‘হঠাৎ মাঝ রাইতে বিকট শব্দে নদীর বাঁধ ভাইঙা ঢলের পানি আমগর বাড়িঘরে উঠে।কিছু বুঝবার আগেই ঘর ভাইঙা আসবাব ও হাঁস-মুরগি ভাইসা যায়। তহন প্রায় ১০ দিন স্বামী সন্তান লইয়া মানুষের বাসায় আছিলাম। আবারও ভাঙনের সময় আইয়া পড়লো৷ কিন্তু বাঁধ তো আর ঠিক হইলো না৷ আসমানে মেঘ দেখলেই অহন চোখে আন্ধার দেহি। ‘ আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদ সংলগ্ন নিজপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম(৬০)।
এই আক্ষেপ ও দুশ্চিন্তা শুধু নাজমা বেগমের একার নয়, তাঁর মতো উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর ১ হাজার ৯০ মিটার বাঁধের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার পরিবারের। গত বছরের ৩ অক্টোবর রাতে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল নামে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে। এতে ১ হাজার ৯০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। ৪ হাজার ২১০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছয় মাস পরও অধিকাংশ স্থানে বাঁধের সংস্কার হয়নি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই সময় পানিতে ডুবে ক্ষয়ক্ষতি হয় ১৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আমনের ফসল। ভেসে যায় ২ হাজার ৮৭৫টি পুকুরের মাছ। এলাকাবাসী মনে করেন, যেকোনো সময় ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি হলে উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে ঢল নামবে। ভাঙা অংশ মেরামত না হওয়ায় আবার ঢলের পানি ভাঙন দিয়ে প্রবেশ করে এলাকাবাসী বিপদের মুখে পড়বেন। তাই তাঁরা দ্রুত ভাঙা অংশ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার বাঘবেড় গ্রামের চেল্লাখালী নদীসংলগ্ন বাসিন্দা সুরুজ মিয়া (৫৫) বলেন, ‘এই গাঙের বান ভাইঙ্গা আমগর বাড়িঘরে কমর পানি উঠছিল। তহন পানিতে সবকিছু ভাসাইয়া লইয়া গেছে। আমগর মতো গরিব মানুষের বিরাট ক্ষতি অইছে। অহন তো গাঙে পানি কম। অহনি বান্দের ব্যবস্থা করুন লাগব। নাইলে হিবার (আবার) ঢল আইলে, সবাই মহাবিপদে পরুন লাগব।’
নিজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, ‘ভাঙনের ছয় মাস পার অইয়া গেল, বান্দের মেরামত অইল না। এই ভাঙন দিয়ে ঢলের পানি ঢুইকা শহরের বিভিন্ন মহল্লায় ডুইবা যায়। তখন আমগর বিপদ দেহার কেও আছিল না। ঋণ কইরা কুনরহম ভাঙা বাড়িঘর ঠিক করছি। আবার গাঙে ঢল আইলে, আমগর কোনো উপায় থাকত না। ভাঙা বান্দের লাইগা এই এলাকার সবাই দুশ্চিন্তায় আছি।’
পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল হক বলেন, ভোগাই নদের নিজপাড়া এলাকায় বাঁধের ভাঙনে শহরের তিনটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মানুষের বাড়িতে পানি প্রবেশ করে। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েন। যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষার আগেই নিজপাড়া এলাকায় বাঁধের ভাঙন অংশ সংস্কারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
শেরপুর-জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, ভেঙে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভোগাই নদের নিজপাড়া ভাঙন মেরামতে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে চেলাখালী নদীর একাংশের কাজ শুরু হয়েছে। শহরের গড়কান্দা এলাকায়ও একাংশে কাজ চলমান। আশা করা হচ্ছে, দুটি নদের বাকি ভাঙা অংশ আগামী বর্ষার আগেই মেরামত করা যাবে।