× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান

নুরুল ইসলাম আসাদ, উজিরপুর (বরিশাল)

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:০৩ পিএম

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ শুধু একটি খাদ্য নয়, এটি দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রতীক। প্রতিবছরের মতো এবারও ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে বরিশালের উজিরপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের শিকদারপাড়ায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে এক জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী সুজা। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক মহেশ্বর মন্ডল এবং উজিরপুর মডেল থানার ওসি আব্দুস সালাম।

এছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপি সভাপতি শহিদুল ইসলাম খান, সাধারন সম্পাদক রোকোনুজ্জান টুলু, সি. সহ-সভাপতি মামুন শিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ সুমন বালী, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাহাদুত হোসেন কমরেড, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিঠু বালীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা।

এসময় জেলেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবাদী কন্ঠে মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জেলে প্রতিনিধি রিয়াদ। শত শত মৎস্যজীবী ও স্থানীয় জনগণ সভায় অংশ নিয়ে ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

ইউএনও মো. আলী সুজা বলেন, “ইলিশ শুধু আমাদের জাতীয় মাছ নয়, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। মা ইলিশ রক্ষা মানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা। তাই কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে মা ইলিশ ধরে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ২২ দিনের সাময়িক কষ্ট ভবিষ্যতে নদী ভরা ইলিশের প্রাচুর্য এনে দেবে।”

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহেশ্বর মন্ডল বলেন, “মা ইলিশ শিকার বা বিক্রিতে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জেল-জরিমানার পাশাপাশি জাল-নৌকা জব্দ করা হবে। জেলেদের জন্য এই বার্তাই সবচেয়ে স্পষ্ট-অভিযান চলাকালে কোনো রকম ছাড় নেই।”

ওসি আব্দুস সালাম পুলিশ প্রশাসনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন,“সার্বক্ষণিক টহল ও নজরদারি থাকবে। কোথাও আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রভাব খাটিয়ে কেউ রক্ষা পাবে না।”

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেন মজুমদার বলেন,“আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। ২০০৩ সালে এই আইন চালুর পর থেকে ইলিশ উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। এবারও আমরা আশা করি, সবার সহযোগিতায় ভবিষ্যতে নদীতে আরও বেশি ইলিশ ফিরবে।”

মৎস্যজীবী প্রতিনিধি রিয়াদ আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বলেন,“আমরা নদী ও ইলিশ ছাড়া কিছুই জানি না। মা ইলিশ রক্ষা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি, তা আমরা বুঝি। কিন্তু এই ২২ দিনে আমাদের ঘরে চুলা জ্বলে না। চাল-ডাল, অর্থসহায়তা সঠিকভাবে হাতে না এলে আমাদের পরিবার না খেয়ে থাকে। সরকার যদি সত্যিই পাশে দাঁড়ায়, তবে আমরা আইন মানতে প্রস্তুত।”তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই ভিজিএফ কার্ড ও সরকারি সাহায্য যেন প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছায়। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা সুবিধা নিলেও প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হয়। এই অবিচার বন্ধ না হলে জেলেদের ক্ষোভ বাড়তেই থাকবে।”

পৌর বিএনপি সভাপতি শহিদুল ইসলাম খান বলেন, “ইলিশ জাতীয় সম্পদ, তাই এর সংরক্ষণে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। জেলেদের কষ্ট আছে, তবে ভবিষ্যতের স্বার্থে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। রাজনীতি নয়, ইলিশ রক্ষা হোক আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার।”

প্রশাসনের মতে, মা ইলিশ রক্ষা জরুরি, আইন অমান্যকারীদের ছাড় নেই, উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হলে এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

এদিকে জেলেরা বলছে, তারা আইন মানতে প্রস্তুত, তবে পর্যাপ্ত সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া পরিবার নিয়ে টিকে থাকা কঠিন। সাহায্য যেন প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছায়, সেই নিশ্চয়তা চায় তারা।

উজিরপুরের শিকদারপাড়ায় অনুষ্ঠিত এই সভায় একদিকে প্রশাসনের কঠোরতা ও আইন প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি উঠে এসেছে, অন্যদিকে জেলেদের ক্ষোভ, অসুবিধা ও ন্যায্য দাবির কথাও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

অতএব, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুধু একটি আইন প্রয়োগ কার্যক্রম নয়-এটি বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি নদী-নির্ভর মানুষদের জীবন-জীবিকা সুরক্ষারও প্রশ্ন। সচেতনতা, ন্যায্য সহায়তা ও সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই উদ্যোগ সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করছে প্রশাসন ও জেলেদের পারস্পরিক সহযোগিতার উপর।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.