ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় এক কামারের দোকানে ৪৫ বছর ধরে উড়ছে জাতীয় পতাকা। ঘরে বেড়া না থাকায় প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার দূরে পতাকা তিনি কাঁদে করে বাড়ীতে নিয়ে যান। বাড়ী থেকে দোকানে আসার সময় পতাকা বহনকারী লম্বাকাঠ কাঁদে করে নিয়ে এসে দোকানের উপর টানিয়ে কাজ শুরু করেন। ৪৫ বছর ধরে কাঁদে পতাকা বহনকারী ঐ কামারেরা নাম আশরাফ আলী। বয়স ৬০ বছর।
উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের ছোট একটি পাহাড়ী বাজারের নাম বালুঘাট বাজার। বালুঘাট বাজারটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল সন্তোষপুর বনাঞ্চলে। জাতীয় দিবস ছাড়া বাজারের কোন ঘরেই জাতীয় পতাকা টানানো হয় না। বাজারের টিনের চালা বেড়া বিহীন কামারেরা দোকানে ৪৫ বছর ধরে জাতীয় পতাকা উড়ছে পতপত করে। হাতুরী আফাল লোহা নিয়ে ব্যস্ত থাকা কামার আশরাফ আলী নিজ মনে কাজ করে যাচ্ছেন।
কামার আশরাফ আলীর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন ফকির। থাকেন পৈতৃক বাড়ী পুটিজানা ইউনিয়নের বৈলাজান গ্রামে। আশরাফ আলী জীবন ও জীবিকার তাগিদে বসবাস করেন সন্তোষপুর গ্রামে।
বাজারের অন্যান্য বয়বসায়ীরা জানান, আমরা যেটা করতে পারি না কামার সেটা করেন। বাজারের কামারের দোকানে লাল সবুজের পতাকা দেখে অনেকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। তিনি এ কাজটি করছেন একাধারে ৪৫ বছর ধরে।
কামার আশরাফ আলী জানান, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন ফকিরের মুখে স্বাধীনতা সংগ্রামের লোমহীহর্ষক বর্ননা শুনার পর থেকে পতাকার প্রতি তার আলাদা একটি ভালবাসা জন্মে। একটা স্বাধীন দেশের পতাকা একটা মানচিত্রের জন্য মা বোনদের ইজ্জত গেছে এত মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে। আমি বুঝ মান হওয়ার পর থেকে পতাকা কাঁদে বহন করে বাড়ীতে আসা যাওয়ার সময় নিজেকে গর্ববোধ করি।
বালুঘাট বাজারে ৩৫ বছর ধরে দোকানদারী করি। বাড়ীতে যখন আমার দোকান ছিল তখনও পতাকা টানিয়ে দোকানদারী করেছি। পতাকা আমাকে শক্তি জোগায় সাহস জোগায়। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন আমার দোকানে উড়বে লাল সবুজের পতাকা।