কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক ও পাশ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা মহালে শুটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে। সাগর পাড়ের এই সব শুটকি মহাল দেশের অন্যতম প্রধান শুটকি তৈরির স্থান। এসব স্থান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ টনের অধিকসহ সপ্তাহ পর পর শুটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজারে শীতের আবহের শুর“তেই কাঁচা মাছকে রোদে শুকিয়ে বিষমুক্ত শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। পুরুষদের পাশা-পাশি তাদের বেশির ভাগই নারী। বর্ষা শেষে অক্টোবর থেকে শুর“ হয়ে শুটকি উৎপাদনের কাজ চলবে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত।
কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দরের পশ্চিমে সাগরতীরের নাজিরারটেক এলাকায় বিশাল মহালে শুটকি উৎপাদন চলছে। এছাড়া ও সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা হাঁসের চরে চলছে লবণ ও বিষমুক্ত শুটকি তৈরির কাজ। গভীর সাগর থেকে জেলেরা মাছ ধরে এনে জেলার বৃহত্তর শুটকি মহাল নাজিরারটেক এলাকার শুটকি মহালের ঘাটে ভিড়ে। ব্যবসায়িরা সেই মাছ কিনে ধুয়ে-মুছে শুটকি করার জন্য বাঁশের তৈরি মাচায় তুলে দেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ লইট্যা, ছুরি, পোপা, মাইট্যা, কামিলা, ফাইস্যা, রূপচান্দাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। দেশের সর্ববৃহৎ শুটকি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র কক্সবাজার শহরের সমুদ্র তীরবর্তী নাজিরারটেক শুটকি মহাল।
নাজিরার টেক,সোনাদিয়া,মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা শুটকি মহালে মাছ শুকানো কাজ পুরোদমে শুর“ হওয়াতে শুটকি মহালে নির্ভর করে যারা নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা আশায় নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিগত দিনের ক্ষতি পোষানোর স্বপ্নে বিভোর৷ এমন পরিস্থিতি থাকলে আগামী কয়েক মাসে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
তবে আবারও করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে কারণে তৈরিরকৃত শুটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ দিতে না পারলে ব্যবসায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান ব্যবসায়িরা। শহরের নাজিরার টেক শুটকি মহালে কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, শুটকি পল্লীর ওপর নির্ভর করে আমার সংসার। শুটকি মহালে কাজ বন্ধ হলে আমাদের সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন।
শুটকি ব্যবসায়িরা বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবারো শুটকি ব্যবসা চালু হলো। আশা করি, বিগত দিনের ব্যবসার ক্ষতিগুলো পূরণ করতে পারব- যদি সরকার লকডাউন না দিলে। এসব শুটকি মহালে রূপচাদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা ও নাইল্যামাছসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরি করা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকতা এএসএম খালেকুজ্জামান সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা বিশেষজাতের ছোট আকৃতির মাছগুলো দিয়ে শুটকি উৎপাদন করা হয়। এখানে উৎপাদিত শুটকি শুধু কক্সবাজারে নয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোরসহ সারাদেশের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে।