ঈশ্বরদী ডাল গবেষণা কেন্দ্রে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ শ্রমিকদের মারপিট আহত ৯

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি ।

২৭ মে ২০২৫, ১৮:৫৭ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

নারী কেলেংকারী, ফার্ম ম্যানেজার পদ দখলের চেষ্টা ও বিএনপির রাজনীতি সমর্থন করায় সৃষ্ট চরম বিশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত দূর্বৃত্তদের হামলায় প্রতিষ্টানের এক কর্মকর্তাসহ ৯ শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

গত সোমবার (২৬ মে) রাতে পাবনার ঈশ্বরদীস্থ ডাল গবেষণা কেন্দ্র ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন-প্রতিষ্ঠানটির বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. আব্দুল হাই, ফার্মের শ্রমিক মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মুকুল হোসেন, মো. বাবুল প্রামানিক, মো. মনিরুল ইসলাম, রানা বিশ্বাস,আমির হোসেন ও আব্দুল হামিদ।

ডাল গবেষণা কেন্দ্র ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র জানান, মো. আব্দুল হাই দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বদলী হয়ে আওয়ামীলীগের সময় ঈশ্বরদী ডাল গবেষণা কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বিএনপির রাজনীতি সমর্থন করে কথা বলেন। এই কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ডাল গবেষণা কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদ দখল করে থাকা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি কবির আলী হিরু মাস্টার ডাল গবেষণা ও কেন্দ্র ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ফার্ম ম্যানেজার শামসুল হক পরস্পর যোগসাজছে আব্দুল হাইকে চরমভাবে অপমানী করেন। কটু কথা বলেন। এরপর থেকে ফার্ম ম্যানেজার শামসুল হকের সঙ্গে আব্দুল হাইয়ের বিরোধ চলে আসছিল। ভেতরে ভেতরে শামসুল হককে হটিয়ে ফার্ম ম্যানেজার হওয়ার জন্য জোড় লবিং শুরু করেন আব্দুল হাই।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র কওে উভয় উভয়ের বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যাচার করে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে ফার্মের মাষ্টাররোলে কর্মরত নারীর সঙ্গে ফার্ম ম্যানেজারের অনৈতিক সম্পর্কের কথা প্রচার হতে থাকে। এই প্রচারণাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা ফার্ম ম্যানেজারের পক্ষ নেন। সৃষ্ট হয় চরম বিশৃঙ্খলা ও রেষারিষি। এক পর্যায় ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ফার্মের ৯ শ্রমিক মিলে বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. আব্দুল হাইকে মারপিট শুরু করে। পরে তিনি স্থানীয় আলহাজ্ব ক্যাম্প এলাকার কিছু দূর্বৃর্ত্তদের মাধ্যমে তাঁর উপর হামলাকারী ওইসব শ্রমিকদের মারপিট করান।

সুত্র মতে, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র ফার্মের শ্রমিকরা বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. আব্দুল হাই এর শাস্তিসহ বদলী ও হামলাকারী বহিরাগতদের শাস্তির দাবীতে (মঙ্গলবার ২৭মে) দুপুরে ফার্মের ভেতরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বর্তমানে ফার্মের ভেতরে চরম বিশৃঙ্খলা পরিবেশ বিরাজ করছে।

এসব ব্যাপারে জানতে ফার্ম ম্যানেজার শামসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাস্টার রোলে চাকরি করা এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে আমার অবৈধ সম্পর্কের কথা বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে আব্দুল হাই ও রানা বিশ্বাস । বিষয়টি ডাল গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে এর সত্যতা পায়নি। গতকাল রাতে আমাকে সহ ডাল গবেষণা কেন্দ্রের শ্রমিকদের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে আমাদের উপরে হামলা চালায় আব্দুল হাই এবং রানা বিশ্বাস। মূলত আমারকে ম্যানেজার পোস্ট থেকে বাদ দিয়ে আব্দুল হাই ম্যানেজারের পোস্ট নেওয়ার জন্য এই মারপিটের ঘটনা ঘটিয়েছেন।

তবে নারী কেলেংকারীর বিষয়ে মাস্টাররোলে কর্মরত ওই নারী মোবাইল ফোনে বলেন, ওইসব বিষয় ঠিক হয়ে গেছে।

ডাল গবেষণা কেন্দ্র ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. আব্দুল হাই বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতিকে সমর্থন করি। এই কারণে শামসুল হক, ডাল গবেষণা স্কুল এন্ড কিন্ডারগার্টেনের সাবেক প্রধান শিক্ষক আওয়ামীলীগ নেতা কবির আলী হিরু মাস্টারসহ আওয়ামী সমর্থকরা আমার সঙ্গে চরম খারাপ আচরণ করতেন। সর্বদা অপমান করতেন। সম্প্রতি আমি ফার্ম ম্যানেজার হতে চেষ্টা করায় আওয়ামীলীগের দোসর শামসুল হক আমাকে শ্রমিকদের দিয়ে পিটিয়ে নাক মুখ ফাটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন।

ডাল গবেষণা কেন্দ্র ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ঈশ্বরদীর পরিচালক ড. মো. মাজহারুল আনোয়ার বলেন- বিষয়টি খুবই লজ্জা ও দুঃখের। নারী কেলেংকারীর খবরটি সঠিক নয়। বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. আব্দুল হাই সর্বকনিষ্ঠ অবস্থান থেকে ফার্ম ম্যানেজার হতে শামসুল হকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বহিরাগতদের ডেকে এনে ফার্মের শ্রমিকদের মারপিট করিয়েছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকতাকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের পর দোষীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক আইনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এই জন্য থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)আ স ম আব্দুন নূর জানান, ঈশ্বরদী ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মারামারির ঘটনার সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশের টহল টিম পাঠানো হয়েছিল। তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ ডায়াল করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।