লক্ষ্মীপুরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে রায়পুর উপজেলার মেঘনা পাড়ের ভাসমান জেলেরা (মানতা সম্প্রদায়)। ঠান্ডায় কাঁপছে পুরো সম্প্রদায়টি। শীতের কারণে রাতে তাদের ঘুমাতে কষ্ট হয়। গত ৭ দিন ধরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না তারা।
প্রায় ১০ দিন আগেও রাত ১১টা পর্যন্ত বাজারে জনসাধারণের চলাচল লক্ষণীয় ছিল। কিন্তু এখন রাত ৮টা বাজতেই বাজারশূন্য হয়ে পড়ে। শীত থেকে বাঁচতে সন্ধ্যার পরই অধিকাংশরাই বাসা-বাড়িতে অবস্থান নেয়। এবার লক্ষ্মীপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রিতে (সূত্র আবহাওয়া ভিত্তিক ওয়েবসাইট) নেমেছে। নদী এলাকায় গিয়েও শীতের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে।
মানতা সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নৌকাতেই সংগ্রাম করে তাদের জীবন কাটে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তারা নৌকা থেকে অন্য কোথাও যায় না। সম্প্রদায়টির পুরুষ সদস্যরা নানান কারণে স্থানীয়-হাট বাজারে গেলেও নারীরা নৌকাতেই থাকে। একটি শিশুর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নৌকাতেই কাটে।
কথা হয় সুফিয়া আছমা আক্তার ও জলিল মাঝি সহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, তারা কখনও জমিতে বসবাস করেনি। জন্মের পর থেকেই তারা নৌকাতেই বসবাস করে আসছেন। ঘর-বাড়িতে বসবাস করার আনন্দও কখনও তারা পায়নি। তাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সবারই একই অবস্থা। বর্ষাতে বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ, গ্রীষ্মের খরতাপে রৌদ্রেও পুড়তে হয় তাদের। শীতের তীব্রতা তাদের চেয়ে অন্যদের তেমন গায়ে লাগে না। নদী থেকে ভেসে আসা বাতাস যেন বরফের মতো ঠান্ডা। এ বাতাসে পুরো শরীরে কাঁপন সৃষ্টি হয়। গত বছরও অনেকই তাদের পাতলা কম্বল দিয়ে গেছে। কিন্তু এবার শীতের তীব্রতা বাড়লেও কেউই তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি।
তারা আরো বলেন সরকারের সহযোগিতা তারা সব সময় পেয়ে আসছে। এবার শীত বেশি পড়ছে। গতবার সরকারি কম্বল ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো শীতবস্ত্র দিয়েছে। কিন্তু এবার কেউই তাদের পাশে নেই। শীতের কারণেই জেলেরা নদীতে যাচ্ছে না।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান কাউসার বলেন, খুব শিগগিরই সরকারি সহায়তা নিয়ে মানতা সম্প্রদায়ের কাছে যাবো। তাদের মাঝে চাল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময়ই তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়।