কক্সবাজার উপকূলে লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু হলেও মাঠে নেই তেমন চাষিরা। এখনও প্রস্তুত হয়নি লবণ মাঠ, গর্তে পড়ে আছে শত শত মণ লবণ। চাষিদের দাবি, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লবণ মাঠে নামবেন না তারা। বিসিকের আশা, শীঘ্রই লবণ উৎপাদনে মাঠে নামবেন চাষিরা। আর লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব।
এদিকে গত মৌসুমের ৩ লাখ ৪০ হাজার টন লবণ এখনো মজুত রয়েছে। এর পরেও বাহির থেকে লবণ আমদানির হওয়ার কথার গুঞ্জনের কারণে স্থানীয় লবণ চাষিরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, যদি বাহির থেকে লবণ আমদানি হয় তবে তাদের মজুতকৃত লবণ বিক্রি হবে না। এতে লবণের দাম কমে যাবে। যার কারণে প্রতিনিয়িত চাষিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় লবণ উৎপাদন কেন্দ্র। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজারের। তার মধ্যে টেকনাফ ও মহেশখালীতে অন্যতম। এ ছাড়া কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী আংশিক উপজেলায়। গত মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।
তবে লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজার উপকূলে মাঠে নেই চাষিরা। যদিও বর্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অক্টোবর মাস থেকে চাষিরা লবণ চাষের জন্য প্রস্তুত হন। চাষিদের দাবি, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লবণ মাঠে নামবেন না তারা।
মহেশখালীর লবণ চাষি সাইফুল বলেন, ‘মাঠে প্রতি মণ লবণ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পেয়েছি ২০০ টাকা। যার কারণে গত দুই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। তাহলে এবার বলেন এত টাকা লোকসান দেয়ার পর কীভাবে মাঠে নামব?’
শুধু মহেশখালীর সাইফুল নন; এখনও লবণ মাঠে নামেনি কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, টেকনাফ, চকরিয়া ও পেকুয়ার চাষিরা। তাদের দাবি- লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং জমির লিজ মূল্য না কমালে মাঠে নামবেন না তারা।
কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘কক্সবাজারে প্রায় ৪১ হাজারের বেশি লবণচাষী রয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুম পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখনও মাঠে নেমেছে মাত্র কুতুবদিয়া ও ছনুয়ার কয়েক হাজার চাষি। কিন্তু প্রায় ৩৯ হাজার লবণচাষি এখনও মাঠে নামেনি। কারণ হিসেবে উঠে আসছে বাজারে প্রচারিত প্রচুর পরিমাণ শিল্প লবণ আমদানি হয়েছে, মিল মালিক সিন্ডিকেটের কারণে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হচ্ছে না, অন্যদিকে জমির লিজ মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরি বেশি এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। এসব সমস্যা নিরসনে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি মাঠ পর্যায়ে চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয় তাহলে চাষিরা মাঠ নামতে সবসময় প্রস্তুত।’
কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী জানান, দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের নাম দিয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে লবণ আমদানি করার পাঁয়তারা করছে লবণকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট। যা দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রান্তিক চাষিদের রক্ষার্থে লবণ আমদানি বন্ধের দাবি জানান।
কক্সবাজার বিসিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, লবণ মৌসুম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকায় অনেক চাষি মাঠে নেমেছেন। অন্যান্য এলাকাতেও শীঘ্রই চাষিরা মাঠে নামবেন বলে তিনি আশা করেন।
তিনি বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুম বিলম্বিত হওয়ায় চাষিরা সময়মতো মাঠে নামতে পারেননি। বর্তমানে চাষিরা মনপ্রতি মাত্র ২৪০ টাকা দরে লবণ পাচ্ছেন, যা তাদের হতাশার কারণ। তবে সামনে লবণের দাম বাড়বে বলে বিসিক আশাবাদী।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
