রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের শংকরপুর ঝাড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মুঠোফোনে অশ্লীল ভিডিও দেখানোর অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান মাহমুন্নবী।
স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (১০ আগস্ট ২০২৫) সকাল পৌনে ১২টার দিকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন।এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিদ্যালয় ঘিরে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত রবিউলের বিচার দাবিতে আফজাল হোসেন নামে এক অভিভাবক বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, দপ্তরী রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে ডেকে নিয়ে নিজের মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দেখাতেন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভয়ভীতি দেখাতেন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, পিয়ন রবিউল ইসলাম আমাদের খারাপ ভিডিও দেখায়। আমরা তার শাস্তি চাই।
আরেক শিক্ষার্থী আজমীর সরকার জানান, রবিউল চাচ্চু শ্রেণিকক্ষে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও দেখাতেন।
অভিভাবক ফেন্সি বেগম বলেন, রবিউল এতটাই প্রভাবশালী যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রবিউল আমাদেরও জিম্মি করে রেখেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন বলেন, অভিভাবকরা জানিয়ে দিয়েছেন, রবিউলের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না। আমরা শিক্ষিকারাও নিরাপদ নই।বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, রবিউল ইসলাম একজন চরিত্রহীন ব্যক্তি। ২০২০ সালে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন।
অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এসব ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।তদন্ত কমিটির সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাঃ লাজিজা বেগম বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা দ্রুত অভিযুক্ত দপ্তরীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা লাজিজা বেগম বলেন, ‘আমরা গতকাল (রোববার) সরেজমিনে তদন্ত করেছি। আশা করি, সঠিক সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে লাজিজা বেগম বলেন, ‘এটা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। আমরা আমাদের দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেব, সেখান থেকে জানতে পারবেন।’
সোমবার বিকেলে মোবাইল ফোনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিক-উজ-জামান বলেন, ওই ঘটনায় ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ওই দপ্তরির বিরুদ্ধে সেখান থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।