× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

স্মৃতিসৌধ মসজিদে এক যুগ ধরে নামাজ বন্ধ

মাহমুদ খান, সিলেট প্রতিনিধি।

২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২৫ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

শহীদদের রক্তে ভেজা ভূমির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মসজিদ আজ নির্বাক। এক যুগ ধরে সেখানে ভেসে ওঠেনি আজানের ধ্বনি, গড়ায়নি নামাজের কাতার। প্রশাসনিক অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ০৫ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর বাশতলায় নির্মিত স্মৃতিসৌধ মসজিদটি। যেখানে প্রতিদিন প্রার্থনার ধ্বনি শোনা যাওয়ার কথা, সেখানে এখন কেবল নিস্তব্ধতা আর অযত্নের ছাপ।

সরেজমিনে সাব সেক্টর বাশতলায় গিয়ে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় এই এলাকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের সম্মানে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের পাশেই রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান। সেখানে তিনজন শহীদের নাম সংরক্ষিত থাকলেও বাকি কবরগুলো অজ্ঞাতনামা হিসেবেই পড়ে আছে। এই পবিত্র স্থানটির পাশেই নির্মিত হয়েছে একটি মসজিদ, যার কোনো আনুষ্ঠানিক নাম নেই। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘স্মৃতিসৌধ মসজিদ’ নামেই পরিচিত।

মসজিদের কাছে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় এটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। দেয়ালের পলেস্তার উঠে গিয়ে মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। পেছনের অংশ ঝোপঝাড়ে ঢেকে থাকায় কিছুই দেখা যায় না। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকালে আরও করুণ চিত্র চোখে পড়ে। ধুলাবালি, অযত্ন আর অব্যবহারের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে পুরো মসজিদ জুড়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দর্শনার্থী ও আশপাশের মানুষের নামাজ আদায়ের সুবিধার জন্য মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে প্রশাসনিক খামখেয়ালিপনার কারণে এর কার্যক্রম বেশিদিন টেকেনি। নির্মাণের পর পাশের গেস্ট হাউজের দায়িত্বে থাকা একজন কেয়ারটেকারকে মৌখিকভাবে মসজিদের ইমাম ও কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি কিছুদিন নিয়মিত আজান ও নামাজ পরিচালনা করলেও কোনো সম্মানী বা বেতন না পাওয়ায় প্রায় এক বছর পর দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকেই মসজিদটিতে আজান-নামাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার বলেন, মসজিদটি চালু থাকা অবস্থায় এলাকার মানুষ এখানেই নামাজ আদায় করতেন। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এটি একেবারে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মসজিদ চালুর জন্য স্থানীয়রা একাধিকবার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, প্রশাসন চাইলে ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ দিতে পারত, না পারলে অন্তত এলাকাবাসীর হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু তারা নিজেরাও নিয়োগ দেয়নি, আবার স্থানীয়দের কাছেও দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী পাশেই নতুন করে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন।

ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এমন একটি স্থানে মসজিদটি চালু থাকলে তারা সহজেই নামাজ আদায় করতে পারতেন। একটি সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ এভাবে বন্ধ পড়ে থাকা সত্যিই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আল আমিন বলেন, মসজিদ নির্মাণের পর প্রথমদিকে গেস্ট হাউজের কেয়ারটেকারই ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন এবং দীর্ঘদিন নামাজ পড়িয়েছেন। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত কোনো বেতন না দেওয়ায় এক সময় তিনি চলে যান। এরপর আর নতুন করে কোনো ইমাম নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও জানান, ২০২১ সালে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর মসজিদটি চালুর বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন একজন ইমাম নিয়োগ দেওয়া হলেও দেড় বছরের মাথায় বেতন না পাওয়ায় তিনিও দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে আর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়। ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মসজিদটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। শুরুতে স্থানীয়রা নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। এর আগে তারা কলনী মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন। বর্তমানে স্মৃতিসৌধ মসজিদ বন্ধ থাকায় হক বাজার এলাকায় নতুন মসজিদ স্থাপন করে সেখানেই নামাজ আদায় করছেন স্থানীয়রা।

দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩–১৪ অর্থবছরে তৎকালীন সংসদ সদস্যের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুপ রতন সিংহ জানান, মসজিদটির বিষয়ে তার আগে জানা ছিল না। তবে বিষয়টি জানার পর তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদটি বন্ধ করা হয়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আয়েশা আক্তার জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.