কক্সবাজার শহরের বাকঁখালী নদীর উপর নির্মিত ২৫৯ টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-খুরুশকুল সংযোগ সেতুতে উদ্বোধনের পর দিন থেকেই জ্বলে না কোন বাতি। সন্ধ্যার পর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় ব্যয়বহুল ও আধুনিক এই সেতুটি।
স্থানীয় মানুষের দীর্ঘ প্রত্যাশিত সেতু হলেও সন্ধ্যা নেমে রাত হলেই ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় সেতু ও তার আশপাশ এলাকা। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই আতংক বিরাজ করে এই সেতু ও তার আশপাশ এলাকা দিয়ে চলাচল করা পথচারীদের মাঝেই।
দিনের বেলা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও রাতে সেতুতে সড়ক বাতি না থাকায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কখনও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, কখনও পথচারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হন। এই সুযোগে মাদকসেবীরা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ০১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় খুরুশকুলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কক্সবাজার-খুরুশকুল সেতুর নির্মাণ কাজ। যা পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরে। এরপর একই সালের ১১ই নভেম্বর সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিলো।
উদ্বোধনের দিন সড়ক বাতি জ্বললেও পরে সেতুর বাতি ও বৈদ্যুতিক তার নিরাপত্তার স্বার্থে খুলে নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার ফলে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই অন্ধকার আছন্ন এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী'রা।
সেতুটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডির তথ্য মতে জানা যায়, ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতুতে ৩টি ৬৫ মিটার গভীরের স্প্যান এবং ৫০ মিটারের ১০টি স্প্যান রয়েছে। এতো দীর্ঘ সেতু আগে কখনও দেশীয় নকশায় তৈরি হয়নি দাবি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের।
স্হানীয়'রা জানান , প্রতিদিন কক্সবাজার শহর থেকে বাড়িতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। পুরা সেতু ও সড়ক জুড়ে কোন লাইট নাই থাকায় পুরাটা অন্ধকার আছন্ন থাকে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। কারণ পুরাতন ব্রীজ দিয়ে যাওয়া আসা করতে ১ঘন্টার মতো সময় লাগে যেতো। এখন তা ১০ মিনিট। স্বল্প সময়ে যাতায়াতের কারণে সেতুটি বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে এত টাকা খরচ করে সেতু করলেও সড়ক জুড়ে বাতি থাকলেও জ্বলে না। এটাই দুঃখজনক।
খুরুশকুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: নুরুল আমিন জানান, সেতুতে উঠার পর থেকে ছিনতাইয়ের আতঙ্কে থাকতে হয় পথচারীদের। সন্ধ্যা হলেই পুরো সেতু ও সড়কটি অন্ধকার হয়ে যায় বাতি না জ্বলার কারণে। এলজিআরডি কর্তৃপক্ষের উচিত সড়ক বাতি দিয়ে সেতুর সৌন্দর্য ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এনিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌহিদুল বেলাল জানান , আমরা বিদ্যুৎতের লাইনের জন্য আবেদন করছি। বিদ্যুৎ এর লাইন পেলে বাকি কাজ গুলা করে দিবো। ওখানে চুরি রাহাজানি বন্ধে আমাদের সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে। অলরেডি বন্ধ হয়েছে আমাদের লোকগুলার কারণে।
সচেতন মহলের দাবি , কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এ সেতু সড়ক। সেতু–সড়কের পাশেই বাঁকখালী নদী আর কয়েকটি জলাভূমি। এই সেতু নির্মিত হওয়ায় অর্থনীতিতে এক দারুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেতুটি শুধুমাত্র দুই পাড়ের সংযোগ ঘটায়নি, নতুন করে সংযোগ স্থাপন করেছে খুরুশকুলের অর্থনীতিতে।
তবে ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি রাতে আলোকিত করা না হয়, তাহলে তা জনসাধারণের কোন উপকারেই আসবে না।