নিজেকে কখনও সাংবাদিক, কখনও আইনজীবী আবার কখনও সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে পরিচিত করে ভয়ংকর প্রতারণার মাধ্যমে এক নারীর একমাত্র আশ্রয়স্থল বসতবাড়ি লিখে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে রুহুল আমিন ওরফে রাহুল নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা শহরের জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব কিশোরগঞ্জের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মোছা. জেসমিন আক্তারসহ আরও দুজন নারী।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জেসমিন আক্তার জানান, তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গাইটাল ডুবাইল এলাকায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দুই শতক জমির ওপর নির্মিত একটি আধাপাকা ঘরে তার কন্যাসন্তানসহ বসবাস করতেন। অভিযুক্ত রাহুল পূর্বে তার বোনের জমি বিক্রির কাজে জড়িত থাকার সুবাদে তার সঙ্গে পরিচিত হন।
তিনি আরও জানান, স্বামীর সঙ্গে তালাকের পর আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি পৈত্রিক বসতবাড়িটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য রাহুলের শরণাপন্ন হন। এই সুযোগে রাহুল তার বাসায় যাতায়াত বাড়িয়ে দেন এবং একপর্যায়ে তাকে কুপ্রস্তাব দেন। জেসমিন এতে রাজি না হওয়ায় একদিন রাহুল তার বন্ধু সুরুজ মিয়া ও সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জোরপূর্বক তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে করিমগঞ্জ পৌরসভার এক কাজীর বাসায় ভয়ভীতি দেখিয়ে বিয়ে করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, বিয়ের পর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এবং বিয়ের কথা প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। একপর্যায়ে তার কাছ থেকে পৈত্রিক বসতবাড়ির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আদায় করা হয়। পরে গত ২৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে কিশোরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ২৮ লাখ টাকায় বাড়িটি রাহুলের বন্ধু সুরুজ মিয়ার কাছে বিক্রি করে পুরো অর্থ আত্মসাৎ করে অভিযুক্ত পালিয়ে যায় বলে জানান জেসমিন আক্তার।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, রেজিস্ট্রির দিন তিনি বাধা দিতে গেলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি ফাস্টফুড দোকানে আটকে রাখা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, অভিযুক্ত রুহুল আমিন এর আগেও একই কৌশলে একাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
অপর ভুক্তভোগী মাহমুদা আক্তার কলি অভিযোগ করেন, রাহুল তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
এছাড়া সালমা আক্তার নামের আরেক নারী অভিযোগ করেন, “মানব উন্নয়ন কেন্দ্রীক কার্যক্রম” নামে একটি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কথা বলে গ্রামাঞ্চলের অসহায় মানুষের কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে অভিযুক্ত রাহুল পালিয়ে যান।
বর্তমানে অভিযুক্ত রুহুল আমিন পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ন্যায়বিচারের দাবি জানান।