কিশোরগঞ্জের হাওরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের হাতছানি। কৃষকদের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ১৩টি উপজেলায় বিরামহীনভাবে চলছে বোরো ধান কাটার কর্মযজ্ঞ। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে তাদের ধান কাটার লড়াই। দল বেঁধে ধান কাটছেন দাওয়ালো হিসেবে পরিচিত হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক। তবে ধানের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জেলায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর) অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে হাওর অঞ্চলে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে। এখান থেকে উৎপাদিত চালের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন।
বোরো মৌসুমে জিরাতির সমাগমও বেড়ে যায়। যারা কৃষকের জমি টাকার বিনিময়ে পত্তন নিয়ে চাষ করেন তাদেরকে বলা হয় জিরাতি। এই জিরাতিরা আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। তারা ফসল কাটার মৌসুমে জমির পাশে ছোট ছোট অস্থায়ী ঘর তুলে সেখানে রাত্রিযাপন করেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক কৃষিশ্রমিক। এই সকল জিরাতি ও কৃষিশ্রমিকেরাও এ মৌসুমে প্রচুর ধান পেয়ে থাকেন। এছাড়া এই মৌসুমী ধানের বিনিময়ে কৃষকের জমিতে ধানকাটার জন্য সুদূর ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, শেরপর, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা থেকেও দরিদ্র কৃষিশ্রমিকেরা হাওরের বিভিন্ন উপজেলায় এসে অস্থায়ী ডেরা তুলে বসবাস করেন। মৌসুমের শেষে ধানকাটার পারিশ্রমিক হিসেবে এরাও পেয়ে থাকেন প্রচুর পরিমাণ ধান।
প্রতি বছর বৈশাখ এলেই কৃষকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকা কাজ করে। ঘরে ফসল না তোলা অবধি তারা আশংকামুক্ত হতে পারেন না। এবারও কৃষকেরা সে আশংকার বাইরে ছিলেন না। তবে এ বছর প্রকৃতি কৃষকদের প্রতি বিরূপ ছিল না। আশংকা থাকলেও এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের কোথাও বড় ধরনের ঝড়-ঝপ্তা, অকাল বন্যা কিংবা শিলাবৃষ্টি হয়নি। ফলে বিশাল-বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো জমিতে এবার যেন প্রকৃতিমাতা দু'হাত উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন কৃষকের বহু কাঙ্ক্ষিত সোনালী ফসল। যেদিকেই চোখ যায় সোনারং ধানের উজ্জ্বল ঝিলিক দৃষ্টির সীমানায় ঝলমলে আলো ছড়িয়ে দেয়। সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষা পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো: ইমরুল কায়েস জানান, জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৭লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্টিকটন চাল। এবং হাওরে অঞ্চলে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে হাওরে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪লাখ ৯২ হাজার ৫৭০ মেট্রিকটন। এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে কিশোরগঞ্জ জেলায় ৬২% জমি হাওরে বোরো আবাদ হয়েছে। বর্তমানে পুরো জেলায় প্রায় ৩৫% ধান কর্তন করা হয়েছে। এবং হাওরে কর্তন করা হয়েছে প্রায় ৫০%। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে কৃষক তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবে।