তারা এই অবসরের আদেশকে অবৈধ উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানান। ‘বিএমডিএ’র সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপকারভোগী কৃষক’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এক অফিস আদেশে জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন।
জাহাঙ্গীর আলম খান বিএমডিএ’র সেচ শাখার প্রধান ছিলেন। গত রোববার (২৩ মার্চ) তিনি বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) পদে বসেন। এর আগে ওই পদে ছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। তবে রেশম বোর্ডে না গিয়ে শফিকুল ইসলাম এক মাস ধরে বিএমডিএতেই ছিলেন। বদলির আদেশের পর তিনি আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে বিএমডিএ’র রাজশাহী জোনের প্রধান করে পদায়ন করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত রোববার তারা শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএ ছাড়তে বাধ্য করেন এবং ইডি হিসেবে দায়িত্ব নেন জাহাঙ্গীর আলম খান। এই ঘটনার দুই দিন পর বুধবার (২৬ মার্চ) তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘একমাস আগে শফিকুল ইসলামের বদলির আদেশ হয়। তারপরও তিনি যাচ্ছিলেন না। এখানে কী মধু আছে আমরা জানি। ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন, বিষয়টি নিয়ে ২৭ মার্চ কৃষি উপদেষ্টা সঙ্গে বিএমডিএ চেয়ারম্যানকে ডেকেছেন। আলোচনার টেবিলেই বিষয়টির সমাধান হতো। তা না করে রাতের অন্ধকারে “কোর্ট বসিয়ে” এমন বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ আমরা মানি না। আমরা অবিলম্বে এ আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
বিএমডিএ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের একমাস আগে শফিকুল ইসলাম বিএমডিএ’র ইডি হয়ে আসেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের সব স্থানে পরিবর্তন হলেও তিনি থেকে গিয়েছিলেন। বদলির একমাস পরও যাচ্ছিলেন না। এখানে থেকে তিনি আওয়ামী পুনর্বাসনের কাজ করছিলেন। তাকে বিএমডিএ থেকে চলে যেতে বাধ্য করায় জাহাঙ্গীর আলম খানকে অবৈধভাবে অবসর দেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ে এখনও যেসব আওয়ামী দোসর বসে আছেন, তারা রাতের অন্ধকারে জাহাঙ্গীর আলম খানকে অবসর দিয়েছেন। তারা অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের কৃষিখাতকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চান। তাদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট থেকে আসা কৃষক আবদুর রশিদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম খান স্যারকে আমি ২০০৮ সাল থেকে চিনি। তিনি সেচ শাখাকে ঢেলে সাজিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে কৃষিখাতে বিপ্লব এসেছে। তার বাধ্যতামূলক অবসর আমরা মানি না। অতি দ্রুত তার অবসরের আদেশ প্রত্যাহার না হলে ১৮ হাজার গভীর নলকূপে অচলাবস্থা তৈরি হবে। সেচ বন্ধ হলে আবাদ থেমে যাবে। এর দায় তখন কৃষি মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।’
মানববন্ধনে বিএমডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শতাধিক কৃষক অংশ নেন। তারা অবিলম্বে জাহাঙ্গীর আলম খানকে স্বপদে বহাল করার দাবি জানান।