রাজশাহীর তানোরের প্রচন্ড খরাপ্রবণ এলাকার ফসলের মাঠগুলো এখন সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে। বিএমডিএর গভীর নলকুপ সেচ প্রকল্পের কল্যানে এক ফসলি জমিতে এখন তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এসব জমিতে চাষাবাদ করতে একটা সময় মান্ধাতা আমলের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো কৃষকদের।
বছরে প্রকৃতির বৃষ্টি নির্ভর একটি ফসল উৎপাদন করা যেতো। তার পরেও বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি,খরা ও ঝড়-ঝাপটা ছিলো নিত্যসঙ্গী। অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে মাঠের ফসল মাঠে পড়ে থাকতো। তবে বিএমডিএ'র গভীর নলকুপ সেচ প্রকল্প কৃষিতে নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে।বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) প্রচন্ড খরাপ্রবণ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছেন। বিএমডিএ’র গভীর নলকুপ সেচ প্রকল্পের কল্যাণে প্রচন্ড খরাপ্রবণ অঞ্চলের এক সময়ের পতিত জমি গুলোতেও এখন সারা বছরই তিন থেকে চারটি করে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে।
জানা গেছে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এ অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিএমডিএ’র গভীর নলকুপ সেচ প্রকল্পের কল্যাণে এসব প্রচন্ড খরাপ্রবণ অঞ্চলের এক সময়ের পতিত জমি গুলোতেও এখন সারা বছরই তিন থেকে চারটি করে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে।
তানোরে এক সময় চৈত্র-বৈশাখ মাসে দুপুরের প্রচন্ড রোদে মাঠের দিকে তাকালে মরুভূমির মতো মনে হতো। কিন্ত্ত এখন এসব মাঠের দিকে দৃষ্টি রাখলে দেখা যায় অপরুপ শোভা ছড়াচ্ছে সবুজ ধান গাছের পাতা। চারিদিকে সবুজ ফসলের খেত দুরে দেখা যায় এক একটি সবুজ গ্রাম।
সবুজের খেতে আকাশটি হেলে পড়ায় দিগন্তে মিশে গেছে। এ এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকুপ স্থাপন করায় এখন সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোরে বিএমডিএ’র বিদ্যুৎ চালিত ৫৩৬টি গভীর নলকুপ রয়েছে। এসব নলকুপের সেচ দিয়ে প্রায় ১৩ হাজার ৫১০ হেক্টর আমণ, প্রায় ১৮ হাজার ৪৫৫ হেক্টর রবি ও প্রায় ১১ হাজার ৩২০ হেক্টর বোরো জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। এসব নলকুপ থেকে জমিতে সেচ পানি সরবরাহের জন্য ইটের নালা ৫৮টি, ফেরোসিমেন্ট নালা ৭টি ও ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন ৪৫০টি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৮২টি পানির ট্র্যাঙ্কির মাধমে এসব এলাকায় বসবাসরত প্রায় এক হাজার ৪৫০ পরিবারের মধ্যে সারা বছর বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। এসব পুকুরের আওতায় প্রায় ৬২৭ হেক্টর জমিতে সম্পূরুক সেচ দেয়া হচ্ছে।
এতে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ২ হাজার ৮৬৫ জন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ দশমিক ৪৭৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। এসব খালের আওতায় ৫ হাজার ২২৭ হেক্টর জমিতে সম্পূরুক সেচ দেয়া হচ্ছে এবং উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা
৭ হাজার ১৬০ জন। এ পর্যন্ত ২৬টি ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে এর মধ্যে খননকৃত খালে ১৬টি ও অন্যান্য খালে ১০টি। এ পর্যন্ত ৪৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার (ফিড রোড) পাকা সড়ক নির্মাণ ও ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক মেরামত করা হয়েছে। এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে ৬৫ মিটার ব্রীজ নির্মাণ ও ৩২টি কালভ্রাট নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া দুটি নার্সারির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদন ও রোপণ করা হয়েছে। উৎপাদিত চারার সংখ্যা ৩০ হাজার।এ পর্যন্ত রোপিত চারার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ এছাড়াও ফলজ প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার এবং তালবীজ প্রায় ৯৬ হাজার। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৮০০ জন আদর্শ কৃষককে প্রশিক্ষণ, ১৫০ জন গভীর নলকুপ অপারেটরকে প্রশিক্ষণ ও খাবার পানি সরবরাহকারী ১৬টি সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান বলেন, তারা শুধু গভীর নলকুপ নয় এসবের পাশাপাশি মজা খাল ও পুকুর খনন-পুনঃখনন,
ক্রসড্যাম নির্মান, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বনায়ন ও গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।