ফেনীর সোনাগাজীতে করোনার দূর্যোগ ও প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যেও উপজেলার প্রায় ৬০টি এলাকায় সরিষার ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের দুশ্চিন্তা দুর হয়ে বাম্পার ফলন হওয়ায় আনন্দিত প্রান্তিক সরিষা চাষিরা। এবার উপজেলার নবাবপুর ও চর মজলিশপুর ইউনিয়নে সরিষার চাষ বেশি হয়েছে।
উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠে ফোটা সরিষার ফুল সবার নজর কেড়েছে। মাঠজুড়ে সরিষার সমরাজ্যে হলুদ ফুলের ঘ্রাণ ও মধু খেতে মৌমাছিসহ বিভিন্ন প্রজাতির কীট-পতঙ্গের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সুমধুর সুরে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সরিষার মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় এযেন প্রকৃতির ঢেলে দেওয়া চোখ ধাধানো হলুদের সমারোহ। চাষিরা জানায়, এ উপজেলায় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস হচ্ছে সরিষা চাষের উপযুক্ত সময়। এছাড়া চলতি মাসের শেষের দিকে চাষিরা সরিষার ফসল ঘরে তোলে নিতে শুরু করবেন। এখন অনেক এলাকায় সরিষার খেত ফুলে ফুলে ও সরিষার দানায় ভরে রয়েছে। এবার সরিষা চাষে আশানুরুপ ফলন হওয়ায় কৃষকরা অনেক খুশি হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ৫৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি জমিতে সরিষার প্রদর্শনী করা হয়েছে। দিনদিন উপজেলায় সরিষার আবাদ বেড়েই চলেছে। ২০২০সালে এ উপজেলায় ৩৫৫ হেক্টর এবং গত বছর ৪৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষার ক্ষেতে ফুল ফোটায় ও দানা দেখা যাওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কর্মকর্তা ও কৃষকরা। সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের মাঠ সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। সরিষার দানা দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হয়েছে। মৌমাছির দল ফুলের মধু আহরণের জন্য আনাগোনা করছে। অনেককে সরিষার ক্ষেতে হলুদের সমরাজ্যে নিজেকে ক্যামেরা বন্দি করতে ছবি তুলতে দেখা গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে সরিষার চাষ শুরু হয়। প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিনমাস পর কৃষকেরা ফলন ঘরে তোলে নিতে পারেন। ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা লাভ জনক হওয়ায় কৃষকেরা দিন দিন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁরা বলেন, উচু জমি সরিষা চাষের জন্য উপযুক্ত ও ভালো স্থান। প্রথমে জমিতে হালকা ভাবে চাষ দিয়ে সরিষার বীজ বপন করতে হয়। এরপর দু-একবার ঔষধ ও পোকা-মাকড় দমণকারী কীটনাশক দিলেই সহজে ফলন ভালো হয়। তুলনামুলক কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর এলাকার কৃষক মো. এমরানুল হক বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সার বীজ ও পরামর্শসহ বিভিন্ন ধরণের সহায়তা নিয়ে ৪০ শতক জমিতে তিনি সরিষার আবাদ করেছেন। কৃষি অফিস তাঁর জমিতে একটি প্রদর্শনীও করেছে। বছরের শুরুতে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় পরিশ্রম একটু বেশি করতে হয়েছে। তাঁর পরও ফলন ভালো হওয়ায় তিনি ভালো লাভ করার আশা প্রকাশ করেন। উপজেলা সুজাপুর এলাকার কৃষক নুর আলম বলেন, ধানের চেয়ে সরিষা চাষে পরিশ্রম ও খচর কম লাগে। কিন্তু ধানের চেয়ে সরিষায় লাভ বেশি। তিনি এবার ৩৫শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৪৫০জন তালিকাভুক্ত কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারী ভাবে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সরিষা চাষে কৃষকদের নিবিড় পরিচর্যা ও আন্তরিকতার কারণে এবার সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় অনেকগুলো অনাবাদি জমিকেও সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, করোনার দূর্যোগ ও অসময়ে সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের অনেক কষ্টের পর সরিষারগাছগুলো বেড়ে উঠেছে। চলতি মাসের শেষ সময় থেকে সরিষার ফলন তাঁরা ঘরে তুলতে শুরু করবেন।
তিনি বলেন, গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৫ হেক্টর। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার ৪৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এবার সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩০ হেক্টর। কিন্তু চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরও সরিষা চাষ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh