দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে একই দিনে গণভোটের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত সমমনা আট দল দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের জারি করা আদেশের বৈধতা দিতে গণভোট অপরিহার্য। জামায়াতসহ ৮ দল গণভোট আলাদা দিনে আয়োজনের প্রস্তাব দিলেও দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তারা একই দিনে গণভোটের ব্যাপারে রাজি হয়েছে। তার ভাষায়, ‘গণভোট হলে জনগণ ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে রায় দেবে—এ ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ আশাবাদী।’
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ্ মাঠে আন্দোলনরত ইসলামী সমমনা ৮ দলের ডাকা বিভাগীয় সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জাতীয় পার্টির তোষামোদী ভূমিকার কারণেই শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। জাতীয় পার্টির বড় চমক হলো—তারা আওয়ামী লীগকে তুষ্ট করতে করতে ভারতের আজ্ঞাবাহী শেখ হাসিনাকে ১৫ বছর ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অগণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট ব্যাহত হওয়ার পেছনে অন্যতম দায় তাদের।
তিনি আরও বলেন, একসময় রংপুরসহ দেশের মানুষের সহানুভূতি ছিল জাতীয় পার্টির প্রতি, কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্ধভক্তির মাধ্যমে জনগণের আস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে দলটি। এ কারণে আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাও এখন সাধারণ মানুষের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
রংপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে মাওলানা হালিম বলেন, সমাবেশ বাস্তবায়নে ৮ দলের নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত আন্তরিকতা ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। আমরা আশা করছি কয়েক লাখ মানুষের সমাগমে এই সমাবেশ জাতির সামনে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। আমরা এই সমাবেশ থেকে আমাদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে নতুন বার্তা দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ৮ দলের নেতা ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম। সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বক্তব্য দেবেন জামায়াতের নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, নেজামে ইসলামী পার্টির নায়েবে আমির মুফতি মোখলেছুর রহমান কাসেমী, সাংগঠনিক সচিব হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সংগঠক মুফতি মাহমুদুল হাসান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাহউদ্দিন, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামসহ ৮ দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় দল-মত নির্বিশেষে দেশবাসীর প্রার্থনার মধ্যদিয়ে জাতিগত ঐক্য ও সৌহার্দ্য ফুটে উঠেছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা এমন সম্পর্কই চাই, যেখানে ঐক্য ও সৌহার্দ্য থাকবে। যাতে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশটাকে এগিয়ে নেয়া যায়। বেগম খালেদা জিয়া দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে তার অবদান তাকে অনন্য
উচ্চাতায় নিয়ে গেছে ।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর আমির ও রংপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী উপাধ্যক্ষ এটিএম আযম খান, সেক্রেটারি কে এম আনোয়ারুল হক কাজল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর মহানগর সভাপতি মুফতি আব্দুর রহমান কাসেমী, সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল, রংপুর-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক রায়হান সিরাজীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।