কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জে গত তিন দিন ধরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবার সকাল থেকে মেলেনি সূর্যের। দিনেও গাড়ির হেডলাইট জালিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এই ঘন কুয়াশার শীতে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে দিন দিন আক্রান্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ শিশুরা ঠান্ডা, সর্দি, পাতলা পায়খানাসহ নানাবিধ রোগ বালাইতে আক্রান্ত হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বৃহস্পতিবার ১৪.৭ ডিগ্রি ও শুক্রবার ১৪.০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। নিকলীর আবহাওয়া অফিসের অবজারভার আলতাফ হোসেন শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শীতের একটু উষ্ণতা পেতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ছুটছে রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকানে। যাদের নতুন পোষাক কেনার সমর্থ নেই। তারা ফুটপাত থেকে ২০টাকা থেকে ১০০ টাকায় শীতের পোষাক কিনছেন। অনেকে বাড়ির আঙিনা কিংবা রাস্তার পাশে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন।
জেলার ১৩টি উপজেলায় বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া। তবে সবচেয়ে বিপাকে আছে হাওরের মানুষগুলো। ইটনা, মিঠামইন, নিকলী, অস্টগ্রাম এই চারটি হাওর বেষ্টিত উপজেলায় কনকনে ঠান্ডা শীত উপেক্ষা করে ঘন কুয়াশার মাঝে তাদের বোরো ধান আবাদের জন্য চাষাবাদ করতে হয়। এই ঘন কুয়াশার আক্রমনে বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মামুন নামের এক অটোচালক বলেন, ‘টানা তিনদিন ধরে শীতের দাপটে গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। মানুষ ঘর থেকে বের হয়না। শীতের কারণে মানুষ যাতায়াত করে না। আগে ৮শ থেকে ১হাজার টাকা আয় হতো আর এখন ৫শ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়।’
কিশোরগঞ্জ শহরের আখড়া বাজার মো: আল-আমিন ও আ: কাদিরসহ অনেকে বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। প্রতিদিন সকালে আমরা এখানে আসি। আমরা রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আমাদেরকে রাজমিস্ত্রির কাজে অনেকেই নিয়ে যায়। তবে শীত বেশি পড়ার কারণে আমরা কাজ করতে পারি না।’
নিকলী উপজেলার হাওরের কৃষক মো: ফজলে আলী বলেন, ‘এখন আমাদের বোরো ধান আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু শীত অনেক বেশি। আমরা কাজে যেতে পারছি না। আর ঘনকুয়ার কারণে আমাদের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। এভাবে শীতের দাপট বাড়তে থাকলে সঠিক সময় জমিতে বীজ রোপন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শীতের প্রভাব খুব বেশি। এতে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। এই শীতে যারা গরীব অসহায় এবং রাস্তা, ফুটপাত ও রেলস্টেশনের আশপাশে যারা রাত্রী যাপন করছে তাদেরকে আমরা কম্বল বিতরণ করেছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো শীত জুড়ে আমাদের এ সেবা অব্যাহত থাকবে।