ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে আসবে। ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় যাতায়াত করবে ২৫ হাজার মানুষ। জনসাধারণ এবং গাজীপুরে অবস্থিত জনসাধারণের ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজীকরণ করার লক্ষ্যে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বাস্তবায়নের কাজ চলছে। মূল প্রকল্প গাজীপুর থেকে শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অংশ উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে টঙ্গী চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত।
প্রকল্পের আওতায় ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক, ৬টি ফ্লাইওভার ও ২৫টি বিআরটি স্টেশনসহ মোট ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার করিডোর নির্মিত হবে। করিডোরে দুটি সংরক্ষিত বিআরটি লেন, চারটি মিক্সড ট্রাফিক লেন, দুটি অযান্ত্রিক লেন, পথচারীদের জন্য ফুটপাথের ব্যবস্থা থাকবে। বিআরটি করিডোরের উভয় পাশে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ৬৫টি সংযোগ সড়ক ইতোমধ্যে উন্নয়ন করা হয়েছে। মূল করিডোর ও সংযোগ সড়কগুলোর উভয় পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সংরক্ষিত লেনে নির্দিষ্ট সময় পরপর অধিক যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১২ মিটার দীর্ঘ স্ট্যান্ডার্ড এসি বাস চলাচল করবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য স্টেশনে লিফটের ব্যব¯’া থাকবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে ঢাকা ও গাজীপুর মহানগরীর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম বাসভিত্তিক আরামদায়ক গণপরিবহন। বিআরটি কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া নিশ্চিতভাবে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে পারবে। প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে।
গাজিপুর ঢঙ্গী এলাকার মানুষ প্রকল্পটি নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী। তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাস মালিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও পথচারীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে শুল্ক প্রদান করবে তার ফলে সরকারের অর্থনৈতিক পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে জাতীয় অর্থনীতি ও জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। ধারনা করা হচ্ছে যাতায়াতে সময় কম লাগার কারণে প্রতিটি বাস অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে পারবে।
গাজীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ঢাকায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মী হাসান কাজল সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, প্রকল্পটি জনগুরুত্বপূর্ণ। মানুষ দ্রুত কর্মস্থলে পৌছাতে পারলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করবে। যাত্রীরা অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত টাকা সরকারের রাজস্ব খাতকে শক্তিশালী করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে বিআরটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। ৪.৫ কিলোমিটার এলিভেটেড ফ্লাইওভার, সেতু; যার মধ্যে ৩.৫ কিলোমিটার ৬ লেন বিশিষ্ট এবং ১ কিলোমিটার ২ লেন বিশিষ্ট।
বাস্তবায়ন অগ্রগতি: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৫৯.৫৮%।
কম্পোনেন্ট অনুযায়ী অগ্রগতি: বিআরটি প্রকল্পের চলমান নির্মাণ কাজের কারণে আগামী বর্ষায় যেন কোনভাবেই জনদুর্ভোগ না হয় সে দিকে সর্বো”চ গুরুত্বারোপ করে ইতোমধ্যে প্রকল্পের যে সব স্থানে পাইলিং, গার্ডার স্থাপনসহ অন্যান্য নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং ভারী কনস্ট্রাকশন ইক্যুইপমেন্ট আর ব্যবহার হবে না এমন সব স্থানে রাস্তার প্রশস্তকরণের মাধ্যমে স্থায়ী কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, চায়না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কারণে কাজ তার গতি হারিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে সম্ভব কিনা সেটা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ৫% হারে কাজ শেষ করতে গেলেও সময় গিয়ে ঠেকবে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি সন্তোষজনক নয় বলে জানান তিনি।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট নিরসনে নেওয়া প্রকল্পটির কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করা উচিত। কেননা এই প্রকল্পের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হলে উন্নয়ন কাজে মানুষের আগ্রহ থাকে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজের গতি ও দেশের চলমান অন্যান্য প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এখনও অনেক অবকাঠামো নির্মাণ বাকি রয়ে গেছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি কাজের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ করতেই আড়াই বছর সময় লেগেছে। যার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
অন্যদিকে বিআরটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যস্ততম মহাসড়কে যান চলাচল সচল রেখে নির্মাণকাজ চালিয়ে নেওয়া একটি দুরূহ কাজ। ভূমি অধিগ্রহণ, ভূগর্ভস্থ ও ওভারহেড ইউটিলিটি স্থানান্তর এবং বিদ্যমান সড়কের অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়েছে। তা ছাড়া নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অপর্যাপ্ত অর্থ প্রবাহের কারণে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি অর্জন হয়নি। করোনার কারণে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পের অগ্রগতি বিঘ্নিত হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর নকশা প্রণয়ন, দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে পূর্তকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন কারণে প্রথম পর্যায়ে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ডিজাইন ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুতকরণ, পরামর্শক নিয়োগ, ডিজাইন প্রস্তুতকরণ ও অনুমোদন, বিডিং ডকুমেন্টস প্রস্তুতকরণ, মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঠিকাদার নিয়োগ ও সেবা ক্রয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০১৭ সাল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সর্বশেষ চতুর্থ পর্যায়ে ২০২৩ সালে বিআরটি সিস্টেম চালুকরণ সম্পন্ন করা হবে।
ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের (বিআরটি) বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে স্বস্তি ফিরবে এমনটাই বলছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh