বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের শেষ নেই। প্রধান সহকারী, অফিস সহকারী, পিয়ন, দারোয়ান ও হিসাব রক্ষকসহ সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন ঘুষ বানিজ্যের সিন্ডিকেট। উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েও থামনো যাচ্ছেনা এ সিন্ডিকেট। বস থেকে পিওয় সবাই মিলেই খুলে বসেছেন এই ঘুষ বানিজ্যের হাট।
অফিসের প্রধান সহকারী মিজানুর রহমানের বিরূদ্ধে সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগের তদন্ত শেষ না হতেই আরো তিন কর্মচারীর বিরূদ্ধে ঘুষ গ্রহণের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। তবে অভিযুক্ত কর্মচারীরা এসব গায়ে মাখছে না। তাদের ভাষ্য- এতে কিছুই হবে না।
সম্প্রতি ঘুস আদায়ের একটি লিখিত অভিযোগ দেন আবু জাফর নামে এক ভুক্তভোগী। অভিযোগে বলা হয়েছে, বয়সের ত্রুটি সম্পর্কিত একটি সনদ আনতে সিভিল সার্জন অফিসে যান জাফর। তাকে ডেকে নিয়ে অফিস সহকারী (স্টেনো) মোঃ রেজাউল ও পিয়ন (গার্ড) হাসনাইন ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। অবশেষে ১০ হাজার টাকায় রফাদফা হয়। এই টাকার ভাগ হিসাব রক্ষক জায়েদা আনোয়ার মুন্নিকেও দিতে হয় বলে জানায় ঐ দুজন। এর কিছুদিন আগে প্রধান সহকারী মিজানুর রহমানের বিরূদ্ধে সার্টিফিকেট বানিজ্যে ঘুস গ্রহণের অভিযোগ দায়ের করেন আরেক ভুক্তভোগী। সেই টাকার ভাগও হিসাব রক্ষক সহ অন্য কর্মচারীরা পায় বলে অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগটি তদন্তনাধীন রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসে যেন ঘুষের হাট খুলে বসেছে কিছু কর্মচারী। স্বৈরাচারের দোসর সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসানের সময় এসব ঘুসখোর কর্মচারী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তখন অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল মেলেনি। কেননা ডাঃ মারিয়া নিজেও এসব ঘুসের ভাগ খেতেন। তবে মারিয়া হাসান বদলী হলেও অন্যান্য দোসররা রয়েছে বহাল তবিয়তে। একেকজন কর্মচারী বাড়ি গাড়ি সহ ধনকুবের মালিক হয়েছেন। ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের নতুন লাইসেন্স করিয়ে দেয়া, নবায়ন, যে কোন সনদ গ্রহণ সহ স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত স্টাফদেরও প্রতিটি কাজে এখানে টাকা গুনতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান বলেন, আমার বিরূদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয়। যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা কেন এমন করলো জানিনা। কাজ করতে গিয়ে সব সময় সবার মন রক্ষা করা যায়না।
হিসাব রক্ষক জায়েদা আনোয়ার মুন্নি বলেন, আমি কোন টাকা পয়সা নেইনা। যারা আমার কথা বলেছে ওদের ঘার ধরে জিজ্ঞেস করবো।
পিয়ন (গার্ড) হাসনাইন বলেন, যেহেতু আমাদের নামে অভিযোগ দিয়েছে সে হিসেবে আমরা দোষী। তবে এ ব্যাপারে রেজাউল সাহেব ভালো বলতে পারবেন।
অফিস সহকারী (স্টেনো) মোঃ রেজাউল বলেন, এই সনদটি আমি করিয়ে দিয়েছিলাম। আমার মাধ্যম হয়েই এই কাজটি হয়েছে। তবে টাকা পয়সা লেনদেন করার মত কিছু মনে পড়ছেনা।
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম. মনজুর-এ-এলাহী বলেন, এসব অভিযোগের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আগে এখানে অনেক দুর্নীতি হতে পারে। তবে এখন থেকে সঠিক ভাবে চালাবো ইনশাআল্লাহ। অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করতে তিনি মিডিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, অভিযোগ সমূহ পাওয়ার সাথে সাথেই আমি তদন্তে দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।