× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ

পিরোজপুর প্রতিনিধি

১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:২৯ পিএম । আপডেটঃ ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩০ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

‎পিরোজপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, তাদের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হয় না খাবার। যা দেওয়া হয় তা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম এবং নিম্নমানের। নির্ধারিত আসনের বিপরিতে রোগী বেশি থাকায় রয়েছে খাবার না পাওয়ার অভিযোগ। ফলে ভর্তি হওয়া রোগীদের যেমনি বাড়ছে ভোগান্তি, তেমনি বাড়ছে খরচ।

‎তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের দাবি, খাবারের জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে তাতে মানসম্মত খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর খাবার সরবরাহে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

‎সরেজমিনে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি রোগীদের দুপুরের খাবারের জন্য মুরগি রান্না করা হচ্ছে। যদিও এই দিন খাবারের সিডিউল অনুযায়ী দেওয়ার কথা রুই অথবা কাতল মাছ। আর বাজারে মাছ না পেলে পাঙাশ মাছ। তবে রাধুনী লাইলি আক্তার বলেন, আজকে মাছ দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু মাছের পরিবর্তে মাংস দেওয়া হয়েছে।

‎রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সকালের নাস্তার জন্য দুইটি পাউরুটি, একটি ডিম, সামান্য চিনি ও একটি কলা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৪ ইঞ্চি আকারের একটি সবরি জাতের কলা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ছোট একটি চিনিচাপা জাতের কলা। দুপুরের খাবারে মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় মুরগীর মাংস। ৬০ গ্রামের উপরে একটুকরো মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ৫০ গ্রামের কম ওজনের মাংসের টুকরা। বাজারে মাছের দাম মুরগির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় প্রায় দিনই মাছের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে মুরগি। পরিমানেও দিচ্ছে কম।

‎হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগে ভর্তি রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি প্রতিদিন সরকারিভাবে ১৭৫ টাকা মূল্যের তিন বেলা খাবার (সকালে নাশতা, দুপুরে ও রাতে ভাত) দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিশেষ দিবসে প্রতি রোগীকে ২০০ টাকার খাবার দেওয়া হয়। দরপত্রের শর্ত অনুয়ায়ী, হাসপাতালে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ২৮ ইরি চালের ৩৩০ গ্রাম ভাত, সপ্তাহে পাঁচ দিন মাছ ও মাংস ৬৩.৬৬ গ্রাম করে দুই বেলা দেওয়ার কথা। সপ্তাহে দুইদিন মাছ ও ডিম দেওয়ার কথা। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে রোগীদের দুটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম ও একটি পাকা সবরি কলা দেওয়ার কথা। কিন্তু মাছ-মাংসের অংশ আকারে ছোট, কলাও ছোট ও নিম্নমানের পাউরুটি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মসলার পরিমাণ কম দিয়ে তরকারি রান্না করে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে, যেটি খেতে রোগীরা আগ্রহী হচ্ছে না।

‎এসময় হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে নিজের অফিস কক্ষ থেকে পুরুষ ওয়ার্ডের সম্মুখে খাবার বিতরনের জায়গায় এসে সাংবাদিকের সাথে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পরেন। খাবার নিম্নমানের ও পরিমানে কম দেওয়ার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং ক্যামেরার সামনে উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

‎তিনি প্রথমে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে না চাইলেও পরে উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, খাবার নিম্নমানের না খাবার ঠিকমতোই দেওয়া হচ্ছে। আজকের মাছের পরিবর্তে মাংস নিয়েছি। ঠিকাদার মাংসের দামই পাবে মাছের দাম পাবে না। ওজনে কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদার যতটুকু ওজন দিয়েছে সেই দামই পাবে।

‎সকালের নাস্তায় নিম্নমানের পাউরুটি এবং দরপত্রে দেওয়া আকারের চেয়ে ছোট আকারের কলা কেন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রুটি আমরা মেপে নিয়েছি যে ওজনের দেওয়ার কথা সেই ওজনের দিয়েছে। কলা যেরকম দেওয়ার কথা সেরকম দিয়েছে। এখানে নিয়মের বাইরে কিছু হয়নি ঠিকাদারকে কার্যাদেশে যে পরিমাণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সে পরিমাণই দিয়েছে।

‎হাসপাতালের রোগী কুমারখালী এলাকার বাসিন্দা জসিম শেখ বলেন, পেটে ব্যথা নিয়ে গত দুইদিন আগে ভর্তি হয়েছি।। চিকিৎসা ব্যবস্থা যতটুকু ভাল আছে তার চেয়ে বেশি খারাপ এখানের খাবার ব্যবস্থা। দিনে দুইবেলা ভাত দেয় সাথে ছোট একপিচ ব্রয়লার মুরগি। তা দিয়ে একজন অসুস্থ মানুষ খেতে পারে না। তাছাড়া খাবার মান সম্মত হয় না। অধিকাংশ মানুষই বাহির থেকে খাবার নিয়ে এসে খায়।

‎ভর্তি থাকা রোগীর স্বজন ফাতেমা আক্তার বলেন, হাসাপাতাল থেকে যে খাবার দেয়া হয় তার দিয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ খেয়ে থাকতে পারে না। খাবার খুব মান সম্মত না। পরিমানেও খুব কম। খাবার দেখে আমার ভাল লাগে নি তাই এখানের খাবার আমরা খাই না। আমরা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসি।

‎এ বিষয়ে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন মো. মতিউর রহমান বলেন, পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে সকল বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি আছে। আমি প্রায়ই কমিটির সদস্যদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন করি। আপনাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাল আমরা আরএমও সাহেব সহ আমাদের যে ঠিকাদার আছে তাদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন করবো। আশাকরি খুব শীঘ্রই আমরা সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবো।

‎এদিকে এ বছরের জানুয়ারি মাসে পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে দুদকের ৫ সদস্যের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করে খাবারের পরিমাণ কম দেওয়ার সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক করেছিল। তবে সচেতন মহলের দাবি দুদক থেকে সতর্ক করার পরেও কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি কর্তৃপক্ষ।

‎উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দরপত্র মূল্যায়নে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি ছিল শেখ এন্ড সন্স ট্রেডার্স। বেশি দরে খাবার সরবরাহের দরপত্র বাগিয়ে নিলেও রোগীদের পাতে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খাবারে ক্ষুব্ধ রোগীরা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পরে আর কোনো দরপত্র আহ্বান করেনি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে দরপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের খাবার সরবরাহ করছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.