দেশের বিভিন্ন বিভাগের পর এবার রংপুরে শুরু হয়েছে প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম। সীমিত পরিসরে স্থাপনেই গ্রাহকদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে প্রিপেইড মিটার অপসারনের দাবীতে ইতিমধ্যে স্মারকলিপি প্রদান করেছে গ্রাহকদের একটি সংগঠন। মানববন্ধনসহ রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছে আরো কয়েকটি সংগঠন।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেড সুত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় রংপুর নগরীর বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ ৩ এর আওতায় ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে প্রিপেইড মিটার সংযোগ। এরই মধ্যে ৩০০ গ্রাহকের বাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। শুধু বিতরণ-৩ বিভাগের আওতায় ৩২ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। রংপুরের অন্যান্য বিতরণ বিভাগেও স্থাপন শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রাহকদের বাসা বাড়িতে বসানো হচ্ছে প্রিপেইড ইলেকট্রিক মিটার। এই মিটার সম্পর্কে গ্রাহকদের আগে থেকে কিছু জানায়নি নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেড নেসকো। কোন রকম প্রচার কিংবা ভালো মন্দ কোন আলোচনা ছাড়াই সংযোগ দেয়া হচ্ছে। প্রিপেইড মিটারে প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকলেও এ নিয়ে গ্রাহকরা কেউ কেউ বলছেন এই প্রিপেইড মিটার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী আবার অনেকেই এই মিটার নিয়ে সন্দেহ করছেন, গ্রাহকদের অনেকের ধারণা লোড শেষ হলেই বিদ্যুৎ চলে যাবে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যখন-তখন টাকা তুলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রাখা বেশ কঠিন বলে মনে করেন অনেকে। এরকম অজানা অনেক তথ্যে এই প্রিপেইড মিটার নিয়ে নানা ভীতি ও সন্দেহ রয়েছে গ্রাহকদের মাঝে।
এদিকে প্রিপেইড মিটার সংযোগ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটি, রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটিসহ আরো কয়েকটি সংগঠন। অবিলম্বে প্রিপেইড মিটার অপসারণ এর দাবি জানিয়েছে তারা। ইতিমধ্যে ৪ দফা দাবী উপস্থাপন করে প্রিপেড মিটারের বিরোধিতা করে বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটি রংপুর স্মারকলিপি প্রদান করেছে এবং বৃহস্পতিবার নেসকোর সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে তারা। এছাড়াও আগামী ২৮ ডিসেম্বর রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটি নেসকো বিদ্যুৎ অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে।
বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটি রংপুরের নেতা সাংবাদিক কামরুল হাসান টিটু বলেন, প্রিপেইড মিটারে টাকা শেষ হয়ে গেলে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ভোগান্তিতে পরবে গ্রাহক। তাছাড়া প্রিপেইড মিটার সংযোগ নিয়ে নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেড গ্রাহকদের মতামত না নিয়ে কিংবা গণশুনানী না করে একপ্রকার চাপিয়ে দিচ্ছে তারা। যা রংপুরের সর্বস্তরের জনগণ এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা ৪ দফা দাবী উপস্থাপন করে গত ১৭ ডিসেম্বর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি। এসময় তিনি জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে গণশুনানী করার কথা জানালেও দু:খের বিষয় তিনি তার আগেই মিটার স্থাপন শুরু করে দিয়েছে। যা দু:খজনক। আমরা গ্রাহকরা পুরো বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে আছি।
রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য এডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে গ্রাহকরা কিছুই জানে না। গণশুনানী ও গ্রাহকদের মতামত ছাড়াই এই মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আমরা এ নিয়ে আগামী ২৮ ডিসেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেছি।
গ্রাহক আলী হায়দার রনি বলেন, কোনরকম প্রচারণা ছাড়াই প্রিপেইড মিটার স্থাপন করছে। শুধুমাত্র চলতি বিলের কাগজে লেখা আছে, “আপনার মিটারটি কিছুদিনের মধ্যে প্রিপেইড হতে যাচ্ছে” । এছাড়া কোন প্রচারণা চোখে পরেনি। এ নিয়ে ভালো মন্দ কিছুই জানি না। আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। কেমন বিল আসবে, টাকা শেষ হলে বিদ্যুৎ চলে যাবে কিনা। এবিষয়ে কিছুই জানি না।
বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩, নেসকো পিএলসি, রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম হোসেন জানান, গত ২২ ডিসেম্বর বাসা বাড়িতে প্রিপেইড স্থাপন শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০০ এর অধিক বাসায় স্থাপন করা হয়েছে। এই মিটার সম্পর্কে গ্রাহকরা এখনও ভালোভাবে না জানার কারনে কিছু নেতিবাচক আলোচনা করছেন। তবে মিটার সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে আর এই সমস্যা হবে না। তাছাড়া মিটার স্থাপনের বিষয়টি সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্ত। দেশের অন্যান্য বিভাগের অনেক জেলায় স্থাপন করা হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী রংপুর বরং পিছিয়ে আছে।
নেসকো রংপুর সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসনাত জানান, গণশুনানী অচিরেই করা হবে। তাছাড়া জেলার সম্বনয় সভাসহ বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারে ভালো দিক রয়েছে। অনেকে হয়তো ভালোভাবে বিষয়টি জানে না, যার কারনে গ্রাহক পর্যায়ে নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। যখন বিষয়টি পরিস্কার হবে, তখন আর নেতিবাচক আলোচনা থাকবে না। এসময় তিনি সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।