নদীর ওপরে নেই কোনো সেতু, নেই খেয়া নৌকাও। অথচ প্রতিদিন অর্ধ লাখেরও বেশি মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে একটি সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে। স্বাধীনতার ৫৪ দশক পেরিয়ে গেলেও সিলেটের বিশ্বনাথের এই জনপদে পৌঁছেনি স্থায়ী সেতুর উন্নয়ন। যেমন আছে তেমনই রয়ে গেছে নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো, রয়ে গেছে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ।
বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আশুগঞ্জ বাজার, পালের চক, পাঁচঘরী এবং খাজাঞ্চি ইউনিয়নের দ্বীপবন্দ গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই খাজাঞ্চি নদী পার হন এই সাঁকো দিয়ে। শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী-সবারই ভরসা এই এক বাঁশের সেতু। অসংখ্যবার মানুষ পা পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন, কেউ কেউ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাজাঞ্চি নদী পারাপারে একসময় খেয়া নৌকা ছিল। এখন সেই নৌকাটিও নেই। ফলে পারাপারের বিকল্প হিসেবে রয়ে গেছে দূরের রামপাশা সেতু বা তেলিকোনা সেতু। কিন্তু এসব সেতুর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় গ্রামবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে চরম দুর্ভোগের। বিশেষ করে আশুগঞ্জ আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে আসতেই হয়। পা পিছলে পড়ে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন, কেউ কেউ পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে সেতুর দাবি জানিয়ে এলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সারা দেশের উন্নয়ন হলেও এই অঞ্চলে তার ছোঁয়া পৌঁছে না। বর্ষা এলেই সাঁকো আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে; তখন নদী পারাপার করতে হয় জীবন বাজি রেখে। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ক্লান্ত গ্রামবাসী তাই গত ২১ জুলাই স্বেচ্ছাশ্রমে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানারকম শঙ্কা - অর্থাভাব।
আশুগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মুন্তাফিজুর রহমান বলেন, এত বছরেও এখানে একটা সেতু হলো না। ভোট এলে সবাই এসে আশ্বাস দেয়, কিন্তু ভোট শেষ হলেই কেউ আর খোঁজ নেয় না।
নূর আহমেদ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, কৃষিকাজ করতে আমাকে প্রতিদিনই নদীর ওপারে যেতে হয়। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। প্রতিদিনই ভয় থাকে পড়ে গিয়ে কিছু একটা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিশ্বনাথ উপজেলা কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘আশুগঞ্জ বাজার এলাকায় একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে। নির্বাচনের আগে অনুমোদন পাওয়া কঠিন, তবে নির্বাচন শেষে অনুমোদন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’