রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের আইরমারী এলাকার বারোঘরিয়া গ্রামের বিধবা জাহেদা বেগম(৭০)। স্বামী সাইদুল ইসলাম স্বাধীনতার পরপরই মারা গেছেন। এক মেয়ে ও দু’ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার জীবন। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবী সংসারের চাহিদা মেটাতে তিনি কখনো করেছেন কৃষি শ্রমিকের কাজ। কখনোবা করেছেন ঝিয়ের কাজ।
অভাব-অনটনের সংসারে খেয়ে না খেয়ে সন্তানরা তবুও বেড়ে উঠছিল। কিন্তু মাত্র ৯ বছর বয়সে বড়ছেলে সাহাবুল ইসলাম বাড়ি থেকে রাস্তায় বের হলে একটি আখ বোঝাই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়। মেয়ে বুলবুলি বড় হলে প্রতিবেশী এক রিকশা চালকের সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। এরপর তিনি স্বপ্ন দেখেন ছোটছেলে সাইফুল ইসলামকে নিয়ে। সাইফুল ইসলামও জীবিকার তাগিদে বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা।
তিনিও একসময় বিয়েশাদী করে সংসার পাতেন। কিন্তু চার বছর আগে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষার পর নিশ্চিত হন তার দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়েছে। অথার্ভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। তার মুখে দু’মুঠো অন্ন যোগাতে তার স্ত্রী করছেন কৃষি শ্রমিকের কাজ।
আর বৃদ্ধা মা বিভিন্ন আলুক্ষেতের মাটি সরিয়ে আলুর সন্ধান করছেন। সারাদিন মাটি খুঁড়ে যে আলু পান তা’ বাজারে বিক্রি করে নিজের অন্ন যোগান দেন। আর বয়স্ক ভাতার টাকা ব্যয় করেন ছেলের সামান্য ওষুধে। রোববার(১৯ জানুয়ারি) সকালে গোপালুপুর ইউনিয়নের জমিদারবাড়ি এলাকার একটি আলুক্ষেতে তার সাথে কথা হয়।
তিনি আরো বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছি। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি, ছেলেরও বিয়ে দিয়েছে। ছেলে জায়গায় গিয়ে রিক্সা চালাতে। কষ্ট হওয়ার পর থেকে তার বউ মানুষের বাড়িতে ও কৃষি জমিতে কাজ করছে। আমরা বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। জমিটিতে আলু তোলা হয়েছে। এখন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে আলু খুঁজছি। কেজি খানিক আলু পেয়েছি। আজকে এতেই হয়ে যাবে। কাল কি হবে জানিনা।