ছবিঃ সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী
ফলের রাজা আম। স্বাদে, গন্ধে, মিষ্টতায় ও পুষ্টিতে যা অতুলনীয়। আমাদের দেশে বিশেষত গ্রীষ্মকালে ফলপ্রেমীদের সর্বোচ্চ চাহিদার মধ্যে থাকে আম। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সূত্রমতে এদেশে প্রতিবছর দেশে প্রায় এক মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়। আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। তবে উৎপাদন পরবর্তী বাজারজাতকরণ ও মিষ্টতা নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমের স্বাদ গ্রহণ না করে মিষ্টতা নির্ণয় করা অনুমান ব্যতীত অসম্ভব।
তাইতো পৃথিবীর অনেক দেশে মিষ্টতার পার্থক্যের ভিত্তিতে আম বাজারজাত করা হলেও আমাদের দেশে হয়না। এমতাবস্থায় অধ্বংসাত্মক পদ্ধতিতে ‘ই-নোজ’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমের মিষ্টতা ও কঠিনতা নির্ণয়ের গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
দেশে প্রথমবারের মতো ‘ই-নোজ’ এবং ‘এমকিউ সেন্সর’ ব্যবহার করে এই সফলতা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রধান গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান। উদ্ভাবিত যন্ত্রটি ব্যবহার করে কোনো প্রকার স্পর্শ ছাড়াই নির্ণয় করা যাবে আমের মিষ্টতা এবং কঠিনতা। তাছাড়া অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মিষ্টতার পার্থক্যের ভিত্তিতে আম বাজারজাত করা যাবে।
ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘এমকিউ-ভিত্তিক ইলেক্ট্রনিক নোজ (ই-নোজ) ব্যবহার করে আমের গুণমানের পূর্বাভাস’ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জুলাই থেকে গবেষণার কাজ শুরু হয়। এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ লক্ষ টাকা অর্থায়ন করেছে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের একটি গবেষণাপত্র 'কিউ ওয়ান' জার্নাল (জার্নাল তালিকায় শীর্ষ ২৫ শতাংশ) ‘স্মার্ট এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি’ এ প্রকাশিত হয়েছ।
বর্তমানে কৃষক ও ভোক্তা সবাই আম হাতে চেপে বা চোখের আন্দাজে জাত অনুযায়ী মিষ্টতা এবং কঠিনতা অনুমান করেন। একাধিকবার এমন চাপ প্রয়োগে আমের গুণাগুণ খুব দ্রুতই নষ্ট হয়। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ও কোনো রকম স্পর্শ ব্যতীত আমের মিষ্টতা ও কঠিনতা নির্ণয়ের জন্য গবেষণার কাজ শুরু হয়।
তিনি আরো বলেন, ই-নোজ বা ইলেকট্রনিক নোজ মূলত আম থেকে বের হওয়া ঘ্রাণ বা গ্যাসের মধ্যে অবস্থিত মিষ্টতা নির্ধারক পদার্থের পরিমাণ সেন্সরের মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারে। একটি আম ই-নোজের চেম্বারে রেখে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা কতটুকু মিষ্টি বা শক্ত তা নির্ধারণ করে দিবে। খুবই কম খরচে ই-নোজ ব্যবহার করে আমের মিষ্টতা নির্ণয় করা যাবে। গাছ থেকে আম সংগ্রহের পর ঠিক কতদিনের মধ্যে পেকে যেতে পারে তাও অনুমান করা যাবে। তাছাড়া একটি আম কত দ্রুত নরম হয়ে যাচ্ছে বা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা তা আগে থেকেই বুঝা যাবে।
গবেষণা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী কাজী সাকিবুর রহমান বলেন, উন্নত দেশগুলোতে মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতা বজায় রাখতে খাদ্যের পুষ্টি উপাদানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মাত্রা পরীক্ষা করে বাজারে প্রদর্শন করা হয়। সে হিসেবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের প্রয়োজনীয় মাত্রার উপাদান সমৃদ্ধ খাবার ক্রয় করতে পারেন। ই-নোজ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দেশেও এখন মিষ্টতা অনুযায়ী আমসহ অন্যান্য ফলের শ্রেণিবিভাগ করা যাবে। এতে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মিষ্টতার ভিত্তিতে ফল খেতে পারবেন।
স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এম মিরাজুস সালেহিন বলেন, এই যন্ত্রটিতে দুটি চেম্বার, একটি আর্ডিউনো উনো, একটি রাস্পবেরি পাই ৪, স্বল্পমূল্যের এমকিউ সেন্সর, ১২ ভোল্টের ব্যাটারি এবং একটি ব্লোয়ার ফ্যান ব্যবহার করা হয়েছে। মিষ্টতা নির্ণয় করতে একটি চেম্বারে আম স্থাপন করে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দেওয়া হয়। আম থেকে ঘ্রাণ সংবলিত গ্যাস বের হয়ে একটি পাইপের মাধ্যমে অন্য চেম্বারে যায়। সেখানে যুক্ত থাকা সেন্সরের কাজ সমাপ্ত হলে একটি ব্লোয়ার ফ্যানের মাধ্যমে সে গ্যাস বাইরে বের করে দেওয়া হয়। সেন্সরের সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণের জন্য পাইথন প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষণাটি মাঠ পর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে আমের বাজার ও ভোক্তারা অনেক উপকৃত হবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh