× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শ্রম দপ্তরের চিঠিতে বন্ধ হলো সদস্যপদের দ্বার

ট্রাক মালিক সমিতির নির্বাচন নিয়ে চাঁপা উত্তেজনা

শাহানুর রহমান রানা, রাজশাহী ব্যুরো

০১ জুন ২০২৫, ১৯:৪১ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

রাজশাহী জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির দুপক্ষের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের আন্তঃদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে গেল বছরের ৩০ আগস্ট।

ঐদিন পূর্ববর্তী কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণার মধ্যদিয়ে নতুন ঠিকানায় যাত্রা শুরু করে আহ্বায়ক কমিটি। পাঁচ আগস্টের পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিনের সেই আধিপত্যের পতন ঘটে। ২০১৩ সালের পর থেকে ২০২৫ অবদি একছত্র আধিপত্যের সমাপ্তি ঘটলেও; সদস্য আর ভোটার তালিকায় ম্যারপ্যাঁচ থাকায় আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অনেকটাই কোণঠাসা পরিস্থিতি বিরাজ করছে মালিক সমিতির একপক্ষের মধ্যে। আর অন্যপক্ষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে ফ্যাসিস্ট শব্দের সংযোজন আর মামলা-মোকাদ্দমার রোষানল। এরইমধ্যে ঘটেছে একাধিক অনাকাঙ্খিত ঘটনাও। থানার কম্পাউন্ডের মধ্যে ঘটেছে দুপক্ষের উত্তেজিত বাকবিতন্ডা, রেষারেষি-হট্টগল আর হাতাহাতির মতো ঘটনাও। সংবাদের শিরোনামও হয়েছে উভয়পক্ষই। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেও একে অপরের দিকে ছুড়ছেন অপবাদের ধনুক। মালিক সমিতির দখলে নিতে মরিয়া দুপক্ষই। স্থানীয় রাজনীতির নেতাকর্মীরাও জড়িয়েছেন পরোক্ষভাবেও। তাই নির্বাচন কেন্দ্রিক সরগরম বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনকে দিন।

     
গত ১৮ মে’২০২৫ রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তর থেকে প্রেরিত একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে গরম তেলে পানি ছিটানোর মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ঐদিন, কার্যনির্বাহী কমিটি গঠণের লক্ষ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নাম প্রকাশ করে রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তর। বিবদমান দুপক্ষের মধ্যথেকে তাদের পছন্দের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে মোট তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠণ করে চিঠি দেয় শ্রম দপ্তর। গোলাম মোস্তফা মামুন ও ইফতেখার আহম্মেদ ডনিকে সদস্য করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় রোকনুজ্জামান আলমকে।

জানতে চাইলে, রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স পরিচালক মোঃ মনিরুল আলম বলেন, গত ০৭-০৫-২০২৫ ইং তারিখের একটি পত্রের প্রেক্ষিতে বিবদমান দুপক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪-০৫-২০২৫ ইং তারিখে শ্রম দপ্তরের সভাকক্ষে উর্দ্ধতন কর্তাদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত আলোচনা সভার কথা থাকলেও দুপক্ষের মধ্য থেকে সমসংখ্যক প্রতিনিধির উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স পরিচালক মোঃ মনিরুল আলম এর কামরায় সম্পন্ন হয় সভাটি। নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠণের লক্ষ্যে উভয়পক্ষের সম্মতিতে উক্ত সভায় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে মোতাবেক, গত ১৮-০৫-২০২৫ ইং তারিখে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠণ করে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয় বিভাগীয় শ্রম দপ্তর। উক্ত কমিটি পরবর্তী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সভাপতি-সম্পাদকের কাছ থেকে সকল প্রকার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে সকল বিধিবিধান মেনে ত্রিশ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্যে কার্যক্রম শুরু করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু, চিঠির একটি অংশে পূর্ববর্তী কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সদস্য সংখ্যার তালিকা অপরিবর্তনীয় থাকার নির্দেশনাই বাঁধবাঁধে একপক্ষের। তখন থেকে আবারো শুরু হয় চাঁপা উত্তেজনার প্রসার। সংক্ষুব্ধ পক্ষ মৌখিক ও লিখিতকারে পরেরদিন ১৯ মে আবারো অভিযোগ দেন শ্রম দপ্তরে। পূর্বের ন্যায় একপক্ষীয় ভোটের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা ও সুবিধাবঞ্চিত যোগ্য মালিকদের সদস্য করার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন মালিকপক্ষের একাংশ। 

রাজশাহী জেলাতে প্রায় পাঁচ-ছয়শর অধিক বৈধ মালিক থাকলেও বছরের পর বছর ১২৮ জন সদস্যভুক্ত সেই তালিকা আর বৃদ্ধি পায়নি। সদস্যদের নাম কেঁটে ও ফ্লুয়িট দিয়ে মিশিয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের বানানো হয়েছে সদস্য। যেটা নিয়ে বছরের পর বছর সংক্ষুব্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলেও যোগ্য বাস মালিকরা লিখাতে পারেননি সদস্যতালিকায় নিজেদের নাম।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সাবেক সভাপতি-সেক্রেটারি সহ ওই পক্ষের বহর কিছুটা কোণঠাসা হলেও, ভোটার বা সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির দ্বার বন্ধ থাকায় নির্বাচন কেন্দ্রিক ফ্যাসিস্ট প্রকৃতির গন্ধ পাচ্ছেন অন্যপক্ষ বলে মন্তব্য তাদের। সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক হেলাল হোসেন বলেন, ২০২২ সালের সাধারণ নির্বাচনে (সিলেকশন) আওয়ামী লীগের দোসর ও সাবেক রাসিক মেয়র লিটনের নিকটতম জলীয় ব্যক্তি মোকলেসুর রহমান মুকুল ওরফে হুন্ডি মুকুলকে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ দিয়েছিলেন সাবেক সভাপতি আবুল কালাম। যোগ্য বাস মালিকদেরকে যদি নতুন করে সদস্য না করে পূর্বের তালিকানুযায়ী নির্বাচন হয় তাহলে ঝামেলা হবে। আমরা এই ধরনের নির্বাচন বয়কট করবো। সদস্য সংখ্যা নিয়ে এবারের নির্বাচনে সম্ভাব্য সভাপতি পদপ্রার্থী আল আমিন সরকার টিটু বলেন, পূর্ববর্তী সদস্য তালিকানুযায়ী নির্বাচনে হলে, সেটা হবে ফ্যাসিস্ট আমলের আদলের নির্বাচন। যেটা সাধারণ বাস মালিকদের কেউই চাননা। সকলের উপস্থিতি সাধারণ সভার মাধ্যমে বৈধপন্থায় যোগ্য বাস মালিকদেরকে সদস্য করার জন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে আমরা আবেদন করেছি। আজ (১ জুন) রাতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি পূর্ববর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির কাছ থেকে সকল কাগজপত্র বুঝে নিবেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল কালামকে নিয়ে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা তোলেন নানা অভিযোগ। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে মালিক পক্ষের একাংশ বয়কড করেন কালামকে। সাবেক সভাপতি আবুল কালামের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে গত ১৫ মার্চ’২০২৫ ইং তারিখে বোয়ালিয়া থানায় ঘটে অনাকাঙ্খিত এক ঘটনা। উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজের পাশাপাশি ঘটে হাতাহাতির ঘটনাও। সেদিনের পর থেকে সাবেক সভাপতি আবুল কালাম ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী আল-আমিন সরকার টিটুর সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল আর রেষারেষির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। উভয়পক্ষের শুভাকাঙ্খিরা একে অপরকে দোশারোপ করে আয়োজন করে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের।

উত্থাপিত অভিযোগের বিপরীতে আবুল কালাম বলেন, বিগত ফাসিস্ট সরকারে আমলে আমি নিজেও লাঞ্জিত হয়েছি, হয়েছি হয়রানির স্বীকার। খেঁয়েছি মামলা। রাজশাহী মহানগর আ’লীগের তৎকালিন সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটনের কথা না শোনার কারণে ২০১৬ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারির পদ থেকে আমাকে জোড়পূর্বক বহিস্কার করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দেয়া মিথ্যা একটি মামলায় আমি এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরপাক খাচ্ছি। দিতে হচ্ছে নিয়মিত হাজিরা। গত ২৭-৭-২০২৪ ইং তারিখে তৎকালীন বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার তার দপ্তরে আমাকে ঢেকে পাঠান। তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের রিপোর্টে বলা হয়েছে জুলাই মাসের ছাত্রজনতার আন্দোলনে আপনি বিএনপিকে অর্থ সহায়তা করেছেন। ঐদিন দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত একটি কক্ষে আমাকে আটকে রাখা হয়। আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতাদের দ্বারা একাধিকবার হয়রানির স্বীকার হবার পরেও আমাকে দোসরের তালিকায় ফেলা হয়েছে। বিষয়টা নৈতিকতা বিবর্জিত। একটি চক্র সমিতির কার্যালয়ের দায়িত্বভার পাবার আশায় আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্টদের তালিকায় ফেলে স্বার্থ হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বিষয়টি ঘৃর্ণিত। শাহমখদুম থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জিল্লুর রহমান বলেন, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম বিএনপির রাজনীতি করেন বলেই আমরা জানি। সমিতির দখল নিতে মিথ্যা ও পরিকল্পিত মামলায় ফাঁসানো হয়েছে কালামকে। আগামী নির্বাচনে আবারো তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বলেই শুনেছি।

জানতে চাইলে, রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সহকারি পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন করে কোন সদস্য অন্তর্ভূক্তি কিংবা সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগ থাকেনা। সবাইকে শ্রম ও ট্রেড ইউনিয়নের আইন মেনেই চলতে হবে। আইনের বাইরে যাবার কোন স্কোপ নেই। তবে, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নিয়মনীতি মান্যসাপেক্ষে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি সদস্য অন্তর্ভুক্তির কর্মকান্ড শুরু করতে পারবেন। তখন আইনগত কোন বাঁধা থাকবেনা। 

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.