মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দীর্ঘ ৭৫ বছর পর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ৩৯২ শতাংশ জমির দখল প্রকৃত মালিকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশে গতকাল রোববার (৩০ নভেম্বর) পরিমাপ শেষে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এবং লাল নিশানা টাঙিয়ে জমির দখল হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরকৃত জমি উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ উলাইল মৌজায় অবস্থিত।
জমির প্রকৃত মালিক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ধল্লা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের মৃত জিন্নত আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন, তার ভাই-বোন এবং প্রতিবেশী লাল মিয়া ও তার শরিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ উলাইল মৌজার ৩৯২ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছিল। একপর্যায়ে লাল মিয়া ও তার শরিকরা জমিটি জোরপূর্বক দখল করে নেয় এবং পরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তা বিক্রি করতে থাকে। ফলে ক্রয়কৃত জমিতে অনেকেই ঘরবাড়ি নির্মাণ ও চাষাবাদ শুরু করে সেখানে বসবাস করতে থাকেন।
এই পরিস্থিতিতে জমির বৈধ মালিকানা দাবি করে ২০০০ সালে দেলোয়ার হোসেন সিংগাইর সিনিয়র সিভিল জজ আদালতে লাল মিয়াসহ দখলদারদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১১ সালে আদালত দেলোয়ার হোসেন ও তার শরিকদের বৈধ মালিক হিসেবে ঘোষণা দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ ২০১৫ সালে আপিল করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে হাইকোর্টেও আপিলে হেরে যান বিবাদী পক্ষ।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর গত ১৭ নভেম্বর সিংগাইর সিনিয়র সিভিল জজ আদালতের বিচারক মোসাম্মৎ রুমী খাতুন দখলীয় পরোয়ানা জারি করেন। এরই প্রেক্ষিতে রোববার (৩০ নভেম্বর) উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে প্রকৃত মালিকদের জমি হস্তান্তর করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাবেল উদ্দিন, জেলা জজ আদালতের নাজির আব্দুর কাদের মোল্লা, থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বাদী দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আদালতের রায়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণ উলাইল মৌজার আমাদের ৩৯২ শতাংশ জমি দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে লাল মিয়া ও তার শরিকরা বংশপরম্পরায় জোরপূর্বক ভোগদখল করে আসছিল। এই জমি নিয়ে আমাদের পরিবার মামলা, হামলা ও নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০০০ সালে বাধ্য হয়ে মামলা করি। অবশেষে ২৫ বছর পর আদালতের মাধ্যমে আমাদের জমি ফিরে পেয়েছি। আদালতের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা।”
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাবেল উদ্দিন বলেন, “আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৯২ শতাংশ জমির দখল প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।”