যশোরের ঝিকরগাছায় ব্যপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী পার্থেনিয়াম। যা মানুষ ও কৃষির জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। পার্থেনিয়াম সূর্যমুখী উপজাতির উদ্ভিদ যার জন্ম মেক্সিকোতে কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্বত্র ভয়ঙ্কর বিপদজনক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পার্থেনিয়াম গাছের জীবনকাল তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়।
পার্থেনিয়ামের একটি গাছ চার হাজার থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে। এর বীজ এতই ছোট যে সাধারণত গবাদিপশুর গোবর গাড়ির চাকা, জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের পানি ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে।
পার্থেনিয়ামে আছে sesquiterpene Lactones নামক টক্সিন বা বিষ যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও ক্ষতিকর। পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমে যায়। পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদি পশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজম সহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে হাত পা চুলকায়, লাল হয়ে যায়, এবং পরে ত্বকের ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথা ব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুক্তে পারে। ১০ মিটার দুর থেকে এই ফুলের রেণু মানুষের এলার্জি, হাপানি, চর্মরোগ, ব্রঙ্কাইটিস সৃষ্টি হতে পারে। এই আগাছা ৭০ শতাংশ মানুষের চর্মরোগ, ৩০ শতাংশ মানুষের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়াম জনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পার্থেনিয়াম আগাছা ধ্বংস করার উপায়
পার্থেনিয়াম গাছের গায়ে কেরোসিন স্প্রে করলে পার্থেনিয়াম খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। তবে এতে অনেক অসুবিধা আছে যেমন পদ্ধতিটি ব্যয়সাপেক্ষ, কেরোসিন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে পানি নষ্ট হয়।তাই খুব কম খরচে এটি বিনাশ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ৪/৫ লিটার পানিতে ১ কেজি নুন ভালো করে মিশিয়ে গাছের পাতায় ও গোড়ায় স্প্রে করলে ২ দিনের ভিতর এ আগাছা মারা যায়।
সাবধানতা অবলম্বন
১, পার্থেনিয়াম গাছে কোনো ভাবেই হত দিবেন আর বাচ্চাদের থেকে দুরে রাখুন
২, পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযানে সবসময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে থাকবেন, এছাড়া ফুল হাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরে থাকা ভালো।
৩, সাফাইয়ের পর জামাকাপড় ভালো করে ধুয়ে ফেলবন ও নিজে স্নান করে বাড়িতে ঢুকবেন।
আমাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবিস্তার করছে, তাই সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেদের চারপাশ পার্থেনিয়াম মুক্ত রাখুন, এই বিষয়ে সচেতনতা ছড়ান ও নিজেরা সুস্থ থাকুন।