২৫ ডিসেম্বর- শুভ ‘বড়দিন’। আমরা এ দিনের তাৎপর্য অনুসন্ধান করতে চাই! কেননা বড়দিনের তাৎপর্য সুসমাচারের নিগূঢ় তত্ত্বে নিহিত আছে, তা এ জগতের কাছে জানানোই হলো বড়দিনের সার্থকতা। প্রভু যিশু পবিত্র বাইবেলে বলেছেন, ‘আর সর্বজাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।’ মথি ২৪:১৪ পদ
বড়দিন অর্থ সুসমাচারের জন্মদিন, যে সুসমাচার স্বয়ং ঈশ্বর সৃষ্টির শুরুতে এদন বাগানে পাপে পতিত আদম ও হবার নিকট প্রচার করেছেন। ঈশ্বর এই সুসমাচারের প্রথম প্রচারক, কারণ ঈশ্বর পাপে পতিত মানুষের জন্য মুক্তির বার্তা ঘোষণা করলেন, ইহা সমুদয় সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরের বিশেষ আশির্বাদ, সুতরাং সমুদয় সৃষ্টির জন্য এই বড়দিনের তাৎপর্য অনুসন্ধান করা খুবই আশির্বাদের বিষয় অবহেলা করা অভিশাপের বিষয় -
‘যে কেহ পুত্রে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।’ যোহন ৩:৩৬ পদ।
বড় দিনের বীজ ঈশ্বর সৃষ্টির সূচনা লগ্নে মানুষের হৃদয়ে রোপন করেছেন, যা সুসমাচার সম্পর্কে আমাদের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে বলে। আদম ও হবা নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পরে পাপে পতিত হয়, ঈশ্বর তখন শয়তানকে অভিশাপ দেয়া শুরু করেন কেননা শয়তানই আদম ও হবাকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। ঈশ্বর শয়তানকে অভিশাপ দেওয়ার মাধ্যমে মানুষের জন্য এক সুসংবাদ ঘোষণা করেন। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন শয়তানকে অভিশাপ দেওয়ার দ্বারা মানবজাতির জন্য আবার সুসংবাদ হয় কিভাবে? এই সুসংবাদ শুধু আদম ও হবার এটি বলা যেতে পারে। আসলে মানুষের জন্য সুসংবাদই শয়তানের জন্য বড় দুঃসংবাদ। আসুন শুনি তা হলে মানুষের জন্য কি সেই সুসংবাদ। ঈশ্বর শয়তানকে আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে বলেন, ‘আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পদমূল চূর্ণ করিবে।’ এ ঘোষণাকে মানবজাতির পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য প্রথম সুসংবাদ বলা হয়, আমি এটিকে বড়দিনের তাৎপর্যে নিবন্ধিত করতে চাই, কেননা তাঁর জন্মের বার্তা এখানে উপস্থিত।
আমরা যদি আজ এটি অনুসন্ধান করতে পারি কে সেই স্ত্রী লোকের মধ্যে দিয়ে আসা বংশ, তা হলে বুঝতে পারব যে, ঈশ্বর আসলেই মানবজাতিকে কি বার্তা দিচ্ছেন। যদি আমরা এটি বের করতে পারি যে সেই বংশ শয়তানের মাথা পিষে দিবে এর অর্থ কি? তা হলে ঈশ্বরের উদ্ধার পরিকল্পনা বোঝা যাবে। একথাটির মধ্য রুপক কোন অর্থ নিহিত রয়েছে। বাইবেলের এই কথার অর্থ আমাদের বুঝতে হয়তো একটু কষ্ট হতে পারে, কিন্তু নিশ্চয়ই তা বুঝতে আদম ও হবার জন্য কঠিন ছিল না, অথবা শয়তানের জন্যও বোঝা কঠিন ছিল না। আমি মনে করি আদম এর অর্থ বুঝেছিলেন এবং সেই ঘোষিত বংশে বিশ্বাস এনেছিলেন এবং নিজ পাপের পরিত্রাণ পেয়েছেন, এটি নিঃসন্দেহে বড়দিনের আনন্দ উৎসব উৎযাপন করা। কেননা সেই বংশ মাংসে মূর্তিমান হওয়ার পূর্বের সকল নবী ও তাদের অনুসারীরা এ বংশে বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে প্রতিজ্ঞা করে পরিত্রাণ লাভ করেছে।
ঈশ্বর তাঁর স্বর্গীয় মহিমা খুব ধীরে ধীরে ও ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করেন। এটিই ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশের নিয়ম। এক সাথে ঈশ্বর তাঁর সকল নিঘুর্তত্ত¦ প্রকাশ করলে তা মানুষের পক্ষে গ্রহন করা কষ্টকর হবে। ধাপে ধাপে তিনি প্রকাশ করেন একটু একটু করে। সে চিন্তা মাথায় রেখেই আসুন আমরা আব্রাহামকে জানার চেষ্টা করি।
আদিপুস্তক ১২:৭ তখন কনানীয়রা সেই দেশে বাস করছিল, ‘পরে সদাপ্রভু অব্রাহামকে দর্শন দিয়া কহিলেন, আমি তোমার বংশকে এই দেশ দিব; কিছু দিন পরে ঈশ্বর আব্রাহামের কাছে এ ওয়াদা সাথে নতুন কিছু যুক্ত করে বলেন, আদিপুস্তক ১৩:১৫ কেননা এই যে সমস্ত দেশ তুমি দেখিতে পাইতেছ, ইহা আমি তোমাকে ও যুগে যুগে তোমার বংশকে দিব।’
এখন প্রশ্ন হলো কে এই আব্রাহামের বংশ? তাৎক্ষণিক ভাবে ঈসাহাক। কিন্তু এর একটি দূরবর্তী অর্থ ও পরিপূর্ণতা রয়েছে। এটি এক ভাববানী।
পবিত্র বাইবেলের নতুন নিয়ম থেকে আমরা প্রধানতঃ দুটো প্রমাণ দ্বারা বলা যেতে পারে যে স্ত্রী লোকের বা হবার সে বংশ বা আব্রাহামের বংশ যীশু খ্রীষ্টকে বুঝানো হয়েছে।
প্রথমত ‘কিন্তু কাল সম্পূর্ণ হইলে ঈশ্বর আপনার নিকট হইতে আপন পুত্রকে প্রেরণ করিলেন; তিনি স্ত্রীজাত, ব্যবস্থার অধীনে জাত হইলেন। এ সেই স্ত্রী লোকের বংশ যিনি শয়তানের মাথাকে ভেংঙ্গে দিয়েছেন।’ গালাতীয় ৪:৪ পদ।
দ্বিতীয়ত ‘ভাল, আব্রাহামের প্রতি ও তাঁহার বংশের প্রতি প্রতিজ্ঞা সকল উক্ত হইয়াছিল। তিনি বহুবচনে ‘আর বংশ সকলের প্রতি’ না বলিয়া, একবচনে বলেন, ‘আর তোমার বংশের প্রতি’; সেই বংশ খ্রীষ্ট।’ গালাতীয় ৩:১৬ পদ।
তাহলে আমরা দেখতে পায় ঈশ্বর শয়তানকে অভিশাপ দেওয়ার সময়ে যীশুর কথায় বলেছেন। এখন প্রশ্ন যীশু কিভাবে শয়তানের মাথা ভাঙ্গবেন। মাথা ভাঙ্গা মানে শয়তানের শক্তি, কতৃত্বকে শেষ করে দেয়া। যীশু ক্রুশের মধ্য দিয়ে তা করেন, এখন বাইবেলের দুটি পদ আমরা দেখব-
‘তৎপরে পরিণাম হইবে; তখন তিনি সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিলে পর পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন। কেননা যাবৎ তিনি “সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন, তাঁহাকে রাজত্ব করিতেই হইবে।’ ১ করি ১৫:২৪-২৫ পদ।
‘আর আধিপত্য ও কর্ত্তৃত্ব সকল দূর করিয়া দিয়া ক্রুশেই সেই সকলের উপরে বিজয়-যাত্রা করিয়া তাহাদিগকে স্পষ্টরূপে দেখাইয়া দিলেন।’ কলষীয় ২:১৫ পদ।
এই পৃথিবীর সকল সৃষ্টির উপরে ঈশ্বর মানুষকে কতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু শয়তান মানুষকে পরাজিত করে পৃথিবীর কতৃত্ব নিয়েছিল। যীশু খ্রীষ্ট শয়তানকে পরাজিত করে দুনিয়ার পাপি মানুষের পক্ষে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন। যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু শয়তানের পরাজয়। মারা গিয়ে যে তিনি পরাজিত হননি, তা তিনদিন পরে পরাজিত হয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। আবার স্বর্গে আরোহণের আগে তিনি বলেছেন যে স্বর্গ ও পৃথিবীর সকল কতৃত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি যে পরাজিত নন, তা তাঁর দ্বিতীয় আগমনে আবার প্রমাণিত হবে। তখন তিনি শয়তানকে একেবারে বন্ধি করবেন। তাঁর দ্বিতীয় আগমন খুবই নিকটবর্তী। পাপ মৃত্যু শয়তান আর থাকবে না। এখন শয়তান কাজ করলেও তার পুরো ক্ষমতা নেই। শয়তান যীশুর শিষ্যদেরকে চাইলেই আগের মত তার দাস বানাতে পারে না। আমরা আর তার বন্ধিত্বে নেই। আমরা শয়তানের দাস নই। যীশু খ্রীষ্টের এই পৃথিবীতে আগমন ঈশ্বরের প্রথম থেকে পরিকল্পনার অংশ। কেননা সর্ব যুগে পরিত্রাণের জন্য যীশু খ্রীষ্টেতে বিশ্বাস দরকার কারণ যীশু খ্রীষ্টেতে সকল পূর্ণতা আমাদের দেওয়া হয়েছে। কেননা যীশু খ্রীষ্ট সকল আধিপত্য ও কতৃত্বের মস্তক। আমরা যীশুর বিজয়ের অংশীদার, তাঁর সমস্ত গৌরবের অংশীদার। আমরা ইতিমধ্যেই বিজয়ী। এই পৃথিবীর অন্ধকারের আক্রমণকে আমাদের ভয় করার কিছু নেই। যীশু রাজাদের রাজা, কর্তাদের কর্তা। একমাত্র তাঁর নামেই আমরা শয়তানের উপরে কতৃত্ব দেখাতে পারি।
এ পৃথিবীতে খ্রীষ্টান জীবন মানে যীশুর সাথে বিজয়ের জীবন যাপন করা। সকল মন্দতা, পাপের উপরে, আসুন আমরা যীশু নামে কতৃত্ব করি। কেননা যীশু বলেছেন যুগান্ত পর্যন্ত আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকব। তিনিই সকলের অগ্রগণ্য।
অতএব, ঈশ্বরের সমুদয় ভাববানী যীশু খ্রীষ্টের মাংসে মূর্তিমান হওয়ার দ্বারা পূর্ণতা পাওয়া শুরু করেছেন এটিই আজ বড়দিনের আনন্দ, যা সুসমাচারে প্রকাশিত হয়েছে।
‘তখন দূত তাহাদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না, কেননা দেখ, আমি তোমাদিগকে মহানন্দের সুসমাচার জানাইতেছি; সেই আনন্দ সমুদয় লোকেরই হইবে।’ লুক ২:১০ পদ।
লেখক: সংবাদকর্মী ও রক ভ্যালি মিনিস্ট্রির শিক্ষার্থী
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh