“মায়ের মতো আপন কেহ নাই” এ গানটির সত্যতা আবারো প্রমান করলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের লোহাইড় গ্রামের গৃহবধূ নাজনিন। লোহাইড় গ্রামের এক কৃষক পরিবারে তার বিয়ে হয় এবং তার কোল জুড়ে আসে একটি পূত্র সন্তান। শিশুটি একটু বড় হতেই প্রমাণ হয় সে শারীরিক প্রতিবন্ধি। প্রতিবন্ধি শিশু জন্ম দেয়ায় একমাত্র স্বামী ছাড়া পরিবারের অন্য সবাই নাজনিন ও তার সন্তানকে অবজ্ঞার চোখে দেখতো। বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়েও কোন উন্নতি হয়নি।
ডাক্তাররা জানিয়ে দেয় সে কোনদিনই হাটতে পারবে না। স্বামীর অভাব-অনটনের সংসার হওয়া সত্বেও সন্তানের সুস্থতার আশায় নাজনিন ঢাকাস্থ মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউটে গিয়ে তিন বছর প্রশিক্ষন গ্রহন করে। পরে তিনি ঢাকার আরো কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবন্ধি বিষয়ে প্রশিক্ষন শেষে ফিরে এসে নিজের সন্তানের পরিচর্যার পাশাপাশি উপজেলার বনগ্রামের মাটিয়া ব্রিজের পাশে দু-কক্ষের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে “মাতৃস্নেহ প্রতিবন্ধি উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
২০২০ সালে মাত্র ৫জন শিশু নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে এখানে ৮১ জন। বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধি শিশুকে সেবা দেয়া হচ্ছে সেখানে। নাজনিনের সাত বছরের শিশুটি এখন অন্যের সাহায্য ছাড়াই হাটতে পারে। অন্যান্য শিশুদের মায়ের সঙ্গে আলাপ করে জানাযায়, তাদের সন্তানদের মধ্যেও উন্নতির কিছুটা লক্ষন দেখা যাচ্ছে। নাজনিন জানান, তার গরীব কৃষক স্বামী প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা দেয়। তাই দিয়েই কোন রকমে সংস্থার খরচ নির্বাহ করেন।
শিশুদের ভালো সেবা দেয়ার জন্য অনেক আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, কিন্তু অর্থের অভাবে তা সংগ্রহ করতে পারছেননা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের রহমান রাশেদের কাছে আবেদন করলে তিনি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। সে টাকা দিয়ে প্রশিক্ষনের জন্য কয়েকটি যন্ত্র কিনেছেন। নাজনিন জানান, এতোগুলো শিশুকে একা সামাল দেয়া সম্ভব নয়। পারিশ্রমিক ছাড়াই আমার আপন দুই বোন তাকে সাহায্য করে। দানশীল ব্যক্তিরা, এলাকার জনগন এবং স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করলে এ সেবা কেন্দ্রটিকে তিনি আরও উন্নত করতে পারতেন।