নাম গোলগাছ হলেও দেখতে কিছুটা নারিকেল পাতার মতো।নোনাজলে জন্ম, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই নোনা। অথচ এর ডগা থেকে বেরিয়ে আসছে মিষ্টি রস। সেই রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। সুস্বাদু এই গুড়ের চাহিদাও ব্যাপক। মুখে নিলেই অভিজ্ঞরা বুঝতে পারেন এর স্বাদের ভিন্নতা।পাম গোত্রের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির এ উদ্ভিদটি সারিবদ্ব ঘন ঝোপের মত বেড়ে ওঠায় অনেকে একে নারিকেল গাছের প্রজাতিও মনে করেন।
সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় গোলগাছ একটি অর্থকারী সম্পদ। সাগরের জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহমান এলাকার বিভিন্ন নদী-খালের মোহনায় পলি জমে জেগে ওঠা চর এবং পাড়ে গোলগাছ জন্মাতে দেখা যায়। বন বিভাগ আফিস সূত্রে জানা যায়,বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, বরগুনার আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, ভোলা ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাসহ চরাঞ্চলে গোলগাছের বাগান রয়েছে।এসব এলাকার পলিযুক্ত মাটি, মৌসুম ভিত্তিক নোনা পানি এবং অবাধ পানির প্রবাহ গোলগাছ বেড়ে ওঠার জন্য সহায়ক।
গোলগাছের রস সংগ্রহকারীদের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় শিয়ালী। ভাল মানের রস অহরনের জন্য শিয়ালীরা কার্তিক মাসের শুরুতেই হৃষ্টপুষ্ট ছড়াটি রেখে ফল সহ বাকী অংশটা কেটে ফেলে। বিশেষ পদ্বতিতে রস সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। দিনে দুবার কেটে রস সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রীহিত রস অধিক তাপে উনুনে ফুটিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। অতি মিষ্টি এই গুড় খুবই প্রিয়। এক সময় এ গুড়ের পরিচিতি এলাকার তেমন থাকলেও এখন এটি বেশ বান্যিজিক প্রসারতা লাভ করেছে। এখন বিভিন্ন হাটে-বাজারে এ গুড় পাওয়া যাচ্ছে। খেজুর বা আখের গুড়ের মত কেজিতে বিক্রি হলেও গোলের গুড় দর বিক্রি একটু বেশি।
আর সেই গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলছে এলাকার অনেক গোল চাষির জীবন-জীবিকা।আখের রসে যেখানে শতকরা ১৫-২০ ভাগ শর্করা থাকে সেখানে গোল গাছের গুড়ে শতকরা ১৩-১৮ ভাগ শর্করা থাকে। এ রসের পিঠা বা পায়েস অতি মুখরোচোখ হয়। অনেকে এর রস দিয়ে তাড়ি (এলকোহল) তৈরি করে।
প্রতি বছর শীত মৌসুমে প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রায় শতাধিক কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়ে এ গাছের রস সংগ্রহ করতে।কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে কৃষকরা প্রতিদিন সকাল হলেই রস সংগ্রহ করতে ছুটে যায় গোলবাগানে। আর ব্যস্ত হয়ে পড়ে ওইসব কৃষক পরিবারের গৃহবধূরা। কেউ কলস কিংবা বালতি নিয়ে যাচ্ছে। অবার কেউ রস ভর্তি কলস বালতি নিয়ে বাড়ি ফিরছে। কেউ কেউ সংগ্রহীত রস বাড়ির উঠানে নিয়ে আসছেন। আর সেই রস গৃহবধূরা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেঁকে ঢোঙ্গায় রাখছেন। এরপর তারা তাফালে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রস দিয়ে তৈরি করেন গুড় বা মিঠা।
ঐ গ্রামের সুনিতি রানী বলেন, বিয়ের পর থেকে গোলের রস দিয়ে গুড় তৌর করছি। আগে অনেক বেশি গুড় হতো। এখন কমে গেছে। অপর এক গৃহবধূ বিথীকা রানী বলেন,এ গুড় বিক্রি করেই চলে আমাদের সংসার এবং ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া।
নবীপুর গ্রামের গোল গাছ চাষি নিঠুর হাওলাদার বলেন, তার বাগান থেকে প্রতিদিন ৪ কলস রস বের হয়। এতে মোট ১৩ কেজি গুড় আসে। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে উঠে কলস নিয়ে বাগানে যেতে হয়। এরপর প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে আনতে হয়। অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু হয়ে চৈত্র মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করেন তিনি এবং এ সংগৃহীত রস'র উপার্জনের মধ্যে তার পুরো পরিবার নির্ভরশীল।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, এ উপজেলার চাকামইয়া, নীলগঞ্জ ও টিয়াখালীর ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গোলগাছের বীজ রোপণ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি এবং এ উপজেলার গোল চাষিদের জন্য আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh