শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স এবং সহায়ক কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। ফলে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সেবা নিতে আসা একজন ভুক্তভোগী চা শ্রমিক সাধন দাশ বলেন আজ চারদিন যাবদ সেবা নিতে আসছে কিন্তুু কোন সুরাহা পাচ্ছি না।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে সরকার। চিকিৎসকসহ মোট ১৪৫ জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১০৮ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ৩৭টি পদ এখনো শূন্য। ফলে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে ৫০ শয্যা চালাতে গিয়ে উপজেলার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ডাক্তারদের নিয়ে আসা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। টেকনিশিয়ানের অভাবে পড়ে আছে অত্যাধুনিক ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাফী মেশিনগুলো। সার্জারীর ডাক্তার না থাকায় শুধু মাত্র প্রসুতি মায়েদের ছাড়া অন্য কোন অপারেশন করা যাচ্ছে না এখানে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০-৪০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন, অন্তঃবিভাগে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ জনের অধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন এবং জরুরি বিভাগে প্রায় ৭০ থেকে শতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছেন। বেশির ভাগ চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীসহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স এবং সহায়ক জনবলের অভাবের কারণে রোগীরা কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিসের তথ্য মতে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এগারোটি কনসালটেন্ট পদে ছয়টি এখনও শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলোজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক-কান), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিষয়হীন) পদে শূন্য রয়েছে ৫টি, মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য রয়েছে ১টি, সহকারী সার্জন পদে শূন্য রয়েছে ৪টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে শূন্য রয়েছে ৭টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, পরিসংখ্যানবিদ পদে শূন্য রয়েছে ১টি, হেলথ এডুকেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কম্পিউটার অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কার্ডিওগ্রাফার পদে শূন্য রয়েছে ১টি, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী পদে শূন্য রয়েছে ৪টি, অফিস সহায়ক পদে শূন্য রয়েছে ২টি, ওয়ার্ড বয় পদে শূন্য রয়েছে ২টি, আয়া পদে শূন্য রয়েছে ১টি, বাবুর্চি পদে শূন্য রয়েছে ১টি এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য রয়েছে তিনটি। চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৪জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে ইমার্জেন্সি ডিউটি করানো হয়। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে তৃণমূল স্বাস্থ্য সেবা।
বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রেগীদের অভিযোগ, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা ও সবধরণের সরকারি ওষুধ পাওয়া যায় না। রোগীকে ভালো করে দেখার আগেই সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে দেওয়া হয়।
এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন জানান, জনবল সংকটের মধ্যেও আমরা রোগীদের কাংখিত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল চেয়ে সিভিল সার্জন অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। জনবল নিয়োগ হলে রোগীদের আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে।
মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মামুনুর রহমান জানান, জনবল সংকটের বিষয়টি আমার জানা আছে। এবিষয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে শূন্য পদের চাহিদা জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি মন্ত্রণালয় দ্রতই শূন্য পদ পূরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আমরা আশাবাদি শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল শূন্য পদই আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে পূরণ করা হবে।