ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
মৌলভীবাজার জেলায় গ্রামীণ সড়কগুলোর একেবারে বেহাল অবস্থা। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে ভাঙাচোরা আর খানাখন্দ ভরা। কয়েক বছর যাবত এসব সড়ক সংস্কার কিংবা মেরামত করেনি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। একযোগ আগেও যে সড়কগুলো ছিলো পিচঢালা মসৃণ। এখন বেশিরভাগ সড়কে ভাঙাচোরা আর ক্ষতচিহ্ন। অনেক জায়গায় ইট-সুড়কি পর্যন্ত উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। ভাঙাচোরা সড়কদিয়ে কৃষি পণ্য ও শীতকালীন শাক-সবজি সহ পণ্য পরিবহনে বেড়েছে ব্যায়। সড়কগুলো মেরামতেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কার্যক্রর উদ্যেগ দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছেনা।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী, বৃহত্তর সিলেটের মাটি-মানুষের নেতা মরহুম এম সাইফুর রহমান সিলেট বিভাগ সহ মৌলভীবাজার জেলার উন্নয়নে মনযোগ দেন। সরাকারি অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ওই সময়ে পুরো জেলায় গ্রামীণ জনপদের রাস্তা ঘাটের অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেন। তাঁর হাত ধরেই গ্রামীণ অবকাঠামোর বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল। পরবর্তীতে জেলা সদর ও রাজনগরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন বড় ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও গ্রামীণ জনপদের সড়কগুলোর ছিটেফুটো উন্নয়ন করেনি।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সদরের নাজিরাবাদ ইউনিয়নের দিঘিরপাড় হয়ে গোবিন্দপুর সড়কটির বিভিন্ন অংশ একেবারেই ভাঙাচোরা, গিয়াসনগর ইউনিয়নের মাড়কোনা থেকে গোবিন্দপুর সড়কটিও চলাচলের একদম অনুপযোগী, দিঘিরপাড় বাজার থেকে আমতৈল ইউনিয়ন হয়ে কাগাবালা সড়কটিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। কনকপুর ইউনিয়নের পুদিনাপুর সড়ক ও বুদ্ধিমন্তপুর বাজার থেকে ভাদগাঁও সড়কের অবস্থাও নাজুক ও চলাচলের অযোগ্য। ওই সড়কের কার্পেটিং সহ অনেক জায়গায় মাটির নিচের পাথর পর্যন্ত উঠে গেছে। মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গোয়ালাবাড়ী সড়ক, জগন্নাথপুর গ্রামের কাজিবাড়ী সড়ক, অফিসবাজার সড়ক,গিয়াসনগর বাজার থেকে ইমামবাজার পর্যন্ত সড়কটি নি¤œমানের কাজ হওয়ার কারণে অল্প কিছুদিন পরই সড়কটির বিভিন্ন অংশে ভাঙাচোরা চিহ্ন চোখে পড়ে, কামালপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এসব সড়কে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে যানবাহন। এছাড়া কাগাবালা ইউনিয়ন, আখাইলকুড়া ইউনিয়ন, মনুমুখ ইউনিয়ন ও খলিপুর ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হচ্ছে দিনদিন। সবমিলিয়ে সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়কের বেহাল অবস্থা। অনেক সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে আগেই, তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। গর্তে যানবাহানের চাকা পড়ে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী- চালকদের। অপচয় হচ্ছে সময়ের। অনেক সড়কে অতিরিক্ত ভাঙাচোরা থাকার কারণে যানবাহন চালকরা বিকল্প সড়ক দিয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে।
গিয়াসনগর ইউনিয়নের কৃষক মাসুক মিয়া বলেন, কয়েক বছর ধরে মাড়কোনা থেকে গোবিন্দপুর সড়কটি ভাঙাচোরা,ইট-সুড়কি পর্যন্ত উঠ গেছে, কিন্তু মেরামত হচ্ছেনা। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। সড়কটি ভাঙ্গা হওয়ার কারণে যানবাহনও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছেনা। সিএনজি চালকরাও এ পথে গাড়ি চালাতে রাজি হননা।
ওদিকে রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কেরও করুণ দশা । উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়ন থেকে সুপরাখান্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা। ওই উপজেলার মুন্সিবাজার থেকে সোনাটিকি হয়ে মোকামবাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক, রাজনগর থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত সড়ক, সদর ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তা ও ফতেহপুর থেকে মোকামবাজার হয়ে পশ্চিম দিকে শাহবাজপুর সড়কটিও ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া কামারচাক ইউনিয়নের করাইয়া ঈদগাহ এর সামনে থেকে করাইয়ার বাজার পর্যন্ত অর্ধ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, করাইয়ার বাজার থেকে শ্যামেরকোণা পর্যন্ত কাঁচা সড়ক ও একই ইউনিয়নের তেঘরী ব্রিজের উভয় পার্শ্বের কাঁচা সড়কগুলো কাজ হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত হয়নি। এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে চলাচল করতে হয়। রাজনগর-মুন্সিবাজার সড়কটিও বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দৃশ্যমান। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সড়কটি সংস্কার ও মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এলজিইডি মৌলভীবাজার সদর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, উপজেলায় এলজিইডি এর তালিকাভুক্ত সড়ক রয়েছে মোট ৮৯৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে ৪০৩ কিলোমিটার। এসব সড়কের মধ্যে ক্ষকিগ্রস্থ ও মেরামত যোগ্য সড়ক রয়েছে ১২০ কিলোমিটার। বর্তমানে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।
এলজিইডি মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এলজিইডির মোট গ্রামীন সড়ক রয়েছে ৫১৪৬.৬ কিলোমিটার সড়ক পথ। তবে পুরো জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙাচোরা সড়কে সঠিক পরিসংখ্যানের তথ্য তাদের কাছে নেই। জানা গেছে, ২৪ সালের বন্যার পর গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে কোন বরাদ্ধ না আসলেও চলতি অর্থ বছরে গ্রামীণ সড়ক মেরামতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় এসেছে ২০ কোটি টাকা। যা বর্তমানে টেন্ডার প্রক্রিয়াধিন বলে জানিয়েছেন এলজিইডি প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ।
তিনি জানান, সারা দেশে গ্রামীণ সড়ক সংস্কার উন্নয়নের লক্ষে চাহিদা ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। আর বরাদ্দ হয়েছে ৩ হাজার ৩শত কোটি টাকা। মৌলভীবাজার জেলায় বরাদ্দের চাহিদা ছিল ৪শ কোটি টাকা, বরাদ্ধ পেয়েছি ৫০ কোটি টাকা।
এলজিইডি সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহেদ হোসেন জানান, যে সমস্ত পাকা সড়ক মেরামত যোগ্য সেগুলো আমরা সড়ক রক্ষনাবেক্ষণ ইউনিট থেকে ১৫টিরও বেশি স্কিম অনুমোদন করা হয়েছে। আর সিলেট বিভাগ প্রকল্প থেকে অন্য যে মেরামত যোগ্য সড়ক রয়েছে এগুলো আমরা প্রস্তাবনা করছি। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, মেরামত যোগ্য সড়কের মধ্যে অন্তত ৭৫ কিলোমিটার সড়ক চলতি অর্থ বছরেই বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
