ছবিঃ সংগৃহীত।
দেশের এক মাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালীর মিষ্টি পানে এখন সোনাফলে। পান স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে স্থান দখল করে নিচ্ছে দিন দিন। ফলে এখানকার মিষ্টি পান এক প্রকার এখন সোনার হরিণ।
এছাড়া পান চাষিরা এক ঝুঁড়ি পান বিক্রি করে মূল্যে পেয়েছে লাখ টাকারও বেশি। তাই পান চাষে জড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত লোকজন। তবে সে পানের দামে ধস পড়ে তলানীতে এখন। আগের মত এক ঝুঁড়ি পানে লাখ টাকা পাইনা কৃষক কুল।
আর একদিকে বর্ষা মৌসুমের ক্ষতি অন্যদিকে মূল্যহ্রাস, ফলে ইতিহাসের ভয়াবহতম মূল্যধসে পড়েছে মহেশখালীর মিষ্টি পান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে পান বিরা প্রতি বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছে, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। উৎপাদন খরচ না উঠায় চাষিরা পড়েছেন চরম লোকসানে। মৌসুমের মাঝপথেই অনেক চাষি বরজ তুলে নিচ্ছেন, কেউ কেউ পান ফেলে দিচ্ছেন ক্ষেতেই। সংসার চালানো তো দূরের কথা, ধারদেনা করে বিনিয়োগ করা অর্থও উঠছে না। বহু চাষির পরিবারে চলছে অনাহার, সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দ্বীপের এই ঐতিহ্যবাহী কৃষিজ অর্থনীতি এখন ধসে পড়ার পথে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়- উপজেলার, হোয়ানক, কালারমারছড়া, বড় মহেশখালী ও শাপলাপুর- এই চারটি ইউনিয়নের সমতল জমিতে এবার মৌসুমী পান চাষে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষকরা। গত বছরের ভালো দামের আশায় প্রায় ১৪শ হেক্টর জমিতে ৮ হাজারের বেশি পান বরজ গড়ে তুলেছেন অন্তত ১৩ হাজার চাষি। তাদের প্রত্যেকেই চাষ করেছেন ধারদেনা করে। বরজে বাঁশ, পলিথিন, চারা, সার ও শ্রমিকের ব্যয় মিলে প্রতি বরজে গড়ে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। এখন বাজারে প্রতি বিরা পানের দাম যেখানে ২০০-২৫০ টাকা, সেখানে উৎপাদন খরচ তোলা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। চাষিরা পড়েছেন মারাত্মক দুশ্চিন্তায়।
মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাইকার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে চাষিদের হাতে পৌঁছাচ্ছে নামমাত্র অর্থ। বাজারে পানের চাহিদা না থাকায় অনেকেই বরজে জমে থাকা পানের গাছ কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বিক্রির পরিবর্তে পানের গাছ গরুকে খাওয়াচ্ছেন। ফলে চাষিরা আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কয়েকজন চাষির মতে, যদি দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ না আসে, তবে আগামী মৌসুমে কেউ আর পান চাষে আগ্রহী হবেন না। লোকসান গুনে চাষি পরিবারগুলো খাদ্যসংকটে পড়েছে। ভেঙে পড়ছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকা কৃষিজ সংস্কৃতি।
চাষিদের অভিযোগ, উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। দালালচক্র ও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত উৎপাদক ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অনেক সময় পরিবহন সংকট, পর্যাপ্ত সংরক্ষণ সুবিধার অভাব এবং ন্যয্যমূল্যে বিক্রির সুযোগ না থাকায় চাষিরা নিরুপায় হয়ে পড়েন। ফলে তারা বাধ্য হচ্ছেন লোকসান গুনে পান বিক্রি করতে অথবা মাঠেই ফেলে দিতে। এই বাস্তবতা পানের মৌসুমে চাষিদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত লোকসান গুনেও অনেকে বেঁচে থাকার সংগ্রামে পানের মাঠ আঁকড়ে ধরছেন।
মহেশখালী উপজেলা পান চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, 'মহেশখালীর মিষ্টি পান শুধু এই দ্বীপে নয়, সারা বাংলাদেশে অতিথি আপ্যায়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। অথচ সেই পানের চাষিরা আজ দিশেহারা। এবারে চাষের বিস্তৃতি ছিল নজিরবিহীন, কিন্তু বাজারে এমন ধস নামবে তা কল্পনাও করিনি। তিনি বলেন, 'সরকার যদি চাষিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে, তাহলে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। নতুবা চাষিরা উৎসাহ হারাবেন।
মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, পানের ফলন ভালো হয়েছে। শুরুতে দামও ছিল। হয়তো আবারও পানের ভালো দাম পাবে চাষিরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh