গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, মিলিয়া বাওলা গান আর মূর্শিদী গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। বাউল শাহ্ আব্দুল করিমের সেই বিখ্যাত গানের মতো যেনো যুগের পর যুগ ধরে মুসলমান ও হিন্দু ধর্মের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য পরিবেশ বিরাজমান রয়েছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। এখানে কারো মধ্যে নেই সাম্প্রদায়িক বিভাজন। নেই কোন হানাহানি আর হিংসা। রয়েছে একে-অপরেরর প্রতি ভালোবাসা আর সামাজিকতার গভীর বন্ধন। স্বাধীনভাবে সবাই নিজ নিজ ধর্মীয় ও সামাজিক কাজ করে আসছেন এলাকাবাসী।
কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নে সড়কের পাশেই মধ্যপাড়া গ্রামে একি আঙিনার এক পাশে মসজিদ, অন্য পাশে মন্দির। দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথ একটি। বছরের পর বছর ধরে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
অভিন্ন আঙিনার এক পাশে মসজিদের অজুখানা, অন্য পাশে মন্দিরের পুকুর। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। মন্দিরে সকাল-সন্ধ্যা চলে প্রাত্যহিক পূজা-অর্চনা। একই স্থানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম সম্পাদন করেন। এ নিয়ে কখনো কারও কোনো সমস্যা হয়নি। বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতা বিরাজমান রয়েছে সবসময়ই। এখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে নিজেদের ধর্মীয় কার্যক্রম সম্পাদন করেন। মসজিদ ও মন্দিরের অভিন্ন আঙিনায় একদিকে যেমন মুসলিমদের জানাজা হয়, তেমনি লীলাকীর্তনসহ হিন্দুদের নানা অনুষ্ঠান চলে।
স্থানীয় লোকজন, মসজিদ ও মন্দির-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনতার আরো অনেক আগে থেকেই এখানে রাধামোহন জিউর সেবাশ্রম নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় সাধক প্রয়াত কল্যাণ কৃষ্ণ গোস্বামী এই গ্রামে নানান জনহিতকর কার্যে নিয়জিত ছিলেন। স্থানীয় মধ্যপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য জমিও তিনি দান করে গেছেন। স্থানীয় হিন্দু ধর্মের লোকজন তাকে গুরুদেব হিসেবে শ্রদ্ধা করেন। বছরের প্রায় সবসময়ই এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে তার অনুসারীরা তীর্থ স্থান হিসেবে এসে পূজা ও ধর্মীয় নানান আনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকেন। পাশাপাশি সীমানায় রয়েছে মধ্যপাড়া বাইতুন নুর জামে মসজিদ। ২০০৬ সালে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। মসজিদ মাঠের সাথেই লাগোয়া প্রয়াত কল্যাণ কৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধি।
মসজিদের খতিব ও ইমাম মাওলানা সাদেকুর রহমান বলেন, ‘এখানে অনেক আগে থেকেই সবাই মিলেমিশে থাকছি। আমাদের মধ্যে কখনো কোন বিষয় নিয়ে মতভিন্নতা হয়নি। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে মিলেমিশে আমরা বসবাস করছি। এটা আমাদের বাংলাদেশের চিরচেনা বহু কালের একটা ঐতিহ্য। আমরা সমাজে পারস্পরিক সুখ ও দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করে নেই।’
রাধামোহন জিউর মন্দিরের পুরোহিত সাধন গোস্বামী বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে মন্দিরের দায়িত্বে আছি। কখনো কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ দেখেননি। পাশের মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সাথেও সুসম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, সাধারণত মসজিদের আজানসহ নামাজের সময় মন্দিরের উলুধ্বনি ও বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখা হয়। অন্য সময়ে স্বাভাবিক নিয়মে প্রথাসিদ্ধভাবে মন্দিরের সব ধর্মীয় কাজকর্ম করি। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। সমাজের মানুষ আমাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকেন। এখানকার সবার সাথে আমাদের হৃদয়ের মেলবন্ধন।’
সরেজমিনে গিয়ে মসজিদ-মন্দিরের আঙিনায় কথা হয় স্থানীয় মুসল্লি জমি, জসিম, কাজলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মসজিদে নিয়মিত নামাজ ও জুমার নামাজ আদায় করি। কোনো সমস্যা হয়নি। বোঝাপড়া ঠিক থাকলে কোনো সমস্যা হতে পারে না।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দিরে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়মিত তাদের নিজ নিজ ধর্মকর্ম করছেন। এখানে কখনো কোনো সমস্যা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
