ছবিঃ সংগৃহীত।
মৌলভীবাজারে বাবার হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে মাহিদ নামে ৭ বছর বয়সী এক শিশু। ঘটনার পর ঘাতক বাবা খোাকন মিয়া ও দাদি হাওয়া বেগম নিজ বাড়িতে লাশ নিয়ে আসার কথা বলে হাসপাতাল থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। পরে তাকে সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।
রবিবার
(১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের
জগন্নাথপুর গ্রামে ঘটে লোহমর্ষক ওই ঘটনা। এ
ঘটনায় এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। শিশু খুনের ঘটনায় পুরো গ্রামের মানুষ শোকাহত।
মৌলভীবাজার
মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ প্রতিবেদককে জানান,
ওই ঘটনায় সদর উপজেলার খোকন মিয়াকে অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা নিয়ে আসা হয়েছে।
স্থানীয়
সূত্রে জানা যায়, খোকন মিয়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যাবসা করে আসছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। রবিবার বিকালে খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া শিশু মাহিদ বিছানায় মল ত্যাগ করায়
ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাহিরে এনে ব্যাপকভাকে পিটাতে থাকে ঘাতক পিতা খোকন। এক পর্যায়ে শিশু
মাহিদ সেখান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি যবেদা খাতুন এর ঘরে আশ্রয়
নিলে সেখান থেকে ফের ধরে এনে উপর থেকে মাটিতে ছুড়ে মাড়েন। এর পর শিশু
মাহিদের দুই পা ধরে কংক্রিটের
পিলারে সাথে আছাড় দিতে থাকলে শিশু মাহিদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। নিস্তেজ হয়ে পড়ে তাঁর পুরো দেহ।
এ
সময় প্রতিবেশি যবেদা বেগম শিশুটিকে রক্ষা করতেও ব্যর্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন
হওয়ায় খোকন মিয়া নিজেই শিশু মাহিদকে নিয়ে হাজির হন মৌলভীবাজার ২৫০
শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। পরে সেখানকার দ্বায়িত্বরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। এ সময় শিশুটির
মৃত্যুও কারণ নিয়েও চতুরতার আশ্রয় নেয় ঘাতক পিতা খোকন মিয়া। উল্লেখ করে গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে। এর পর সেখান
থেকে লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যায়।
খবর
পেয়ে ঘটনাস্থলে সদর মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হলেও সেখানে লাশ ও খোকন মিয়াকে
পাওয়া যায়নি। এর পর খোকন
ও তাঁর মায়ের খোঁজে আশপাশে অভিযান চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর
পুলিশের অনুপস্তিতিতে লাশ নিয়ে খোকন নিজ ঘরে হাজির হয়ে সেখানে লাশ রেখেই সটকে পড়ে। তবে তার প্রথম স্ত্রী ও নিহত শিশু
মাহিদ এর আরেক ভাইকে
ঘরেই পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আশপাশে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ সেখানে খোকন ও তার মা
হাওয়া বেগমের কোন খোঁজ না পেয়ে রাত
সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
প্রতিবেশি যবেদা বেগম জানান, বাচ্চাটাকে দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারের সাথে মাথায় মারতে থাকে। তখন তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মারধর করার সময় তাঁকে উদ্ধারে আমি এগিয়ে গেলে আমাকে অন্তত দশহাত দূরে টেনে নিয়ে যায়। তবে এসময় অন্য কেউ সেখানে ছিলনা বলে জানান ওই নারী।
জানা
যায়, ১৫ বছর আগে
প্রথম স্ত্রী রেখে তানিয়া আক্তার নামে এক নারীকে বিবাহ
করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলেন খোকন। ওই স্ত্রীর সাথে
মনমালন্য হওয়ায় কয়েক বছর আগে স্বামী খোকন মিয়াকে ছেড়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও মাহিদ ও রাফিদ নামে
৬ ও ৭ বছর
বয়সী দুই শিশুকে রেখে দেন খোকনের কাছে। এর পর মা'র আদর-স্নেহ
ছাড়া বাবা খোকন মিয়ার কাছেই থাকত ওই দুই শিশু।
ঘরে খোকনের প্রথম স্ত্রী ও তাদের ৩
ছেলে এবং ১ মেয়ে সন্তান
থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী‘র দুই সন্তান
নিহত মাহিদ ও ফাহিদকে অমানবিক
নির্যাতন করত খোকন। নির্যাতনের দৃশ্য দেখেও প্রথম স্ত্রী কখনো এগিয়ে আসতেনা বলে জানান প্রতিবেশিরা। পরিবারের সবাই যখন রাতে ঘুমিয়ে পড়ত তখন মাহিদ ও ফাহিদকে রাতে
ঘরের বাহিরের বারান্দায় হাঁস-মুরগির সাথে ফ্লোরে চটের বস্তা ও খাতা দিয়ে
ঘুম পাড়াতেন বাবা। এমন কী তাদেরকে নিয়মিত
খাবারও দেয়া হতোনা।
স্থানীয়রা
বলছেন অনেক দিন যাবত তুচ্ছ কারণে তাদের দুই ভাইয়ের প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালাতেন মাদকাসক্ত বাবা খোকন মিয়া। নির্যাতনের নির্মম দৃশ্য প্রতিবেশির চোখে ধরা পড়লেও ভয়ে তাদের কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেনি।
এদিকে
খুন হওয়া মাহিদ এর মরদেহ রবিবার
রাতেই পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে লাশ হস্তান্তরের কথা রয়েছে বলে জানান ঘটনার তদন্তের দ্বায়িত্বে থাকা মৌলভীবাজার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জয়ন্ত সরকার। তিনি জানান এ ঘটনায় আইনগত
ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh