বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা খুন-গুম করেছেন, যারা লুণ্ঠন করেছেন, চুরি করেছেন; দেশের ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তাদের বিচার হতে হবে। আর ঐ টাকাগুলো দেশে ফেরত আনতে হবে। এগুলো জনগণের টাকা, ফেরত এনে জনগণের কাজে লাগাতে হবে।
আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল বড়মাঠে আয়োজিত জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঠাকুরগাঁওয়ে প্রকাশ্যে এমন একটি কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো, এতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, এখন আওয়ামী লীগ আবার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, আবার তারা ফিরে আসবেন- দেশ দখল করবেন। আবার আগের মত তারা তান্ডব চালাবেন, বলে- যে কয়েকদিন বাঁচার বেঁচে নাও, আবার আসতেছি, আবার দেখা হবে! আত্মস্বীকৃতি খুনী, খুনের হুঙ্কার দিয়েই চলেছে। আমরা তাদেরকে বিনয়ের সাথে বলতে চাই এই অধ্যায় ক্লোজ।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসকরা পালিয়ে গেলে আর ফিরে আসেনা। বিশে^র অনেক স্বৈরশাসক পালিয়ে গেছে, আর কেউ ফিরে আসতে পারেনি। আপনারা মানুষের শান্তনার জন্য যার বলতে চান বলুন, বাংলাদেশের মানুষকে বোকা ভাববেন না। অনেক যন্ত্রনা আমাদের ওপর করা হয়েছে, চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, জুলুম করা হয়েছে। দেশের স্বার্থে আমরা সবগুলো বুকে চেপে দেশটাকে সামনের দিকে সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
শফিকুর রহমান বলেন, যে দলটি (আওয়ামী লীগ) জাতিকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ-বিভক্ত করে রেখেছিল সংখ্যালঘু বলে, তারা ফায়দা লুটেছে। আর তারাই এই সংখ্যালঘুদের সর্বনাশ করেছে। জায়গা-জমি দখল করা, ইজ্জতের ওপর হাত দেওয়া, সম্পদ লুণ্ঠন করা এবং কাউকে কাউকে ঘর-বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, হায়নার মত এই কাজগুলো আওয়ামী লীগই করেছে। তারা নিজেরা এসব করে দোষ ফেলেছে ইসলামপন্থীদের ওপর।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আওয়াজ, গুঞ্জন, অনেক বিভক্তির কথা, অনেক বিষ ছড়ানো কথা শুনেছি। আমি প্রশ্ন করতে চাই যারা এই চেতনার কথা বলে, সর্বশেষ ঘটনা এবারকার মহান বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এটাকে ভারতের বিজয় দিবস দাবি করে টুইপ করেছেন; তিনি তার দেশের সৈনিকদের ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একটা শব্দ নিয়ে বাংলাদেশ নামটা নিয়ে উচ্চারণ করেননি। আপনাদের চেতনা কোথায় ছিল? এই বিজয় বাংলাদেশের না ভারতের? বাংলাদেশের যদি বিজয় হয়ে থাকে তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই বিজয় তাদের বলে দাবি করে আপনারা চুপ কেন? আপনাদের চেতনা কোথায় যায় তখন?
শফিকুর রহমান বলেন, সীমান্তে যখন ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকে তখন আপনাদের চেতনা কোথায় থাকে? দিনের পর দিন যখন নিরীহ মানুষকে বর্ডারে হত্যা করা হয় তখন আপনাদের মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হয়না। বরং আপনাদের একসময়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছিলÑ সীমান্তে যারা বাংলাদেশি মারা যায় তারা দুস্কৃতিকারী। লজ্জা, জাতীয় লজ্জা, আপনারা এই দেশের মন্ত্রী হয়ে ভিন্ন দেশের গান করেন। কারণ আপনার মাথা ভিন্ন জায়গায় বন্ধ করে রেখেছেন।
ভারতকে উদ্দেশ্যে করে বলেন- আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশিরা শান্তিতে থাকুক, আর আমরাই চাই তারা যেন আমাদের অশান্তির কারণ না হোক। কিন্তু মাঝে মধ্যে তারা বাউন্ডারি ক্রস করে, বাংলাদেশের মসনদে কে বসবে, কে কার সাথে জোট বাঁধবে, কে সরকার গঠন করবে তারা বাংলাদেশে এসে তরকারিতে লবণ দেয়। আমরা আগামীতে আমাদের তরকারিকে কাউকে লবণ দিতে দেখতে চাই না। আমাদের তরকারি আমরা বানাবো। বাংলাদেশের মানুষ কি করবে, এখানে কে ক্ষমতায় আসবে , কে ক্ষমতায় আসবে না এটা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে।
জামায়াতে ইসলাম একটা বৈষম্যহীন দেশ চাই মন্তব্য কনে শরিফকুর রহমান বলেন, আমরা চাইনা এই দেশ বিভক্ত হোক, আমরা চাই দেশের সকল মানুষের হাত একত্রিত হোক, সবাই এক হয়ে হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে সামনে আগাই। আমরা একটা বৈষম্যহীন দেশ চাই, চাঁদাবাজ মুক্ত দেশ চাই, অবৈধ দখলদার মুক্ত-দুর্নীতি মুক্ত, ঘুষ মুক্ত দেশ চাই এবং একটা সাম্যের বাংলাদেশ আমরা চাই; একটা মানবিক বাংলাদেশ চাই। সেই মানবিক বাংলাদেশের জন্য আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধানের সভাপতিত্বে এসময় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঠাকুরগাঁও জেলার সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, জেলা আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলমগীর ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কফিন উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।