কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শীতকালীন শাকসবজিতে সয়লাব কাঁচাবাজার। অনেকটাই সস্তায় বিক্রি হচ্ছে কৃষকের উৎপাদিত শাকসবজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে কমেছে সব ধরনের শাকসবজির দাম। আর হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটে বাজারে ফসলের আকস্মিক দরপতনে হতাশার ছাপ কৃষকের চোখে মুখে।
শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরের ব্রাকমোড়ের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, শীতকালীন শাকসবজিতে সয়লাব কাঁচাবাজার। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা শাকসবজি নিয়ে বাজারে এসেছেন। বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু ২৪ টাকা, শিম ১০ থেকে ১২ টাকা, বেগুন ১২ থেকে ১৫ টাকা, ফুলকপি ৫ থেকে ৬ টাকা, বাঁধাকপি ৪ থেকে ৫ টাকা, টমেটো ২০ থেকে ২২ টাকা, মুলা ৪ থেকে ৬ টাকা, ধনেপাতা ১৪ থেকে ১৬ টাকা এবং প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারটির মামা ভাগ্নে কাঁচামাল আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. সুজন মিয়া বলেন বর্তমানে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত তরি তরকারিতে বাজার ভরপুর। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি। আর এখানকার কোন শাকসবজি বাইরে কোথাও যাচ্ছে না। তাই দামও কম। গত বছর এখান থেকে শাকসবজি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু এবারে চিত্র ভিন্ন। বাইরে থেকে কোন ব্যবসায়ী শাকসবজির কিনতে আগ্রহ দেখায়নি। চাহিদা বাড়লে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে সম্ভাবনাও দেখছিনা।
খেতে শীতকালীন শাকসবজির ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম কমায় হতাশা কৃষকের চোখেমুখে। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বকসি। তিনি এবারে ২০ শতাংশ জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছেন। তিনি জানান, ২০ শতাংশ জমিতে ফুলকপি আবাদ করতে প্রায় ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমিতে ৩ হাজার ফুলকপি রয়েছে। বাজারে ফুলকপি যে দাম তাতে লোকসানের শঙ্কা দেখছেন তিনি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের পানিমাছকুটি গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম হতাশার সুরে বলেন, বাজারে সার, বীজ, কীটনাশক সব কিছুতেই দাম বেড়েছে। ফলে চাষাবাদে খরচও বেড়েছে অনেক। কিন্তু বাজারে আমাদের উৎপাদিত ফসলের দাম কমেছে। উৎপাদন খরচ বেশি কিন্তু উৎপাদিত ফসলের দাম নাই। তাহলে আবাদ করে লাভ হবে কিভাবে?
একই এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন এবারে ৫ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। আলুর ফলন ভালো হলেও মন খারাপ এই কৃষকের। তিনি জানান, দিন যতই যাচ্ছে বাজারে আলুর দাম ততই কমছে। চাষাবাদের খরচ বিবেচনায় বাজারে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রত্যাশা করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় এবারে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আলু এবং ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন শাকসবজির চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উপজেলায় এবারে শীতকালীন শাকসবজির ভালো ফলন হয়েছে ।