আবারো মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের হলরুমের দেয়াল গ্রাফিতিতে ফুটে উঠেছে। জুলাই মাস এলেই ব্যতিক্রমী বার্তা নিয়ে গ্রাফিতি আঁকায় মেতে ওঠেন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সমাজের বৈষম্য, অবিচার ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর এক সৃজনশীল মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে দেয়ালচিত্র।
দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন ক্যালিগ্রাফি, পেইন্টিং করছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী দুঃশাসন যুবসমাজের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ২৪'-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে।
দেয়ালে দেয়ালে শোভা পেয়েছিল তাদের মনের ভাব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির অন্যতম ??'২৪-এর রঙে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন'? সরকারি সিদ্ধান্তে জেলা প্রশাসক মানিকগঞ্জ এর সহযোগিতায় মানিকগঞ্জ নগরী ও জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কর্তৃক দেয়ালে আঁকা চিত্রাঙ্কনে ফুটে উঠেছে আবারো ২০২৪-এর জুলাই।
ছবিতে দেখা যায়, একাধিক চরিত্রের চোখ বাঁধা, মুখে প্রতিবাদের অভিব্যক্তি। দেশের পতাকা, ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার, আগুনে পোড়া ভবন, তরুণদের হাতে প্ল্যাকার্ড — সব মিলিয়ে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা।
গ্রাফিতিতে ব্যবহৃত শব্দগুলো যেমন “হায়েনামার্কেট”, “দ্রোহ”, “জুলুম” এবং “ত্রাসের বিচার” — এগুলো যেন এক গভীর সামাজিক অসন্তোষ ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ।
দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী আলিফা তালুকদার সংবাদ সারাবেলার সাংবাদিক কে বলেন- আর যেন আমার ভাই-বোনদের উপর স্বৈরাচাররা গুলি না চালাতে পারে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এই গ্রাফিতি অঙ্কনের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারদের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, "আমরা এই আঁকাআঁকির মাধ্যমে শুধু রঙ নয়, বলি আমাদের ভাবনা। এই সমাজে অনেক কিছু বলার আছে, যা মুখে বলা যায় না — আমরা তা তুলে ধরি তুলি দিয়ে।"
জুলাইয়ের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের দুই হাত প্রসারিত ছবি এঁকে লেখা হয়েছে 'বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। ছাদে হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে নিহত শিশুর মুখের শেষ কথা বাবা দেখো হেলিকপ্টার। দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী চিত্রের মধ্যে ফুটে উঠেছে স্বৈরাচার বিরোধী স্লোগান।
মানিকগঞ্জ বৈষম্য বিরোধী ছাএ আন্দোলনের নেতা আশরাফুল ইসলাম রাজু বলেন, "এই দেয়ালচিত্রটি আমাদের সময়ের নির্মম বাস্তবতার প্রতিবিম্ব।এই দেয়ালচিত্র আমাদের প্রশ্ন করে, আমরা কি এমন একটি দেশ চেয়েছিলাম! যেখানে তরুণের রক্তে রাজপথ রঙিন হবে,কণ্ঠরোধ হবে প্রতিবাদের আর ক্ষমতাই হবে ন্যায়ের একমাত্র মাপকাঠি?না, আমরা চাই ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন,মানবিক সমজ,যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার থাকবে সমান, যেখানে পতাকা মানে হবে গর্ব আর মুক্তি, ভয় নয়।"
এই দেয়ালচিত্র হলো প্রতিরোধের, ন্যায়বিচারের এবং নতুন স্বপ্ন গড়ার অঙ্গীকারের প্রতীক।আসুন, আমরা সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলি। যেখানে আর কোনো চোখ বাঁধা থাকবে না। ন্যায়ের নামে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য।