রাজশাহী-১(তানোর-গোদাগাড়ী) ভিআইপি এই সংসদীয় আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। তবে এবার বিএনপি-জামাতের লড়াইয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে পচ্ছন্দের শীর্ষে ও বিজয়ী হবার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন শরিফ উদ্দিন।বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সামরিক সচিব ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা অতীতের সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। এখানে বিএনপি এবার বড় ব্যবধানে বিজয়ী হবার আশা করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খোলাধুলায় তারা অংশ নিচ্ছেন। জোট বেঁধে নেতাকর্মীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
এদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী মতাদর্শীরা ধীরে ধীরে বিএনপির দিকে ঝুঁকছে। ফলে ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মতাদর্শীদের ভোট বিএনপির বাক্সে যাবার প্রবল সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে,রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি দলের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে থাকার সুযোগ নেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। তবে দলটির একটি বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। সরকার গঠন বা বিরোধী দল, যখনই ভোটের মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ, তারা সংগৃহীত ভোটের প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটি ভোটে না থাকলেও তাদের সমর্থক-ভোটাররা কী করবেন- এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও দেখা দিয়েছে নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, আওয়ামী লীগের একটা অংশের ভোটার রয়েছেন, যারা দেশে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করেন বা কারও স্বজন সরকারি চাকরি করেন, তাঁরা তাঁদের আসনে যে দলের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, তারা সেদিকেই ঝুঁকবেন তাদের ব্যবসা ও চাকরি রক্ষায়। স্থানীয়ভাবে নিজস্ব সম্পদ রক্ষা ও মামলা এড়ানোর ভাবনা থেকেও এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন অনেক ভোটার। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভোটারদের নিজস্ব নিরাপত্তা সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয় হবে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে তাঁরা প্রভাবশালী প্রার্থীর দিকেই ঝুঁকবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকগণ বলছে,তাদের বিশাল ভোট ব্যাংক থাকলেও ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর দলের সাধারণ সমর্থকদের একটা বড় অংশই দলটির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।তবে কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দল, তাই আওয়ামী লীগের ভোটররা হয়তো সেদিকেই ঝুঁকতে পারেন। আদর্শিক জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ-জামায়াত পুরোপুরি বিপরীতমুখী। তাই তাদের প্রতি আওয়ামী লীগের সহানুভূতি কমই থাকবে। আবার যেহেতু ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, তাই নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি), গণ-অধিকার পরিষদ বিবেচ্য না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি আওয়ামী লীগের ভোটারদের কাছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত আওয়ামী লীগের বড় একটি ভোট ব্যাংক সব সময়ই ছিল।
গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর কিছুটা হয়তো কমেছে। আগামী নির্বাচনে দলটির ভোটার-সমর্থকেরা হয়তো ভোট দিতে যাবেন এবং আসন ভিত্তিক সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। যাঁদের ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে, যাঁদের সম্পদ রয়েছে, কেউ কেউ চাকরি ও কর্ম টেকাতে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করবেন, যেন আগামীতে টিকে থাকতে পারেন।এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পচ্ছন্দ বিএনপি। কারণ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেভাবেই নির্বাচন হোক বিএনপি একক সংখ্যগরিষ্ঠতা পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। আবার মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন বিজয়ী হলে তার মন্ত্রী হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।এবিবেচনায় সরকার গঠন করবে বিএনপি, এখানকার এমপি হবেন মন্ত্রী,তাহলে অহেতুক বিএনপির বিপক্ষে ভোট দিয়ে ভোট নস্ট ও সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি করার মতো ঝুঁকি নিবেন না আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকগণ।
এদিকে বিএনপির প্রার্থী শরিফ উদ্দিনকে সৌভাগ্য দূত মনে করছেন সাধারণ ভোটারগণ।তারা মনে করেন এই জনপদের মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নে তার কোনো বিকল্প নাই। অন্যরা রাজনীতি করে যেখানে পৌঁছাতে চাই,সেখান থেকে শরিফ উদ্দিনের রাজনীতি শুরু।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দলের ভিতর এবং বাইরের নানা ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার, প্রতিহিংসা ও গুজবের বহু অন্ধকার গলিতেও তিনি পথ হারাননি এবং গতানুগতিক রাজনীতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দেননি।নিজস্ব, স্বকীয়তা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন অমায়িক ব্যবহার ও প্রচণ্ড সাহসী নেতৃত্বের লৌহমানব এই মানুষটি স্থানীয় রাজনীতির সীমানা অতিক্রম করে ধীরে ধীরে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার পুরুষে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার প্রতি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার যে বহিঃপ্রকাশ তাতে তিনি না চাইলেও তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষ তাকেই তাদের নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে, এখানে তার কোনো বিকল্প নাই। কারণ সাধারণ মানুষের নিখাদ ভালবাসার চেয়ে বড় কোন শক্তি নাই। তার মনোনয়ন নিশ্চিত হবার মধ্যদিয়ে সেটা প্রমাণ হয়েছে।
জানা গেছে,রাজশাহী-১ নির্বাচনী এই এলাকা ভৌগোলিক বৈচিত্র্যেঘেরা। গোদাগাড়ীতে পদ্মার ধু-ধু বালুচর, তানোরে ঠা-ঠা বরেন্দ্রভূমি। এই আসনের মানুষের প্রত্যাশাও একটু ভিন্নমাত্রার। সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব যার কাঁধে পড়ে, ভোটের আগে তাকে ঘিরেই হিসাব-নিকাশের পালা চলে। গেল তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে সে হিসাব মেলেনি। এবার মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিনকে নিয়ে সেই প্রত্যাশা পুরুণের স্বপ্ন দেখছেন এই জনপদের মানুষ। ইতমধ্যে শরিফ উদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়ে তাকে বিজয়ী করার জন্য বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল থেকে তৃণমুল নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হয়েছে।
অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, তার যে পারিবারিক ঐতিহ্য, সামাজিক মর্যাদা,ব্যক্তি অর্জন তাতে রাজনীতি থেকে তার নেয়ার কিছু নেই, তবে দেবার অনেক কিছুই রয়েছে। তিনি যদি এমপি-মন্ত্রী হতে পারেন তাহলে তানোর-গোদাগাড়ীর উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবে।কারণ বিএনপি সরকার গঠন করলে তার যোগাযোগ হবে সরাসরি (শেঁকড়) দল ও সরকার প্রধানের সঙ্গে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির অপ্রতিদন্দী নেতৃত্ব প্রয়াত প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের পরবর্তী নেতৃত্ব হিসেবে তৃণমূলে শরিফ উদ্দিন পচ্ছন্দের শীর্ষে রয়েছেন। প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুলের অবর্তমানে যদি কেউ নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে নিতে ও ব্যারিষ্টারের অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে পারেন সেটা শরিফ উদ্দিন ব্যতিত আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুলের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো তার পক্ষেই সমাপ্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন ভোটারগণ।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি দলের ও দুজন সরকার প্রধানের সামরিক সচিব এবং সাবেক মেজর জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে সরাসরি নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। এটা নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য পরম সৌভাগ্যর যে এতো বড় মর্যাদা সম্পন্ন নেতৃত্ব তাদের মাঝে এসেছেন। এটা তাদের গৌরবও বটে। তিনি এই জনপদের মানুষের সৌভাগ্য দূত হয়ে এসেছেন। এই জনপদের মানুষের উচিৎ দলমত নির্বিশেষে সকলের উর্ধ্বে উঠে সকল মতপার্থক্যে বা ভেদাভেদ ভুলে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাকে বিজয়ী করা। কারণ তার মতো এত বড় মাপের পদমর্যাদা সম্পন্ন নেতৃত্ব এই জনপদের মানুষ আগামি একশ' বছরেও পাবেন কি না তা ভাগ্যের বিষয়।
এদিকে বিএনপির তৃণমূলের দাবি এই জনপদের মানুষ প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ ও চিরঋণী। এবার তারা শরিফ উদ্দিনকে রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করে সেই ঋণের কিছুটা হলেও শোধ দিতে চাই। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছে,তারা শরিফ উদ্দিনের বিজয় নিয়ে চিন্তিত নয়,তারা তাকে মন্ত্রীসভায় দেখতে চাই।
জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনে ২টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬২ হাজার ২৪২। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩০ হাজার ৫১০ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩১ হাজার ৭২৯। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে তিনজন। এই আসনের নতুন ভোটারের সংখ্যা ৭ হাজার ৫৪২। এছাড়াও এই দুই উপজেলার বিএনপির দায়িত্বশীল সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দগণ সরাসরি ও প্রকশ্যে শরিফ উদ্দিনের পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ আসনে সবচেয়ে বেশি ভোটার চরের বাসিন্দা,সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। মূলত তাদের ভোটেই জয়-পরাজয় নিশ্চিত হয় বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এবিষয়ে মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন জানান, দলের কিছু নেতা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কেন্দ্র বিষয়টি জানে। তিনি বলেন, দলের আদর্শিক ও মুলধারার নেতা এবং কর্মী-সমর্থকগণ তাকেই বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন,সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি এককভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পাবে এবং তিনিও বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন ইনশাল্লাহ্।