সজিনা বিক্রির জন্য বাজারে যাচ্ছেন এক চাষী। ছবি: সংবাদ সারাবেলা
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বেড়েছে সজিনা চাষ। জুম বাগানের কিংবা বাড়ির ধারেও গাছ লাগিয়ে সজিনা চাষ করেছেন চিম্বুক সড়কের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লাঙিং ম্রো (৪০)।
নোয়া পাড়া চাষী লাঙিং ম্রো বলেন, জুমে ও বাড়ি আঙ্গিনায় জুড়ে ৫-৬ বছর আগে ১ শত ৫০টি গাছ লাগিয়ে ছিলাম। আমি এর আগে জুমের পাশাপাশি আম,আনারসসহ বিভিন্ন ফলমূলের চাষ করতাম জুম পাহাড়ের। কষ্ট হলেও তেমন লাভ হত নাহ সেসব সবজি থেকে। তবে সজনী চাষ করে এক প্রতিবেশী প্রায় সময় সজনী বিক্রি করত ও বেশ লাভবান হত। তার থেকে সজনী চাষের সম্পর্কে ধারনা নিয়ে এখন বাড়ির ধারে ও জুমের মধ্যে গাছ লাগিয়ে মোটামুটি লাভ হচ্ছে।
লাঙিং ম্রো দেওয়ার তথ্য মতে, চিম্বুক সড়কের নোয়া পাড়ায় গ্রামের ১০ হতে ১৫টি পরিবারের সজিনা গাছ আছে। প্রত্যেক পরিবারের সর্বনিম্ন ২০-৩০ টি সজিনা গাছ থাকে। গত বছরের সজনী দাম ছিল প্রতি মণ ৫ হাজার টাকা আর এবছর কিছুটা দাম বাড়িয়ে প্রতি মণ ৫হাজার ২শত টাকা। সে সজনী ছেড়ার পর বাগানের দেখতে আসার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন চাষীরা।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, গেল ২০২০-২১ অর্থ বছরে বান্দরবনে জেলায় সজিনা আবাদে চাষ ছিল ২২ হেক্টর। চলতি বছরের ২৫ হেক্টর জায়গায় জুড়ে সজিনা আবাদ হয়েছে। অন্যদিকে, গত বছর বান্দরবনের সজিনা উৎপাদন হয়েছিল ৪৪ মেট্রিকটন, চলতি বছরে ৭৫ মেট্রিকটন উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাইমি পাড়া, ফারুক পাড়া, গেসমনি পাড়া, ম্রোলং পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, বসন্ত পাড়া, নোয়া পাড়াসহ চিম্বুক সড়ক জুড়ের সজিনা গাছের সমারোহ। জুমের বাগানেও সারিবদ্ধভাবে সজিনা গাছ লাগিয়েছেন চাষিরা। এ মৌসুমে পৌঁছালে ধুম পড়ে সজিনা ছেড়া শুরু। একজনের একটি গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে এসে অন্যজন বড় করে বান দিচ্ছে। ও উত্তপ্ত রোদ পড়লেও তবুও লাভের আশায় হাসিমুখে ছিঁড়ে যাচ্ছেন চাষীরা। এতে বিভিন্ন এলাকায় জুম চাষীরা সজিনা চাষে হয়ে উঠেছেন আগ্রহী।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম কথা হয়। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, পার্বত্য জেলায় বান্দরবনে সজিনা আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আম, আনারস, জুম পাশাপাশি সজিনা চাষের আাগ্রহ বেড়েছে পাহাড়িদের। পাহাড়ের পাদদেশে আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় উঁচু উঁচু পাহাড়ি এলাকায় দিন দিন সজিনা চাষের আবাদ বৃদ্ধি হচ্ছে। সজিনা গাছের তেমন পরিচর্চা করা লাগেনা। শুধু লাগিয়ে দিলেই হয়। তবে পাহাড়ি এলাকায় তুলনায় সমতল এলাকায় কম উৎপাদন লক্ষ্য করা যায়।
চিম্বুক সড়কের খুচরা ব্যবসায়ী মমিন ও আব্দুল মাবুদ এই প্রতিবেদককে জানান, চিম্বুক সড়কে ও শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে চাষীদের কাজ থেকে সজনী কিনে নিয়ে সব স্থান থেকে সংগ্রহ করে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়। প্রতি গাড়িতে প্রায় একশত মণ করে শনিবারে হলে বিক্রির জন্য শহরস্থলে পাঠানো হয়।
তারা আরও জানান, ৩০বছর ধরে চিম্বুক হতে নীলগিরি এলাকায় মৌসুম সময়ের বিভিন্ন ধরনের সবজি ব্যবসা করে আসছেন। এলাকার সবজী চাষীদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এবং কারোর সহিত বৈরী সম্পর্ক নেই। সেসব এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন লেং নোই ম্রো, তুম্পাও ম্রো সহ ৮-১০জন নারী শ্রমিক। সজিনা ডাটা সংগ্রহ সহ বিভিন্ন কাজ করে প্রতিজনে দৈনিক ৫শত টাকা করে মজুরী পেয়ে থাকেন।
বান্দরবান কৃষি গবেষণা তথ্য মতে, সজিনা ডাঁটা শুধু সবজি নয় অনবদ্য ভেষজ ও বটে। সাধারণত সজিনায় যেগুলি পাওয়া যায়, যেমন -কমলা লেবুর সমপরিমাণ ভিটামিন সি, গাজরের চেয়ে ১.৩ গুণ বেশি ভিটামিন-এ, কলার চেয়ে ১.৫গুণ বেশি পটাশিয়াম,আমন্ড বাদামের চেয়ে ৩গুণ বেশি ম্যাগনেসিয়াম, দুধের চেয়ে ৩.৫গুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে বলে জানা যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh