কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে একটি ব্যতিক্রমী ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম দিয়েছে পারিবারিক বিরোধ। মেয়েকে তালাক দেওয়ার ক্ষোভে জামাতার বিরুদ্ধে শাশুড়ি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পাঁচগাতিয়া গ্রামের এ ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে একাধিকবার চেষ্টা করেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জুলাই পাঁচগাতিয়া গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের ছেলে মো. শাহ জালালের (৩৩) সঙ্গে একই এলাকার জসিম উদ্দিনের মেয়ে হৈমি আক্তারের (২৫) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই টানাপোড়েন শুরু ও প্রথম মাসেই হৈমি আক্তার সন্তান ধারণ করলে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এ সময় স্ত্রী হৈমি স্বামী শাহ জালালকে ‘সহজ-সরল’ আখ্যায়িত করে রাজমিস্ত্রির সংসার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। এরপর শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সে ফিরে আসেননি। তার মা পান্না স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মেয়েকে এমন ছেলের ঘরে দেবেন না এবং দ্রুত কাবিনের টাকা ফেরত না পেলে মামলা করবেন।
পরবর্তীতে ২০২০ সালে শাহ জালালের বিরুদ্ধে কাবিনের টাকা আদায়ে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন হৈমি আক্তার। পরে আদালত ২০২২ সালের ৩০ জুন ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৯৭ টাকা প্রদানের রায় দেন। কিন্তু আদালতে মামলা দায়েরের আগেই স্বামী শাহ জালাল বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পেয়ে প্রবাসে পাড়ি দেন।
২০২৫ সালের ১৫ জুলাই শাহ জালাল দেশে ফিরলে হৈমি আক্তার তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, ‘আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি, মায়ের কথায় এসব করেছি, আমাকে নিয়ে যান।’ পরদিন ১৬ জুলাই দুপুরে শাহ জালালের তিন চাচা, বড় বোন ও বোন জামাতা তাকে আনতে গেলে তার মা পান্না আক্তার অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে এবং কাবিনের টাকা দাবি করেন। এ সময় কাবিনের টাকা না দিলে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।
অন্যদিকে পরদিন ১৭ জুলাই শাহ জালাল স্ত্রীর কাছে সংসার করবে কি-না জানতে চাইলে হৈমি সংসার করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে শাহ জালাল নোটারির মাধ্যমে তালাকনামা প্রদান করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তালাকের খবর শুনে সেই রাতেই শাশুড়ি পান্না আক্তার ক্ষোভে মেয়েকে নিয়ে শাহ জালালের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ডেকে ধর্ষণের নাটক সাজান।
গ্রামের সেকান্দর আলীসহ অনেকে জানান, শাহ জালাল সহজ-সরল ছেলে। বিয়ের মাস তিন পরেই স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যায়। আমরা বহু চেষ্টা করেও কোনো সমাধান করতে পারিনি। এখন সে বিদেশ থেকে ফিরে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তালাক দিলে সেই ক্ষোভে মা-মেয়ে নাটক সাজিয়ে স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। আমরা গ্রামবাসী এর নিন্দা জানাই এবং নিঃশর্তে তার মুক্তি চাই।
বাদী পান্না আক্তার সংবাদমাধ্যমে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, শাহ জালাল যে সময় রাজমিস্ত্রি কাজ করতো, গরীব ছিল ,তখন আমার মেয়ে ভালো ছিল। এখন বিদেশ করে টাকা ওয়ালা হয়েছে এখন আমার মেয়েকে তালাক দিয়েছে। তাকে জেলে পচাবো। আপনাদের সাথে কথা বলতে হলে আমার উপরে লোক আছে তাদের সাথে বুঝে তারা বললে কথা বলতে পারবো, এছাড়া না।
স্থানীয় আচমিতা ইউপি চেয়াম্যান মো. মতি মিয়া বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার বসেছি এবং সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সমাধান করতে পারিনি। মেয়ের মা আদালতে মামলা করছে। মামলা হলে তো আমার কিছু করার থাকেনা। বিজ্ঞ আদালত যে রায় দেয় সেটিই মানতে হবে।
কটিয়াদি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, মেয়ের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সেখানে যায় এবং শাহ জালালের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে।