উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে স্বাভাবিক কর্মজীবন যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে নানামুখী সমস্যা। বিশেষকরে, কৃষকরা পড়েছেন বিপদে। দেশের শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী বগুড়া জেলার উন্নতমানের আলু জেলা ও দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। প্রায় এক যুগ ধরে এ জেলার আলু রপ্তানি হচ্ছে এশিয়ার শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। উৎপাদিত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বগুড়ার চাষিরা। কিন্তু সম্প্রতি শীতের তীব্রতার কারণে এই জেলার আলুচাষীরা পড়েছেন দারুণ বেকায়দায়।
জানা যায়, এবার মৌসুমের শুরুতেই জেলার পাইকারি বাজারে আলুর পাইকারদের দেখা মিলছে না। দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে প্রচুর আলু উঠলেও শীত বাড়ার কারণে বাইরের পাইকাররা হাটে আসছেন না। এতেই আলুর দরপতন ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগে যে আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, সেই আলু এখন মাঠে কৃষক পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ছয় টাকা। পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ২০ পয়সা কেজি দরে এই আলু বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই জাতের আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় আট টাকা।
আলু নিয়ে চাষীরা উভয় সংকট অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। একদিকে বাজারে দাম নেই, অন্যদিকে উৎপাদিত আলু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। যেখানে আলু সংরক্ষণ করা হবে, সেই কোল্ড স্টোরেজে এখনো গত বছরের আলু আছে। দাম কম হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সেই আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বাজারে নতুন আলু দাম হারাচ্ছে।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত মৌসুমে বগুড়া জেলায় আলুর ফলন হয়েছিল প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আলু উৎপাদন।
আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে চাষীরা খুবই কম দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদিত আলু বাজারে বিক্রি করে কৃষকের উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না। তাঁরা নিজেরাও সংরক্ষণ করতে পারছেন না। কারণ আলু সংরক্ষণের বিশেষ পদ্ধতি আছে। আলু সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট মাত্রার আলো ও তাপ, যা স্বাভাবিকভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন কোল্ড স্টোরেজ।
এটি স্পষ্ট যে, এমন অবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে চাষিরা শুধু আলু নয়, যেকোনো ফসল উৎপাদনেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তখন আবার নির্ভর করতে হবে আমদানির ওপর। চাষিদের উৎপাদনে যেমন উৎসাহ দিতে হবে, তেমনি তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণেরও যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের কৃষিপণ্যের বিপণন নিয়ে বরাবরই কৃষকদের বিপাকে পড়তে হয়। কোন এলাকায় কোন পণ্য বেশি উৎপাদন হয়, সেই কৃষিপণ্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়াজাত করার ব্যব¯’া নিলে কৃষক উপকৃত হবে। সরকার এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নিবে এটাই প্রত্যাশা।