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি স্থিতিশীল গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার রপ্তানিপণ্য বহুমুখি করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। রপ্তানি খাতে কর হার, কর আদায় পদ্ধতি ও বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হওয়া উচিত। কারণ অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় উদ্যোগ রয়েছে। আবার গবেষণায়ও জোর দিতে হবে, যাতে নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা যায়।

একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করে এগোনো যাবে না। রপ্তানির অন্যান্য খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ভিয়েতনামের নিজস্ব চামড়া নেই। আবার জনসংখ্যাও কম। কিন্তু ভিয়েতনাম বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব চামড়া ও পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি হচ্ছে এক বিলিয়ন ডলার। প্লাস্টিকের চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। এ শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। তবে সরকারের নীতি সংক্রান্ত সহায়তা বাড়াতে হবে। কোভিডের অভিঘাত কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি এখন চাঙ্গা হচ্ছে। গতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। দেশের রপ্তানি খাতেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে, বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বে পণ্য রপ্তানি হয়েছে সরকারের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। রপ্তানির ঊর্ধ্বগতিতে বরাবরের মতো এবারো বড় ভূমিকা রেখে চলেছে তৈরি পোশাক খাত। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ আরো বেশ কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রেও রপ্তানির গতি ইতিবাচক। 

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে লক্ষ্যের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৯৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। সে হিসেবে এবার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত শীর্ষ তিন ক্যাটাগরির পণ্য হলো তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। 

নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যকে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণে বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে খাদ্য ও কৃষিজাত শিল্পপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্রান্ডের পণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ায় এর বাজার বিস্তৃৃতির উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিকরণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।


লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.