বাকপ্রতিবন্ধী আনিসুর রহমান একজন সংবাদপত্র বিক্রেতা। কথা বলতে পারেন না অথচ তার পেশাই হলো কথা ও ভাষা। কথা বলতে না পারলেও মুখ ও হাতের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে পাঠকদের বুঝাতে সক্ষম হয় আজকের কোন পত্রিকার কি খবর প্রকাশিত হয়েছে।
তবে ডিজিটালের ছোয়ায় পত্রিকার চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশায় থেকে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বাকপ্রতিবন্ধী আনিসুর। ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় চার দশক ধরে বরিশাল নগরীর বিবির পুকুরের পাশে ছোট্ট একটি টং দোকানে সংবাদপত্র বিক্রি করে আসছেন আনিসুর রহমান।
আনিস কথা বলতে না পারলেও পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমে পাঠক ও সাধারন মানুষদের সাথে গড়ে তুলেছেন সু সম্পর্ক। পত্রিকা কিনতে আসা রহিম নামে এক পাঠক জানান, আমি ২৫ বছর ধরে বাকপ্রতিবন্ধী আনিসুর রহমানের দোকান থেকে পত্রিকা কিনি এবং তার সাথে আমার খুব সুসম্পর্ক। তিনি যখন নামাজ পড়তে যায় তখন আমাদের দোকানি বসিয়ে রেখে যায় তখন আমরা পত্রিকা বিক্রি করে তার কাজে তাকে সাহায্য করি।
মোহাম্মদ আসলাম নামে আরেকজন পাঠক জানান, আমি ১৫ বছর ধরে তার দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ টাকার পত্রিকা সংগ্রহ করি। তিনি বাকপ্রতিবন্ধী হলেও আকার ইঙ্গিতে বললে সঠিক পত্রিকাটি বের করে দিতে পারে। এবং পত্রিকার দাম ও রাখতে পারে ঠিকভাবে কোন সমস্যা হয়না।
২০০৭ সালের সিডোরের তান্ডবে বিবির পুকুর পারের তার ছোট্ট দোকানটি উড়ে গিয়ে পুকুরের মাঝে পড়ে এবং তখন তিনি আর্থিক কষ্টে ভুগতে থাকেন।
তৎকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত আনিছুর রহমানকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় দৈনিক নয়া দিগন্ত। নয়া দিগন্ত প্রতিষ্ঠানের কল্যান তহবিলের মাধ্যমে তাকে তৈরী করে দেয়া হয় একটি লোহার দোকান। এবং বর্তমানেও তিনি সেই দেকানটিতে প্রত্রিকা বিক্রি করছেন।
তবে দীর্ঘদিনের এই পুরনো লোহার দোকানটিও এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পুরনো হয়ে যাওয়ায় লোহার বিভিন্ন স্থানে মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে দোকানটি।
বৃষ্টির দিনে দোকানের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় পত্রিকা। যার ফলে বৃষ্টির দিনে পত্রিকা বিক্রি করতে ভোগান্তি পোহাতে হয় বাকপ্রতিবন্ধী আনিসুর রহমানকে। সংবাদপত্র বিক্রির মাধ্যমে মানুষের মাঝে সংবাদ পৌঁছে দিতে দোকানটি মেরামত কিংবা নতুন একটি দোকান করে দিতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাহায্য কামনা করেছেন এই বাক প্রতিবন্ধী সংবাদপত্র বিক্রেতা।