শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মারধরের শিকার হয়েছে মো. আরিফ রেজা (২১) নামে এক জুলাই যোদ্ধা।
২৭ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী কর্ণঝোড়া এলাকার মেঘাদল বাজার (শয়তান বাজার) এলাকায় বালুদস্যু ও চোরাকারবারিদের হামলায় ওই ঘটনা ঘটে। আহত জুলাই যোদ্ধা আরিফ গোসাইপুর ইউনিয়নের গিলাগাছা গ্রামের মো. রজব আলীর ছেলে। আরিফ বর্তমানে শেরপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। বালুদস্যুদের হাতে মারধরের ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মলহ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে।
ভুক্তভোগী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া এলাকা ঢেউফা নদী ও আশপাশের পাহাড় থেকে থেকে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধ বালু উত্তোলন করায় বিভিন্ন সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও স্থানীয় সচেতন মহল বাধা প্রদান করে। এছাড়াও অবৈধ বালু পরিবহনের গাড়ি আটক করে প্রশাসনের নজরে এনেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত বাঁশের মাচা, ড্রেজার মেশিন ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ধ্বংস করা হয়। কিন্তু তবুও থামছে না বালু উত্তোলন। জুলাই যোদ্ধা আরিফসহ কয়েকজন শুক্রবার সন্ধ্যায় অবৈধ বালু উত্তোলন হচ্ছে কিনা দেখার জন্য কর্ণঝোড়ার শয়তান বাজারে গেলে বালু ভর্তি ২টি মাহেন্দ্র ট্রাক্টর দেখতে পায়। এসময় আরিফসহ অন্যরা ট্রাক দুটি থামিয়ে ড্রাইভারকে বালুর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। এই খবর পেয়ে স্থানীয় বালুদস্যু বিপ্লব ও তার অনুসারীরা আরিফসহ অন্যদেরকে অতর্কিত হামলা করে। এতে আরিফ আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আরফিকে উদ্ধার করে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
বালুদস্যুদের হামলায় আহত জুলাই যোদ্ধা আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ডান হাতের কনুইয়ে ও বুকে গুলিবিদ্ধসহ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত নিয়ে বেঁচে আছি। বালুদস্যু বিপ্লব একাই পাহাড় ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত পাহাড় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করছে। আমি বাঁধা দিয়েছি, তাই তারা আমাকে মারধর করে আহত করেছে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।
শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুর রহমান বলেন, আরিফ রেজার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছি। কিন্তু তার আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন বিধায় তাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তার অবস্থা এখন আশঙ্কামুক্ত।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ শনিবার দুপুরে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক মোর্শেদ জিতু বলেন, খবর পেয়েই আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফকে শ্রীবরদী হাসপাতাল থেকে শেরপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে আমরা কেন্দ্রীয় সংগঠনের যারা দায়িত্বশীলদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী শেরপুরের প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার না করলে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো।